সাকিব বনাম রশিদ-নবী-মুজিব
নবী, রশিদ ও সাকিব
আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে হারের ‘ক্ষত’ এখনো শুকায়নি বাংলাদেশের। টেস্ট মযার্দা পাওয়ার পর মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমেই বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ উইকেটে জয় পেয়েছিল আফগানিস্তান। বাংলাদেশ যখন এই টেস্ট হেরেছিল, তখন আফগানিস্তান দুগ্ধ শিশু আর বাংলোদেশ ১৯ বছরের টগবগে যুবক। বাংলাদেশ এই টেস্টে হেরেছিল মূলত আফগানিস্তানের স্পিন আক্রমণের কাছেই।
বাংলাদেশের পতন হওয়া ২০ উইকেটের ১৯টিই নিয়েছিলেন স্পিনার। সবার থেকে এগিয়ে ছিলেন রশিদ খান। দুই ইনিংসেই তিনি পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিয়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে ৫৫ রানে ৫টি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৯ রানে ৬টি। এ ছাড়া মোহাম্মদ নবী ৪টি (৩টি+১টি), জহির খান দ্বিতীয় ইনিংসে ৩টি, কায়েস আহমেদ প্রথম ইনিংসে ১টি। বাংলাদেশ এই টেস্ট খেলতে নেমেছিল কোনো পেস বোলার ছাড়াই। আফগানিস্তান দলে অবশ্য একজন পেসার ছিলেন। বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ গড়ে উঠেছিল দলনেতা সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাঈম হাসানকে নিয়ে। পরে হাত ঘুরিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন ও মুমিনুল হকও। কিন্তু বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ পেরে উঠেনি আফগানদের স্পিন আক্রমণের সঙ্গে। এরপর বাংলাদেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে কোনো টেস্ট খেলেনি। শুধুমাত্র তিনজাতির আসরে দু’টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিল সেই টেস্ট হারের পরপরই। প্রথমটিতে ২৫ রানে হেরে দ্বিতীয়টিতে জয় পেয়েছিল ৪ উইকেটে। আসরে তৃতীয় দল ছিল জিম্বাবুয়ে। এবার সেই আফগানিস্তানের সামনে আবার বাংলাদেশ। ক্ষেত্র ভিন্ন। খেলা হবে ওয়ানডে। সিরিজের ম্যাচ তিনটি। এরপর হবে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
আফগানিস্তান সামনে পড়াতেই অত্যাবশাকীয়ভাবে চলে এসেছে তাদের সেই বিখ্যাত ‘স্পিন’ শক্তি। রশিদ-নবীতো আছেনই। সঙ্গে যোগ হয়েছেন মুজিব-উর রহমান। সেখানে বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের শক্তি কমেছে। একমাত্র সাকিবই ভরসা। তাকে সহায়তা করার মতো দলে আছেন অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ আর ৩ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শেখ মেহেদি হাসান। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ নিজেরা স্পিন আক্রমণে নির্ভর করে মাঠে নাও নামতে পারে। কারণ স্পিনিং পিচ তৈরি করলেই তো সেখানে ছড়ি ঘুরাতে শুরু করবেন রশিদ-নবী-মুজিব।
রশিদ খান-মোহাম্মদ নবী-মুজিব-উর-রহমানের মিলিত উইকেট ৩৫৫। রশিদ খানের ৭৭ ম্যাচে ১৪৬ উইকেট, মোহাম্মদ নবীর ১২৭ ম্যাচে ১৩২ উইকেট, মুজিব-উর-রহমানের ৪৬ ম্যাচে ৭৭ উইকেট। বাংলাদেশের তিন স্পিনাররের উইকেট সংখ্যা ৩৫৭। এর মধ্যে সাকিবের একাই ২৭৭ উইকটে। মাহমুদউল্লাহর উইকেট ৭৭টি। এ ছাড়া শেখ মেহেদি হাসান নিয়েছেন ২ উইকেট। আর নাসুমতো আছেন অভিষেকের অপেক্ষায়। আফিফ হোসেন ৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেললেও দু’টি ম্যাচে মাত্র ৩ ওভার বোলিং করে উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১টি। অংকের হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্কই বলা যায়। কারণ এই তিনজন মিলেই বোলিং করবেন ৩০ ওভার। সেখানে বাংলাদেশের নির্ভরতার জায়গা সাকিব করবেন ১০ ওভার। শেখ মেহেদি খেললে আরও ১০ ওভার বোলিং করার কথা ভালো করা সাপেক্ষে। মাহমুদউল্লাহ নিয়মিত বোলিং করেন না। সর্বশেষ ১০ ম্যাচে তিনি মাত্র ৩ বার বল হাতে তুলে নিয়েছেন। বোলিং করেছিলেন ১২.১ ওভার। উইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ২ ওভারে ১১ রান দিয়েছিলেন উইকেট শূন্য। মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিলেন একটিমাত্র বল। আর বাংলাদেশের সর্বশেষ খেলা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে পুরো ১০ ওভার বোলিং করে ৪৫ রানে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। পিচে স্পিন ধরলে দলপতি তামিম হয়তো মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে বোলিং করাতেও পারেন। তবে দলপতি আফগানিস্তানের এ সব স্পিন আক্রমণ নিয়ে একদমই মাথা ঘামাতে রাজি না।
তামিম ইকবাল বলেন, ‘ওয়ানডেতে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সবসময়ই ভালো করেছি। তারা ভালো দল এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানসম্পন্ন বোলিং আক্রমণ আছে তাদের। তবে এই বোলিং আক্রমণের বিপক্ষেই আমরা আগে ভালো করেছি। কাল যারা খেলবে ব্যাট হাতে সবাই ছন্দে আছে।’
তামিম ইকবাল আফগানিস্তানের কোনো নির্দিষ্ট বোলার নিয়ে ভাবছেন না। তিনি বলেন, ‘ আমি নির্দিষ্ট কোনো বোলারকে নিয়ে বেশি কথাবার্তা বলতে চাই না। যেটা বললাম- তাদের বোলিং অনেক ভালো, সম্ভবত সেরা স্পিন অ্যাটাক তাদেরই। কিন্তু এদের বিপক্ষেই আমরা অতীতে অনেক ভালো করেছি, বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে। আবার কেন করতে পারব না?’
তামিম ইকবাল জানান, আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে সহজ কোনো বোলার পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আপনারা তিনজনের নাম বলেছেন, কিন্তু তারা বল করবে ৫০ ওভার। বাকি যে দুইজন বল করবে তারাও ভালো। শুধু তিনজনকে নিয়ে চিন্তা করলেই হবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সহজ বোলার আপনি খুব কমই পাবেন। ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ সবসময়ই থাকে। এক দল হয়ত স্পিনে ভালো, আরেক দল হয়ত পেসে। আমাদের মানিয়ে নিয়ে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে হবে।’
তামিম ইকবাল আফগানদের তিন স্পিনারকে নিয়ে না ভেবে গোট দল নিয়ে ভাবছেন। তুলে নিতে চান ওদের ১১ উইকেট। তিনি বলেন, ‘ওই তিন স্পিনার নিয়েই আমরা শুধু ভাবছি তা না। আমাদের ওদের ১১ উইকেট তুলতে হবে, তাই ওদের ব্যাটসম্যান নিয়েও আমাদের ভাবতে হয়।’
এমপি/আরএ/