টস জিতে বোলিং নিয়ে বেকায়দায় বাংলাদেশ
ক্রাইস্টচার্চে আবাহওয়ার পূর্বাভাস মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। কোথায় ১৪০ বা ততোধিক গতিতে পেসারদের ঝড় দেখা যাবে। যে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবেন ব্যাটসম্যানরা। টস জয়টা ছিল দলনেতাদের কায়মনোবাক্যে চাওয়া। সেই চাওয়ায় সফল হয়েছিলেন বাংলার সেনাপতি মুমিনুল হক।
পূর্বাভাস অনুযায়ী বল তুলে দিয়েছিলেন পেসারদের হাতে। নির্দেশনা ছিল মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের চেয়েও বেশি গতিতে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে আসা স্বাগতিকদের ব্যাটিং লাইন। কিন্তু সেখানে উল্টো ব্যাটারদের তাণ্ডব। দলপতি টম লাথাম আর ডেভন কনওয়ের জোড়া সেঞ্চুরিতে নিউ জিল্যান্ড উঠছে রানের পাহাড়ে। প্রথম দিন শেষে তাদের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৩৪৯। লাথাম ডাবল সেঞ্চুরি আর কনওয়ে আছেন সেঞ্চুরির পথে। লাথাম ১৮৬ ও কনওয়ে ৯৯ রান নিয়ে আগামীকাল আবার ব্যাট করতে নামবেন।
ক্রাইস্টচার্চে শুধু আবাহওয়ার পূর্বাভাসই ভুল প্রমাণিত হয়নি। অনেক ধারণাও ভুল প্রমাণ হয়েছে। হেগলি ওভালে আগে ব্যাট করা মানেই মৃত্যুকুপে পড়া। প্রথম ইনিংসে রান উঠেই না। থাকে ৩০০’র নিচে। কিন্তু সেখানে আজ প্রথম দিনই নিউ জিল্যান্ড ৩০০ অতিক্রম করে ফেলেছে। যেভাবে রান উঠছে তাতে করে বাংলাদেশকে রান সাগরে ডুবাতে যাচ্ছে স্বাগতিকরা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রান সংগ্রহের গতিও বেড়েছে। প্রথম সেশনে রান উঠেছে বিনা উইকেটে ৯২। দ্বিতীয় সেশনে ১ উইকেটে ১১০। তৃতীয় সেশনে বিনা উইকেটে ১৪৭ রান। দিনে জুটি হয়েছে দুইটি। একটি শতরানের, আরেকটি দুইশ‘ রানের। প্রথম উইকেট জুটিতে লাথাম-ইয়াং ১৪৮ রান করার পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে লাথাম-কনওয়ে ২০১ রান করে অবিচ্ছিন্ন আছেন। প্রথম দিন তাদের ওভার প্রতি রান ছিল ৩ দশমিক ৮৭।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে টেস্ট জেতার পর উজ্জীবিত ছিল বাংলাদেশ। ক্রাইস্টচার্চেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে ছিল উদগ্রীব। হ্যাগলি ওভালের ২২ গজের জমিন সবুজ। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বেওভালের চেয়ে বেশি। টস জিতে প্রথম টেস্ট যদি নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের ছারখার করা যায়, তাহলে হ্যাগলি ওভালে নয় কেন? প্রয়োজন শুধু টস জয়।
প্রত্যাশা মতো টসও জেতা হলো। বোলিংও নেওয়া হলো। কিন্তু কোথায় নিউ জিল্যান্ড ছারখার। উল্টো নিজেদের ধারালো আক্রমণই ভোতা হয়ে গেছে। প্রথম সেশনে স্বাগতিকদের কোনো উইকেটই নেওয়া সম্ভব হয়নি। রান উঠে বিনা উইকেটে ৯২। চা বিরতির আগে অবশ্য একটি উইকেট নেওয়া সম্ভব হয়েছে। নিউ জিল্যান্ডের রান উঠে ১ উইকেটে ২০২। দিন শেষে যা গিয়ে ঠেকে ৩৪৯ রানে।
ম্যাচ শুরুর আগে বাংলাদেশ যে রকম পরিকল্পনা করেছিল তার সব কিছুই পেয়েছিল। কিন্তু তারপরও তারা তার ফায়দা নিতে পারেনি। ক্রাইস্টচার্চের ইতিহাস বদলে দিয়ে নিউ জিল্যান্ড ছুটছে রানের ফোয়ারার দিকে। পরিসংখ্যান ওলট-পালট হয়ে গেছে। আরো কিছু হবে। ভেঙে যাচ্ছে পূর্বের অনেক ধারণা। এখানে প্রথম ইনিংসে ৩০০ রানের নিচে হয়ে। এ তথ্য প্রথম দিনই মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছেন নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা।
