সাকিবের তিন-চার-পাঁচ
সাকিব আর পাঁচ- মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে এ নিয়ে চলছে সর্বত্র মাতামাতি। পাঁচের ব্যাখ্যা সবাই জানেন। টানা পাঁচ ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়ে তিনি গড়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন কীর্তি। নতুন বিশ্ব রেকর্ড। এমনটি যে তার আগে আর কেউ করতে পারেননি। সাকিব তাই অনন্য।
তাহলে তিন আর চার কী? এটাও কি নতুন কীর্তি? না এ তিন আর চারের মাঝে নেই কোনো নতুন কীর্তি। তিন হলো লিগ পর্বে নিজেদের খেলা শেষ করে ১৫ উইকেট নিয়ে তিনি আছেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় তিনে। চার হলো চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। তার মোট রান হলো ২৭৬।
সাকিবের তিন-চার এর চেয়ে বেশি অর্থবহ পাঁচ। কারণ এটি যে একটি বিশ্ব রেকর্ড। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টানা পাঁচ ম্যাচে ম্যাচ সেরা হওয়া-বিশ্ব ক্রিকেট দেখেছে প্রথমবারের মতো। এর আগে টানা ম্যাচ সেরা হওয়ার রেকর্ড ছিল চারবার। যৌথভাবে তা করেছিলেন ট্রেসকোথিক, ল্যাঙ্গাভেল্ট, শেন ওয়াটসন, ডেভিড ওয়ার্নার ও দিনেশ নাকরানি। আগের ম্যাচে ম্যাচ সেরা হয়ে সাকিব তাদের স্পর্শ করেছিলেন। এবার ছাড়িয়ে গিয়ে বনে গেলেন একক মালিক।
আপাতত তার এ কীর্তিতে অন্য কারো ভাগ বসানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আর বিপিএলে তার ম্যাচ সেরা হওয়ার সংখ্যা ১৪। তার পরে আছেন মাহমুদউল্লাহ। তবে ব্যবধান অনেক বেশি ৫। মাহমুদউল্লাহ ম্যাচ সেরা হয়েছেন ৯ বার।
এবারের বিপিএলে শক্তিশালী দল গড়ার ক্ষেত্রে বরিশাল ছিল অন্যতম সেরা। সাকিবকে তারা অনেক আগেই নিজেদের করে নিয়েছিল সরাসরি সাইনিং করে। কিন্তু শুরুতে দলটি নামে প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। ঢাকায় প্রথম পর্ব শেষ করে তারা যখন চট্টগ্রামে গিয়েছিল, তখন তাদের অবস্থান ছিল তলানির দিকে পাঁচে। ৩ ম্যাচে পয়েন্ট ২। এর মাঝে শেষ হার ছিল কুমিল্লার কাছে খুবই বাজেভাবে মাত্র ৯৫ রানে অলআউট হয়ে ৬৩ রানে! কিন্তু এ শেষ। এরপর চট্টগ্রাম গিয়ে তারা ঘুরে দাঁড়ায়। এমনই ঘুরে দাঁড়ায় যে নিচের দিক থেকে উঠে আসে সবার উপরে। হারেনি একটি ম্যাচও। শুধুমাত্র বৃষ্টির কারণে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছিল। খেলা হলেও এ ম্যাচেও তাদের জয় ছিল অবধারিত।
বরিশাল নিজেদের ফিরে পাওয়া শুরু করে সাকিবও বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও জ্বলে উঠলে। প্রথম ৪ ম্যাচে বল হাতে তিনি সফল ছিলেন। ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ৭৯ রানে। গড় ১৫ দশমিক ৮। কিন্তু ব্যাট হাতে ছিলেন একেবারেই অনুজ্জ্বল। এ ৪ ম্যাচে তার রান ছিল ১৩,২৩,১,৯। খুলনার বিপক্ষে শুরু তার অলরাউন্ড নৈপুণ্য। তার সেই নৈপুণ্যের আলোতে উদ্ভাসিত হয়েছে বরিশালের শিবির আর অন্ধকার নেমে আছে প্রতিপক্ষের তাবুতে। খুলনার বিপক্ষে ৪১ রান ও ১০ রানে ১ উইকেট, চট্টগ্রামের বিপক্ষে ৫০ রান ও ২৩ রানে ৩ উইকেট, কুমিল্লার বিপক্ষে ৫০ রান করার পাশাপাশি ২০ রানে ২ উইকেট, সিলেটের বিপক্ষে ৩৮ রান ও ২৩ রানে ২ উইকেট এবং ঢাকার বিপক্ষে অপরাজিত ৫১ রান ও ২১ রানে ১ উইকেট ছিল তার র্কীতিতে আলোকিত।
এমনিতেই একজন খেলোয়াড়ের বোলিংয়ে যদি ছারখার হতে থাকেন ব্যাটসম্যানরা, সেখানে যদি আবার সেই খেলোয়াড়ের ব্যাটিং যোগ হয়, তাহলে যে কোনো দলই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে। বরিশালের জয়যাত্রা যেন তারই জানান দিচ্ছে। বরিশাল ৪টি ম্যচ জিতেছে শুধুমাত্র বোলারদের দাপটে। যেখনে আগে ব্যাট করে তাদের সংগ্রহ ছিল ১৪১/৯, ১৪৫, ১৪৯ ও ১৫৫/৫। এসব ম্যাচে সাকিবের বোলিং খেলতেই পারেননি প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা। খুলনার বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছিলেন ১টি। আবার শুরুতে চট্টগ্রামের বিপক্ষেও ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়েছিলেন। সেই ম্যাচেও উইকেট ছিল ১টি। এভাবেই সাকিব তার বোলিংয়ের আগুনে পুড়িয়েছিলেন ব্যাটসম্যানদের।
ব্যাটিংটা ঠিকঠাক মতো হচ্ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে এটা বেশ ভুগাচ্ছিল সাকিবকে। এ নিয়ে বিপিএল শুরুর আগে আলাদা করে অনুশীলনও করেন। বিগ হিটের অনুশীলনও করেন। কিন্তু বিপিএলের শুরুতে তিনি নিজেকে ফিরে পাননি। ফিরে পেতে শুরু করেন খুলনার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ২৭ বলে ৪১ রান। চট্টগ্রামের বিপক্ষে ৩১ বলে ৫০, কুমিল্লার বিপক্ষে ৩৭ বলে ৫০, সিলেটের বিপক্ষে ১৯ বলে ৩৮ এবং সর্বশেষ ঢাকার বিপক্ষে ২৯ বলে অপরাজিত ৫১ রান।
এমন ব্যাটিংই সাকিব মনে মনে চেয়েছিলেন। তাইতো তার মুখে তৃপ্তির হাসি। বলেন, ‘আমি খুশি। বোলিং আমার সব সময় ভালো হচ্ছিল। এবার গত ৫ ম্যাচ থেকে ব্যাটিংটাও ভালো হচ্ছে। আশা করি পরের দুই ম্যাচেও এ ধারা বজায় থাকবে।’ সাকিব পরের দুই ম্যাচ বলতে বুঝিয়েছেন প্লে অফ রাউন্ডের কোয়ালিফায়ার-১ ও ফাইনাল। কোয়ালিফয়ার-১ জিতে তিনি ফাইনালেও জিততে চান।
এমপি/এসএন