ভালো-মন্দের মিশেলে সাকিবই সেরা
বাইশ গজে সাকিবকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এখানে তিনি সব সময় সেরা। নিজের সেরাটা ঢেলে দিতে কার্পণ্য করেন না। এ রকম উদাহরণ প্রচুর আছে। কিন্তু ২২ গজের বাইরে সাকিবকে নিয়ে যেন প্রশ্নের শেষ নেই। এক এক সময় তিনি এক একটি ঘটনার জন্ম দিয়ে সমালোচনার ঝড় তোলেন। এটা যেন তার জন্য নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। একটির রেশ শেষ হতে না হতেই তিনি আরেকটির জন্ম দিয়ে যাবেন। যার সর্বশেষ সংযোজন ছিল বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ফাইনালের আগের দিন ট্রফি নিয়ে অফিসিয়াল ফটোসেশনে উপস্থিত না হয়ে একটি বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ে অংশ নেওয়া।
আইপিএলে দল না পাওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখনো চলছে। এর মাঝে তার এ রকম অনুপস্থিতি নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের এক একজন এক এক রকম তথ্য দিয়ে বিষয়টি আরও বেশি করে ঘোলাটে করে। বিসিবি এ নিয়ে সাকিবের ফ্রাঞ্চাইজিকে কারণ দর্শানো চিঠিও দিয়েছে। পরের দিন সাকিবের দল শিরোপা জিততে পারেনি। টানটান উত্তেজনার ফাইনালে কুমিল্লার কাছে হেরেছে মাত্র ১ রানে। কিন্তু আসরের সেরা পুরস্কার যোগ্যতা দিয়ে ঠিকই অর্জন করে নিয়েছেন সাকিব। এই হলো ২২ গজ আর এর বাইরে সাকিব।
এবারের আসরে বলা যায় ফরচুন বরিশালকে অনেকটা একাই ফাইনালে নিয়ে এসেছিলেন সাকিব। টানা পাঁচ ম্যাচে ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়ে ম্যাচ সেরা হয়ে তিনি গড়েন বিশ্ব রেকর্ড। কিন্তু এ রকম নৈপুণ্য দেখানোর পরও তিনি আইপিএলে অবিক্রীত থেকে যান। আইপিএলে দল না পাওয়ার পর দুইটি ম্যাচ খেলতে নেমে তিনি আবার ব্যাটে-বলে ব্যর্থ হন। প্রথম কোয়াালিফায়ারে তার ব্যর্থতার পরও এই কুমিল্লাকেই ১০ রানে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল বরিশাল। কিন্তু ফাইনালে আবার এই কুমিল্লার বিপক্ষে সাকিব ব্যর্থ হলে দল আর পেরে উঠেনি। এই দুই ম্যাচের ব্যর্থতা সাকিবকে আসর সেরা হওয়া থেকে বঞ্চিত করতে পারেনি। ব্যাট হাতে ২৮৪ রান ও বল হাতে ১৬ উইকেট নিয়ে আসর সেরা হন তিনি। কিন্তু এই অর্জনেও সাকিব সন্তুষ্ট না। কারণ শিরোপা যে হাত ছাড়া হয়ে গেছে। তাইতো কণ্ঠে ছিল আক্ষেপের ধ্বনি, ‘ আমার জন্য ভালো একটি টুর্নামেন্ট ছিল। কিন্তু ম্যাচ অব টুর্নামেন্টের চেয়ে যদি ট্রফি মাথার উপর উঁচু করে তুলে ধরতে পারতাম, সেটি ভালো লাগতো বেশি।’
বিপিএলে সেরা হওয়া সাকিবের জন্য নতুন কিছু নয়। বলা যায় আসর সেরা হওয়াটা অনেকটা সাকিব নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন। এখন পর্যন্ত আট আসরে তারা মাথায় সুকুট উঠেছে একবার, দুইবার নয় চার চারবার। চলতি আসর ছাড়া তিনি সেরা হয়েছেন ২০১২, ২০১৩, ২০১৯ সালে। পারফরম্যান্সের কী পরিমাণ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেন সাকিব চারবার সেরা হওয়ার মাঝে যেন তা ফুটে উঠেছে। বাকি চারবার সেরা হয়েছেন ২০১৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে খেলা পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ইংল্যান্ডের আসহার জাইদি, ২০১৬ সালে খুলনা টাইটানসের মাহমুদউল্লাহ ২০১৭ সালে রংপুর রাইডার্সের ক্রিস গেইল ও ২০২০ সালে রাজশাহী রয়্যালসের আন্দ্রে রাসেল।
বিপিএলে টুর্নামেন্টের সেরা হওয়া সাকিব শুরু করেছেন প্রথম আসর থেকেই। খুলনা রয়্যালস বেঙ্গলরে হয়ে তিনি ২৮০ রান ও ১৫ উইকটে নিয়ে হয়েছিলেন আসর সেরা। সেবার তার দল কিন্তু ফাইনালে যেতে পারেনি। ফাইনাল খেলেছিল ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স ও বরিশাল বার্নাস। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা। ২০১৩ সালে পরের আসরেও সেরা সাকিব। এবার তার দল ঢাকা গ্লাডিয়ের্টস চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল। ব্যাট হাতে ৩২৯ রান আর বল হাতে ১৫ উইকেট। দলগত ও ব্যক্তিগত সাফল্যে সাকিব ছিলেন পরিপূর্ণ।
এরপর তিন আসরে সেরা হতে পারেননি, তবে ২০১৬ সালে তার নেতৃত্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। ২০১৭ সালে সাকিব সেরা হতে না পারলেও তার দল ঢাকা ডায়নামাইটস ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু রংপুর রাইডার্সের ক্রিস গেইলের ৬৯ বলে ১৮ ছক্কা ও ৫ চারে অপরাজিত ১৪৬ রানে দানবীয় ইনিংসের কাছ হারতে মানতে হয়েছিল সাকিবের দলকে। ২০১৯ সালেও সাকিবের দল ফাইনালে উঠেছিল। এবার ৩০১ রান ও ২৩ উইকেট নিয়ে সাকিব আসর সেরা হলেও তার দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ফাইনালে এবার তাদের বিপক্ষে দানবীয় ইনিংস খেলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের তামিম ইকবাল। তিনি ৬১ বলে ১১টি ছক্কা ও ১০টি চারে ১৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন। সাকিবের দল ঢাকা ডায়নামাইটস হেরে যায় ১৭ রানে।
এমপি/এমএমএ/