চট্টগ্রামকে নাস্তানাবুদ করে ফাইনালে কুমিল্লা
এলিমেনেটর ও প্রথম কোয়ালিফায়ার যে রকম হাড্ডা হাড্ডি যে লড়াই হয়েছিল, দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তার ছিঁটেফোটাও ছিল না। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়নসের সামনে বানের পানির মতো ভেসে গেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। চট্টগ্রামের করা ১৯.১ ওভারে ১৪৮ রান কুমিল্লা অতিক্রম করে মাত্র ১২.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান করে। মাত্র ১৬ বলে ৫৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সুনিল নারিন। কুমিল্লা ১৮ ফেব্রুয়ারি ফাইনালে মোকাবেলা করবে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে।
বিপিএলের সর্বোচ্চ রানের ৫টি ইনিংসের মাঝে চারটিই করেছে চট্টগ্রাম। তাদের এই ইনিংস গড়ার কারিগর হলেন উইল জ্যাক, চাদউইক ওয়ালটন আর বেনি হাওয়েল। সেখানে শুরুতেই যদি উইল জ্যাক (১৬) আর ওয়ালটন (২) ফিরে যান, তাহলে বড় ইনিংস গড়ার আশা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। পরে বেনি হাওয়েলও (৩) ব্যর্থ হলে চট্টগ্রাম পারেনি বড় ইনিংস মেরামত করতে। তারপরও তারা শেষ পর্যন্ত লড়াকু সংগ্রহ করতে পেরেছে মেহেদি হাসান মিরাজের ৩৮ বলে ৪৪, আকবর আলীর ২০ বলে ৩৩, মৃতুঞ্জয়ের ৯ বলে ১৫ রানে।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভার দলনায়ক ইমরুল কায়েস ৬ জন বোলার ব্যবহার করে পুরো ফায়দা তুলে নেন। রান আসে ৪ উইকেটে ৪৩। যদিও শুরুটা ছিল যথারীতি উর্ধ্বমুখী এবং উইল জ্যাকের ব্যাটেই। কিন্তু তিনি আক্রমণাত্বক হতে না হতেই শহীদুলের বলে ইমরুল কায়েসের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেন ৯ বলে ১৬ রান করে। অতীতে চট্টগ্রাম এ রকম ধাক্কা সামলে উঠেছে। এমনকি এলমিনেটরে পেটের পীড়ায় উইল জ্যাক না খেলার পরও। সেই সব ধাক্কা যাদের হাত ধরে সামলে উঠা হয়, সে রকমই একজন ওয়ালটন। কিন্তু তাকে দ্রুত সাজ ঘর দেখিয়ে দেন তানভীর ইসলাম এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে। রিভিউ নিয়েও ওয়ালটন নিজেকে বাঁচাতে পারেননি। দলের রান তখন ৪.৫ ওভারে ২ উইকেট ৩৯। এই বড় ধাক্কা সামলে উঠার আগেই পরের ওভার আরও বড় আঘাত আসে চট্টগ্রামের ইনিংস। মঈণ আলী বল হাতে তুলে নিয়েই ওপেনার জাকির হোসেন (১৯ বলে ২০ রান) শামীম হোসেনকে পরপর দুই বলে তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেন। যদিও তিনি পরে হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। কিন্তু পরের ওভারে মঈন আলী আবারো আঘাত হানেন। আফিফ হোসেনকে ১০ রানে ফিরিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামের মেরুদন্ডই ভেঙ্গে দেন। পরে আর সোজা হয়ে তারা দাঁড়াতে পারেনি। মেহেদি হাসান মিরাজ ও আকবর আলী উইকেট পতনের ধ্বস সামালে দলের রানকে মোটামুটি সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যান। এই জুটি ৬.৪ ওভারে ৬১ রান যোগ করেন। আকবর আলী ২০ বলে ২টি করে চার ও ছয় মেরে ৩২ রান করে আবু হায়দার রনির বলে তারই হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। এই জুটির রান চট্টগ্রামের ইনিংসকে কিছুটা হৃষ্টপুষ্ট করার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলে। কিন্তু বেনি হাওয়েল রান আউট হলে সেই মৃদু সম্ভাবনারও মত্যু ঘটে। কিন্তু তারপরও তারা ১৪৮ পর্যন্ত যেতে পেরেছিল মিরাজ ও মৃত্যুঞ্জয় দ্রুত রান করলে। যে কারণে অলআউট হওয়ার আগে ৪.১ ওভারে রান যোগ হয় ৩৪। মঈন আলী ২০ রানে নেন ৩ উইকেট।
ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কুমিল্লা ব্যাট করতে নামে উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনে। লিটন দাসের সঙ্গে সুনিল নারিনকে পাঠানো হয়। এর সুফলও পায় তারা। লিটন ইনিংসের প্রথম বলেই শরিফুলের বলে উইকেটের পেছনে আকবর আলীর হাতে ধার পড়ে বিদায় নিলেও সুনিল নারিন মাত্র ১৬ বলে ৬ ছক্কা ও ৫ চারে ৫৭ রান করে দলের জয়ের রাস্তা সহজ করে দেন। তার কারণেই পাওয়ার প্লেতে রান আসে ২ উইকেটে ৮২। তিনি মাত্র ১৩ বলে অর্ধেশত রান করেন। যা বিপিএলে দ্রুততম। এমন কি বাংলাদেশের যে কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও। বিপিএলে আগের দ্রুততম ফিফটি ছিল আহমেদ শেহজাদের ১৬ বলে। সুনিল নারিন মাত্র ১৬ বলে (ইনিংসের ওভার ছিল ৫.৪) ৫৭ রান করে মৃতুঞ্জয়ের বলে তারই হাতে ধরা পড়েন। কিন্তু তিনি আউট হলে কী হবে। ডু প্লেসি, মঈন আলী এসেও একইভাবে শুরু করেন। তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হবে কুমিল্লার সামনে ১৪৮ নয়, ২৪৮ রান তাড়া করতে হবে। সুনিল নারিন আউট হওয়ার পর ইমরুল কায়েস ২৪ বলে ২২ রান করে আউট হন। শেষ পর্যন্ত ডু প্লেসি ২৩ বলে ৩০ ও মঈন আলী ১৩ বলে ৩০ রান করে অপরাজিত থেকে ফিরে আসেন।
এমপি/এএস