বরিশালের আসল অস্ত্র বোলিং
দল গড়ার পর খুব জোর দিয়ে ফরচুন বরিশালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তাদের লক্ষ্য শিরোপা জেতা। দলপতি সাকিব আল হাসান তো ঘোষণাই দিয়ে দেন তিনি বরিশালবাসীকে শিরোপা উপহার দিতে চান। সেই লক্ষ্যে বরিশাল পৌঁছে গেছে শেষ ধাপে। আর প্রয়োজন মাত্র একটি জয়। তবেই চাওয়া-পাওয়ার সেতুবন্ধন হয়ে যাবে।
ফাইনাল পর্যন্ত উঠে আসতে বরিশালের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে বোলিং। টি-টোয়েন্টি রানের খেলা; কিন্তু সেখানে বরিশাল যে কয়টি ম্যাচে আগে ব্যাট করেছে, সেখানে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে একটি মাত্র ম্যাচ ছাড়া বাকি সব ম্যাচে তাদের রান ছিল ওভার প্রতি গড়ে সাতের সামান্য উপরে। এমন করে তাদের ম্যাচ জেতার সংখ্যা ছিল পাঁচটি। এমনকি কোয়ালিফায়ার-১ ম্যাচেও তাদের অবস্থা ছিল একই রকম। বরিশালের ব্যাটিং যে কতটা দুর্বল তাই প্রমাণ করে আসরে সর্বনিম্ন রানের ইনিংসও তাদের। যে কুমিল্লাকে হারিয়ে তারা ফাইনালে উঠে এসেছে, সেই কুমিল্লার বিপক্ষেই তারা মাত্র ৯৫ রানে অলআউট হয়েছিল। কুমিল্লা আগে ব্যাট করে রান করেছিল ৭ উইকেটে ১৫৮।
খুলনার বিপক্ষে ৭ উইকেটে ১৪১ রান করে বরিশাল ম্যাচ জিতেছিল ১৭ রানে। খুলনাকে তারা ১৯ ওভারে অলআউট করে ১২৪ রানে। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পরের ম্যাচে বরিশাল এবার নিজেরাই অলআউট হয়ে যায় আগের চেয়ে ৪ রান বেশি করে ১৪৫ রানে। এবারও খুলনা সেই রান পাড়ি দিতে গিয়ে হোচট খায়। খুলনা এবার আর অলআউট হয়নি। ৬ উইকেটে করে ১৩৯ রান।
যেসব ম্যাচে প্রতিপক্ষ আবার আগে ব্যাটিং করেছে, সেসব ম্যাচেও বোলিং শক্তির জোরে রান বেশি হতে দেয়নি। ওভারপ্রতি ছয়ের সামান্য উপরে ছিল সংগ্রহ; কিন্তু সেই রানও তারা অতিক্রম করতে গিয়ে সহজে পার পায়নি। চট্টগ্রামের বিপক্ষে ১৪৯ রান করে অলআউট হয়েও ম্যাচ জিতেছিল ১৪ রানে। চট্টগ্রামেকে তারা অলআউট করেছিল ১৩৫ রানে। কুমিল্লার বিপক্ষে এবার আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৫৫ রান করে। ব্যাট করতে নেমে কুমিল্লার সংগ্রহ ছিল ৯ উইকেটে মাত্র ১২৩ রান। ঢাকার বিপক্ষে দুইবারের মোকাবিলায় দুই দল একবার করে আগে-পরে ব্যাট করেছিল।
প্রথম মোলাকাতে বরিশাল ৮ উইকেটে ১২৯ রান করে হেরেছিল ৪ উইকেটে। ঢাকা ১৭ ওভার ৩ বল পর্যন্ত খেলেছিল। পরের ম্যাচটি প্লে অফে যেতে ঢাকার জন্য ছিল অতীব জরুরি। এবার ঢাকা আগেহ ব্যাট করে ৯ উইকেটে ১২৮ রান করে। বরিশাল এবার প্রথমই খুবই দ্রুততার সঙ্গে সেই রান অতিক্রম করে মাত্র ১৫ ওভার ৩ বলে ২ উইকেট হারিয়ে। বোলিং শক্তির ধারাবাহিকতা ধরে রেখে বরিশাল প্রথম কোয়ালিফায়ারেও আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে মাত্র ১৪৩ রান করে। সেই রান তারা কুমিল্লাকে তাড়া করতে দেয়নি। ১৩৩ রানে আটকে যাখে।
বরিশাল একটি মাত্র ম্যাচে বড় সংগ্রহ করতে পেরেছিল সিলেটের বিপক্ষে। ৪ উইকেটে ১৯৯ রান করে। সিলেটও পাল্টা জবাব দিয়েছিল ৬ উইকেটে ১৮৭ রান করে। বরিশালের বিপক্ষে এটিই ছিল সবচেয়ে বেশি রান।
বরিশালের ব্যাটিং গভীরতা কম বলে তারা আসরে অলআউট হয়েছে তিনবার। কুমিল্লার বিপক্ষে আসরের সর্বনিম্ন ৯৬, খুলনার বিপক্ষে ১৪৫, চট্টগ্রামের বিপক্ষে ১৪৯ রান করে অলআউট্ হয়। প্রতিপক্ষকে অলআউট করেছে দুইবার খুলনাকে ১২৪, চট্টগ্রামকে ১৩৫ রানে।
বোলিং শক্তিতে বলিয়ান বরিশাল যে কারণে উইকেট শিকারির তালিকায় তাদের সেনারা অগ্রভাগে। কুমিল্লার মোস্তাফিজের সমান ১৭ উইকেট নিয়ে শীর্ষে আছেন ডুয়াইন ব্রাভো। এরপরের স্থানও বরিশালের। এখানে আছেন তাদের দলনেতা সাকিব। তার উইকেট ১৫টি। লিগ পর্বের প্রতিটি ম্যাচেই তিনি উইকেট পেয়েছেন। শুধুমাত্র প্রথম কোয়ালিফায়ারে তিনি কোনো উইকেট পাননি। এ ছাড়া দলকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়া ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মেহেদি হাসান রানা নিয়েছেন ১০ উইকেট। আফগান মুবিজ উর রহমান ও শফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ৮টি করে উইকেট। এরাই মূলত বরিশালের বোলিং শক্তি। এ ছাড়া নাঈম হাসান ৩ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৬ উইকেট।
বোলিং যতটা আলোকিত, ব্যাটিং আবার ততোটা নয়। অথচ দলে আছেন ক্রিস গেইলের মতো ব্যাটসম্যান। যদিও তার ক্যারিয়ারে এখন ভাটার টান। সেরা পাঁচে নেই তাদের কোনো ব্যাটসম্যান। ছয়ে আছেন সাকিব। তার রান ২৭৭। এরপর আছেন নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে না পারা ক্রিস গেইল। ৯ ম্যাচে রান ২০৮। তবে অনেক পরে খেলার সুযোগ পেয়ে বেশ আলো ছড়ানো মুনিম শাহরিয়ার বেশ নজর কেড়েছেন। ৫ ম্যাচ খেলে ১৬১.৮১ স্ট্রাইক রেটে তিনি রান করেছেন ১৭৮। তার ঠিক পরেই আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।১০ ম্যাচ খেলে তার রান ১৭৬।
বরিশালের ফাইনালের প্রতিপক্ষ এখনো নির্দারিত হয়নি। আগামীকাল কুমিল্লা বিক্টোরিয়ানস ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিজয়ী দলের সঙ্গে তারা শিরোপা যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। শিরোপার ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে এই বোলিং হবে বরিশালের আসল অস্ত্র।
এমপি/এসএ/