ফাইনালে বরিশালের দেশি বনাম কুমিল্লার বিদেশি
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিপিএলের কোনো আসরে শিরোপার স্বাদ পাননি। সেখানে আজকের (১৮ ফেব্রুয়ারি) ফাইনালে তার প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ইমরুল কায়েস দুইবার স্বাদ পেয়ে গেছেন। দুইবারই কুমিল্লা ভিক্টোারিয়ানসের হয়ে। প্রথমবার সদস্য হিসেবে, দ্বিতীয়বার অধিনায়ক হিসেবে। আজ জিতলে একদিকে হবে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতে, অপরদিকে অধিনায়ক হিসেবে হবে দ্বিতীয়বার। ২২ গজে ব্যাটে-বলে সাকিব অনন্য। আছেন আসরের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার লড়াইয়ে। সেই তুলনায় ইমরুল কায়েস অনেক ম্রীয়মান। কিন্তু এককভাবে কারো নৈপুণ্যে ভর করে ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ সাফল্য। সেখানে যারা জোটবদ্ধ হয়ে সাফল্য পাবে শিরোপা জেতার আনন্দে বিভোর হবে তারাই। কিন্তু সেই সহযোদ্বা হবেন কারা?
দুই দলই দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারে বেশ সমৃদ্ধ। বরিশালে যেমন দেশি ক্রিকেটারদের মাঝে আছেন সাকিব, নাজমুল হোসেন শান্ত, নুরুল হাসান সোহান, তৌহিদ হৃদয়, মুনিম শাহরিয়ারের মতো দেশি ক্রিকেটার তেমনি বিদেশি ক্রিকেটারদের মাঝে আছেন ইউনিভার্সেল বস ক্রিস গেইল। সঙ্গে আছেন ডুয়াইন ব্রাভো, মুজিব উর রহমান। কুমিল্লার ডেরায় আছে মোস্তাফিজ, ইমরুল কায়েস, মাহমুদুল হাসান জয়, লিটন দাসের মতো দেশি ক্রিকেটার। তবে তাদের বিদেশি কালেকশন আসরের সেরা। ডু প্লেসি, মঈন আলী, সুনিল নারিন ক্যামরুন ডেলপোর্ট, করিম জানাত। শেষের দুইজন এখন আর খেলছেন না।
ফাইনালে আসার আগ পর্যন্ত দুই দলের ব্যক্তিগত নৈপুন্যে বরিশালের হয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন দেশি ক্রিকেটাররাই। সাকিবতো ব্যাটে-বলে দ্যুতি ছড়িয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়ে গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ড। বাঁহাতি পেসারন মেহেদী হাসান রানাও দুই ম্যাচে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। আসরের মাঝপথে খেলতে নেমে মুনিম শাহরিয়ারের আগ্রাসী ব্যাটিং সবার নজর কেড়েছে আলাদাভাবে। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সময় ক্রিস গেইলের মতো ব্যাটসম্যানও ছায়া হয়ে পড়েন। বরিশালের বিদেশি ক্রিকেটারদের মাঝে ডুয়াইন ব্রাভো নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। মুজিব উর রহমান উইকেট না পেলেও ব্যাটসম্যানদের ক্রিজে আটকে রেখেছেন বেশ সুনিপুন ভাবে। সেখানে কুমিল্লার দেশি ক্রিকেটারদের পাশাপাশি তিন বিদেশি ডু প্লেসি, মঈন আলী আর সুনিল নারিনে-এরা একেক ম্যাচে একেক জন আলো ছড়িয়ে চলেছেন। ডু প্লেসি করেছেন সেঞ্চুরি, সুনিল নারিন দ্রুততম ফিফটি করার নতুন রেকর্ড গড়েছেন। মঈন আলীও আগ্রাসী ব্যাটিং আর বল হাতে উইকেট শিকার করেই চলছেন। তিনজনই হয়েছেন ম্যাচ সেরা। সেখানে বরিশালের কোনো বিদেশি ক্রিকেটার এখন পর্যন্ত ম্যাচ সেরা হতে পারেননি। কুমিল্লার দেশি ক্রিকেটারদের মাঝে মোস্তাফিজ, লিটন দাস, মাহমুদুল হাসান জয়ও ভূমিকা রেখে চলেছেন। বলা যায় দেশি-বিদেশি মিশেলে কুমিল্লা অনন্য।
