টেস্ট ক্রিকেটে সেশনের পর সেশন ডিফেন্স করা যায়
ছবি : সংগৃহীত
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ খুবই বাজে সময় পার করছে। টেস্ট ক্রিকেটে আগে থেকেই। সম্প্রতি সেখানে যোগ হয়েছে টি-টোয়েন্টিও। অবশ্য আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বিচরন ক্ষেত্র ওয়ানডে ক্রিকেট সম্প্রতি খেলেনি।
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ব্যর্থতার সর্বশেষ ‘বলি’ হয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর টেস্ট ক্রিকেটে। দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। খেলায় জয়-পরাজয় আছে। থাকবেও। কিন্তু বাংলাদেশ হেরেছে খুবই বাজেভাবে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতা সর্বজনবিদিত। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে ২১ বছরের পথ চলায় যেভাবে খেলছে, তা দেখে মনে হবে বাংলাদেশ মাত্রই টেস্ট খেলা শিখেছে। এখনও মানিয়ে নিতে পারেনি। টেস্ট ক্রিকেট মানেই ধৈর্য্যের পরিচয়। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেন এখনও তা রপ্ত করতে পারেননি। প্রচলিত আছে বাংলাদেশ দল টেস্ট ক্রিকেটে খেলে টি-টোযেন্টি মেজাজে, আর টি-টোয়েন্টি খেলে টেস্ট মেজাজে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তা আরেকবার তারা প্রমাণ করে দেখালেন। চট্টগ্রাম টেস্টকে পাঁচদিন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পেরেছিল। কিন্তু ঢাকা টেস্ট! সেখানে ছিল লজ্জ্বা আর লজ্জ্বা। বৃষ্টি আর আলোর স্বল্পতায় খেলা হয়েছে আড়াই দিনের মতো। সেখানেও বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। আর এতেই ফুটে উঠে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটের দীনতা।
প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানে অলআউট হওয়ার চেয়েও বড় বিষয় ছিল ব্যাটসম্যানদের দৃষ্টিকটু ব্যাটিং। প্রায় সবাই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করে সর্বনাশ ডেকে এনেছেন। লজ্জ্বায় ডুবিয়েছেন। এই এরাই আবার দ্বিতীয় ইনিংসে ধৈর্য্য ধরে খেলে টেস্ট বাঁচিয়েই দিয়েছিলেন। হয়তো বাঁচাতেও পারতেন। কিন্তু রক্ষণের দেয়াল তুলেও পরে ধৈর্য্য হারিয়ে আক্রমণাত্বক হতে গিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। এখানে নাম আসবে লিটন ও মিরাজের। আবার মুশফিককে যেভাবে ঝুঁকিপূর্ণ রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়েছেন, তার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এ সবের কোনো ব্যাখ্যাই নেই। কিন্তু ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাকিব-মুশফিকদের মেন্টর কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি একটু ডিফেন্স করতে পারতাম, তাহলে তারা আরও আক্রমণাত্মক বোলিং করতো। আরো উপরে বল করতো,। লুপ দিতো, তখন মারার মত বল আরও পাওয়া যেত। আমরা করেছি কি, ওরা যে বল করেছে সেটাই মারতে গেছি। তাই ওদেরকে আর চিন্তা করতে হয়নি। বাড়তি চেষ্টা করতে হয়নি। আপনি একটা বোলারকে ৩ ওভার মেডেন দিলেন। তখন সে চিন্তা করবে ডিফেন্স ভাঙা যাচ্ছে না। তখন নিজের প্রথম পরিকল্পনা বদলে ফেলত। অন্য কিছু চেষ্টা করত। তাকে হতাশ করতে পারত ব্যাটসম্যান। ড্র করা যখন লক্ষ্য, তখন এমন ঝুঁকি নেওয়ার কারণ নেই। মিরাজ যেটা করল, এটার কোন মানে নেই। ওটা ছক্কা হলেও তো লাভ নেই। এই সময়ে এটা খেলার কোনো কারণ নেই।
শুধু পাকিস্তানের বিপক্ষেই নয়; এ রকম নজির অতীতে আরও বহু আছে। প্রতিবারই কোনও না কোনও যুক্তি দেখানো হয়। পরে আবার যখন খেলতে নামে, সেই আগেরই দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি ঘটে। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুও দিয়েছেন সে রকম যুক্তি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে বাংলাদেশ দল লম্বা সময় নজর দিয়েছে। যে কারণে খেলোয়াড়রা ভালো করতে পারেনি বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে মনোযোগ ছিল দলের। সেখান থেকে বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে নামার জন্যই খুব সম্ভবত পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটা খারাপ হয়েছে।’
কিন্তু চাইলেই যে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা রক্ষণাত্মক খেলতে পারেন, সে নজিরও রেখেছেন ঢাক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে। বিষয়টি তুলে ধরেছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে যে মুশফিক-সাকিব খেলল, রান করল। সেটা তো প্রথম ইনিংসের তুলনায় রক্ষণাত্মক। এটা কিভাবে খেলল? খুব সফলও তারা। তাদের খেলায় তারা বুঝিয়ে দিল, কোনটা সঠিক এপ্রোচ। এমনকি সাকিব কত রক্ষণাত্মক খেলল, সাকিব এত রক্ষণাত্মক খেলে না তো। কেয়ারফুল খেলল। টেস্ট ক্রিকেট শুধু আমরা খেলি না, সারা পৃথিবীতে আরও দেশ খেলে। আমরা দেখেছি একটা ম্যাচ ড্র করার জন্য দলগুলো সেশনের পর সেশন ডিফেন্স করে যাচ্ছে। এই তো ভারতে নিউজিল্যান্ড দলও করে দেখাল প্রথম টেস্টে।’
এমপি/এমএমএ/