বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডিতে বাংলাদেশ হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অপরাজিত হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মঙ্গলবার (মার্চ) পল্টন শহীদ নুর হোসেন স্টেডিয়াম অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা চাইনিজ তাইপেকে ৩টি লোনাসহ ৪২-২৮ পয়েটে পরাজিত করে। প্রথমার্ধে বাংলাদেশ ২০-১৪ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তুহিন তরফদার টুর্নামেন্টের বেস্ট ক্যাচার ও ম্যান অব দ্য ফাইনাল হন। একই দলের মিজানুর রহমান ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট ও বেস্ট রেইডারের পুরস্কার লাভ করেন।
এই টুর্নামেন্টে ২০২১ এবং ২০২২ সালের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল কেনিয়া। কেনিয়াকে প্রথমবার ৩৪-২৮ এবং দ্বিতীয়বার ৩৪-৩১ পয়েন্টে হারিয়েছিল লাল-সবুজের বাংলাদেশ।
তৃতীয় আসরের ফাইনালে ওঠার সময়ই বিশ্বকাপ কাবাডিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত তুহিন তরফদারদের অকুণ্ঠ সমর্থন জোগাতে স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল দর্শকে পরিপূর্ণ। দু’দলই ধীরস্থির-সর্তক ভঙ্গিতে শুরু করে। বোনাস পয়েন্ট পাওয়ার মাধ্যমে পয়েন্টের খাতা খোলে বাংলাদেশ। এরপর সংগ্রহ করে আরেকটি পয়েন্ট। তবে টানা ২ পয়েন্ট পেয়ে দ্রুতই সমতায় ফেরে চাইনিজ তাইপে। মিজানুর রহমান রেইড দিয়ে সফল হলে আবারও লিড নেয় স্বাগতিকরা (৩-২)। তবে পিছিয়ে থাকেনি প্রতিপক্ষ তাইপেও। সমানতালে খেলতে থেকে কখনো সমতায় ফেরে, কখনো আবার এগিয়েও যায় তারা (৫-৪)। একপর্যায়ে ১০-৯ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকার পর ১০-১০ এ সমতা আনে স্বাগতিকরা। ১৪ মিনিটের সময় তাইপেকে প্রথমবারের মতো অলআউট করে ১৪-১০ পয়েন্টে এগিয়ে যায় তারা। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি স্বাগতিকদের।
বাংলাদেশ এই ম্যাচে রেইডের চেয়ে সফল ক্যাচারের ভূমিকায় বেশি সফল হয়। মূলত তাদের অভিজ্ঞতার কাছেই হার মানে চাইনিজ তাইপে। প্রথমার্ধে ২০-১৪ পয়েন্টে লিড নিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ আরও ২২ ও তাইপে ১৪ পয়েন্ট স্কোর করে। তুহিনের রেইডে লোনা ও বোনাস পয়েন্ট মিলিয়ে ৪ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশ স্কোরলাইন ২৪-১৪ করে ফেলে। মিজানুর, আরদুজ্জামান ও তুহিনের একের পর এক সফল রেইড ও দলগত নৈপুণ্যে নিজেদের পয়েন্ট আরও বাড়িয়ে নিতে থাকে লাল-সবুজ বাহিনী। এক পর্যায়ে তুহিনের রেইডে তৃতীয় লোনা পেয়ে যায় বাংলাদেশ (৩৭-২১)। তখনই মোটামুটি বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ফলে একটু যেন হাল্কা মুডে খেলতে থাকে তারা। এটাকে কাজে লাগিয়ে তাইপে দ্রুত কিছু পয়েন্ট আদায় করে নেয় শেষ আড়াই মিনিট। শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ রেইড দিতে গিয়ে কোনো চাপ নেয়নি। বরং কৌশলগত কারণে ধীরগতিতে খেলে সময় পার করতে থাকে। বাকি সময়ে তাইপে দুটো লোনার পয়েন্ট দিয়েও লিড নিতে পারতো না বা সমতায় ফিরতে পারতো না।
খেলা শেষ হওয়ার বাঁশি বাজতেই দর্শক উল্লাস শুরু হয়। শিরোপাজয়ের আতিশয্যে তুহিন দর্শনীয়ভাবে ডিগবাজি খান। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন। লাউড স্পিকারে গান বেজে ওঠে, ‘জয় বাংলা, বাংলার জয় ...’। চারটি জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে দৌড়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন তুহিনরা।
খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের স্বর্ণপদক পরিয়ে হাতে শিরোপা ট্রফি তুলে দেন প্রধান অতিথি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। রানার্সআপ চাইনিজ তাইপের হাতে ট্রফি ও গলায় রুপার পদক পড়িয়ে দেন কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি ও পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এ সময় বিশ্ব কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি সত্যশিভম মুনিস্বামী, এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ সারোয়ার, যুব ও ক্রীড়া সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহ, ফেডারেশনের সহসভাপতি হাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ও পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক হাবিবুর রহমান এবং যুগ্ম সম্পাদক ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।
এমপি/আরএ/