বড় ব্যবধানে জিতে সিরিজ বাংলাদেশের
আফগানিস্তানের শক্তির মূল ক্ষেপনাস্ত্র বোলিং শক্তি। আরও নির্দিষ্ট করে বললে স্পিন আক্রমণ। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের যত জয়, তা এই স্পিন শক্তি দিয়ে। ব্যাটিংয়ে আবার তারা ততোটা শক্তিশালী নয়। তাদের তিনশোর্ধ রানের ইনিংস মাত্র চারটি। তাও আবার জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দলের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে।
পরে ব্যাট করে তাদের সর্বোচ্চ রান উইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে ২৮৮ রান। ম্যাচ হেরেছিল ২৩ রানে। তার মানে তাদের বিপক্ষে তিনশোর্ধ রানের ইনিংস হলে সে রান তাড়া করার ক্ষমতা আফগানদের নেই।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সেটিই আরেকবার প্রমাণ হলো চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে লিটন দাসের ১৩৬ ও মুশফিকুর রহিমের ৮৬ রানে ভর করে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে যে ৩০৬ রান করে, তা আর টপকানোর সামর্থ্য ছিল না আফগানিস্তানের। ৪৫.১ ওভারে ২১৮ রানে তারা অলআউট হয়ে হার মানে ৮৮ রানে। এই এক জয়ে বাংলাদেশর তিনটি অর্জন পূর্ণ হয়েছে। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে নিশ্চিত করলো। বাংলাদেশ উঠে গেল আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। সেইসঙ্গে সুপার লিগের পয়েন্ট চালু হওয়ার পর প্রথমবার কোনো দল হিসেবে পয়েন্ট পাওয়ার সেঞ্চুরিও করল বাংলাদেশ। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে একই স্টেডিয়ামে ২৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার।
ওয়ানডে ম্যাচের শক্তিতে বাংলাদেশ যে আফগনিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে, তা আরেকবার প্রমাণ হলো দ্বিতীয় ম্যাচে। যদিও প্রথম ম্যাচে নতুন করে একবার ড্রেস রিহার্সেল হয়েছিল। বাংলাদেশকে জিততে তারা একটু বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিল। আফগানদের ২১৫ রানের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ ৪৫ রানে টপ অর্ডারের ৬ ব্যাটসম্যানকে হারিয়েও ম্যাচ জিতে নিয়েছিল ৪ উইকেটে। আর সেই জয়ের রূপকার ছিলেন দুই তুরুণ আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজ। এই জয়েই বাংলাদেশের শক্তির বহিঃপ্রকাশ দেখেছিল আফগানরা। কিন্তু বাংলাদেশের ‘তিন’ লক্ষ্য পূরণের ম্যাচে তারা দাঁড়াতেই পারেনি। টস জয় দিয়ে শুরু, ৮৮ রানের জয় দিয়ে শেষ।
টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর বাংলাদেশ যখন ৪ উইকেটে ৩০৬ রান সংগ্রহ করে তখনই ম্যাচের এক রকম গতি লেখা হয়ে গিয়েছিল। বাকিটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা। দেখার বিষয় ছিল বাংলাদেশ কত রানে জিতে।
আফগানদের কুপোকাত করতে দলনেতা তামিম ইকবাল ৭ জন বোলার ব্যবহার করেন। এর মধ্যে মাহমুদউল্লাহ ১ ওভার বোলিং করেই তুলে নেন ১ উইকেট। প্রথম ম্যাচের জয়ের অন্যতম রূপকার বল হাতে তুলে নিয়েই প্রথম বলেই পেয়ে যান আফগানদের শেষ উইকেট। আফগানদের বাকি ৮ উইকেট ভাগাভাগি করে নেন দলের নিয়মিত ৫ বোলার। তবে এ ম্যাচে বোলারদের উত্তান-পতন ঘটেছে। প্রথম ম্যাচে বেশি খরুচে বোলার ছিলেন তাসকিন (২/৫০) ও সাকিব (২/৫৫)।
এই ম্যাচে আবার তারা মিতব্যয়ী। তাসকিন ১০ ওভারে ৩১ রানে নেন ২ উইকেট। সাকিবও ১০ ওভারে ২ উইকেট নিতে খরচ করেন ৩৭ রান। এ দিন আবার খরুচে বোলার ছিলেন প্রথম ম্যাচের তিন মিতব্যয়ী বোলার মোস্তাফিজ (৩/৩৯ ও মিরাজ (০/২৬) ও শরিফুল (২/৩৮)। এই ম্যাচে তিনজনই একটি করে উইকেট নেন। মোস্তাফিজ ৮ ওভারে ৫৩, মিরাজ ১০ ওভারে ৫২ ও শরিফুল ৬ ওভারে ৩৫ রান।
আফগানিস্তানের ইনিংসের শুরুতেই আঘাস হানেন বাংলাদেশের বোলাররা। শরিফুল-সাকিবের আঘাতের সঙ্গে ছিল একটি রান আউট। এতে করে তাদের রান দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৩৪। বড় রান তাড়া করতে নেমে শুরুর এই ধাক্কা সহজে কাটিয়ে উঠা যায় না। আফগানরাও তাই পারেনি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে রহমত শাহ (৫২) ও নাজিবুল্লাহ জাদরানের (৫৪) ৮৯ রানের জুটি শুধুই তাদের হারকে বড় হতে দেয়নি। নাজিবুল্লাহ জাদরানের এটি ছিল টানা তৃতীয় ফিফটি। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ধ্বংস স্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি করেছিলেন ৬৭ রান। তার আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে করেছিলেন ৭১ রান। সব মিলিয়ে ৭৫ ম্যাচে ১৪তম হাফ সেঞ্চুরি। ওপেনার রহমত শাহর ছিল ১৮তম ফিফটি। দু’জনকেই আউট করেন তাসকিন। এই জুটি ভেঙে যাওয়া পর মোহাম্মদ নবীর ৩২ ও রশিদ খানের ২৯ রান শুধুই দলের রানকে দুইশ পার করে নিয়ে যায়।
এমপি/আরএ/