ব্যাটিংয়ে কুমিল্লার ডু প্লেসি ১০ ম্যাচে ২৯১ রান করে আছেন পঞ্চম সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারি। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে তার ৫৪ বলে ১০১ রানের একটি ইনিংসও আছে। আবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে আছে অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংসও। মঈন আলী খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৩৫ বলে ৭৫ রানের ইনিংস, ৭ ম্যাচে তার রান ১৮৭। বল হাতে উইকেট নিয়েছেন ৯টি। আর সুনিল নারিনতো দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ১৩ বলে ফিফটি করে বিপিএলের ইতিহাসে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। দেশি ক্রিকেটারদের মাঝে মাহমুদুল হাসান জয় ১০ ম্যাচে ২২৭, লিটন দাস ৮ ম্যাচে ২০৫, দলপতি ইমরুল কায়েস ১০ ম্যাচে ১৮৪ রান করে ফাইনালে নিজেদের শেষবারের মতো নিংড়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। বোালিংয়ে সেরা পাঁচের দুইজন আবার কুমিল্লার। ১৮ উইকেট নিয়ে সবার উপরে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ১৪ উইকেট নিয়ে পাঁচে স্পিনার তানভীর ইসলাম। সাত ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে সাতে আছেন পেসার শহীদুল ইসলাম। এ ছাড়া নাহিদুল ১১টি উইকেট নিয়েছেন।
বরিশালের অগ্রযাত্রায় দেশি ক্রিকেটারদের অবদান কতো বেশি তা ধারণা পাওয়া যায় ম্যাচ সেরা হওয়া থেকেই। যে ১১টি ম্যাচ তারা খেলেছে সেখানে দেশি ক্রিকেটারই ম্যাচ সেরা হয়েছেন ৭ বার। সাকিব ৫ বার, মেহেদি হাসান রানা ২ বার। দলের আর কেউ ম্যাচ সেরা হতে পারেননি। বাকি ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষের ক্রিকেটাররা ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন। সাকিব ব্যাট হাতে ২৭৭ রান আর বল হাতে ১৫ উইকেট নিয়ে আসরের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার পথে অনেক এগিয়ে আছেন। ব্যাট হাতে অনেক পরে খেলার সুযোগ পেয়ে বেশ আলো ছড়ানো মুনিম শাহরিয়ার নজর কেড়েছেন। ৫ ম্যাচ খেলে ১৬১.৮১ স্ট্রাইক রেটে তিনি রান করেছেন ১৭৮। তার ঠিক পরেই আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১০ ম্যাচ খেলে তার রান ১৭৬। বল হাতে মেহেদি হাসান রানা নিয়েছেন ১০ উইকেট। শফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ৮টি করে উইকেট।
এইতো গেল বরিশালের দেশি ক্রিকেটারদের অধ্যায়। বিদেশি ক্রিকেটারদের মাঝে একমাত্র ডুয়াইন ব্রাভো আলো ছড়িয়ে চলেছেন। বল হাতে ১৭ উইকেট নিয়ে তিনি আছেন দ্বিতীয় স্থানে। ব্যাট হাতে রান করেছেন ১১৯। আরেক বোলার মুজিব উর রহমান নিয়েছেন ৮ উইকেট। তবে তার ইকোনমি ছয়ের নিচে। এটি অবশ্য খুবই কার্যকরী। আর ইউনিভার্সেল বস ক্রিস গেইল যেন নিজের ছায়া। ৯ ম্যাচে তার রান ২০৮। ফিফটি মাত্র একটি। স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১৩.৬৬।
এমপি/এসআইএইচ