উদ্বোধনী জুটিতে শতরান এসেছে। এর দায় আছে বাংলাদেশের পেসারদেরও। মোটেই নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি বাংলাদেশের তিন পেসার। প্রথম টেস্টে তিন পেসারের ক্ষুরধার বোলিং যেমন সবার প্রশংসা কুড়িয়ে আশার প্রদীপ বাড়িয়েছিল দ্বিতীয় টেস্ট নিয়ে, সেখানে পানি ঢেলে দিয়েছেন তিন পেসার। লাইন-লেন্থের বালাই ছিল না। প্রথম টেস্টে যেখানে উইকেট টু উইকেট বল করে কখনো অফ স্ট্যাম্পের বাইরে, কখনো শর্ট পিচ বল করে গেছেন তিন পেসার। যার সদ্ব্যবহার করে নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা ছুটছেন রানের পাহাড় গড়ার দিকে।
এ রকম পরিস্থিতির জন্য ভাগ্যকেও দুষতে পারেন বাংলাদেশের পেসাররা। তাসকিন-শরিফুলকে এ দিন শুরু থেকেই খুবই স্বাভাবিকভাবে খেলছিলেন দুই ওপেনার লাথাম ও ইয়াং। প্রথম টেস্টের নায়ক এবাদত বল হাতে (ইনিংসের নবম ওভার ছিল) নেওয়ার পরই সফল হয়ে ছিলেন। সেঞ্চুরিয়ান লাথামকে দুই দুইবারই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেছিলেন তিনি। আম্পায়ার দুইবারই সাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু দুইবারই রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। পরে প্রথম সেশনে করেন হাফ সেঞ্চরি। পরের সেশনে ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি করেন ১৩৩ বলে ১৭ বাউন্ডারিতে। অথচ এ উইকেট পড়ে গেলে ফলাফল অন্য রকমও হতে পারত।
পরে মিরাজের বলে বেশ আস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ রিভিউ নিয়েছিল। উইকেটের পেছনে নুরুল হাসমান সোহান বল গ্লাভসে নিয়েই জোরালো আবেদন করেন। কিন্তু আম্পায়ার সাড়া না দিলে অধিনায়ক মুমিনুলের অপেক্ষা না করে নিজেই রিভিউ নেন সোহান। পরে মুমিনুল সায় দেন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় বল ব্যাট কিংবা গ্লাভস স্পর্শ করেনি।
শুধু লাথাম কেন, আরেক ওপেনার উইল ইয়াংও বেঁচে গেছেন আউট হওয়ার হাত থেকে। এবারও বোলার ছিলেন এবাদত। স্লিপে তিনি ক্যাচ দিয়েছিলেন। কিন্তু লিটন দাস ধরতে পারেননি। পরে সেই বলে ওভার থ্রো হলে নিউ জিল্যান্ড তুলে নেয় ৭ রান।
নিউ জিল্যান্ডের প্রথম জুটি ভাঙে দলীয় ১৪৭ রানে। উইল ইয়াংয়ের (৫৪)ক্যাচ ধরে অভিষেকে যাত্রা শুরু করেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। লাথাম ২৭৮ বলে ২৮ চারে ১৮৬ রান করে আছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির অপেক্ষায়। তার এ রান আবার নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসে চতুর্থ দিন করেছিলেন ২২২ রান। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় দিন রস টেলর করেছিলেন ২০৯ রান। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টের প্রথম দিনই ব্রান্ডন ম্যাককালাম করেছিলেন ১৯৫ রান। সবাইকে ছাড়িয়ে লাথাম নিজেকে নিয়ে যেতে পারেন সবার উপরে। ১৪৮ বলে ১ ছক্কা ও ১০ চারে ৯৯ রান নিয়ে কনওয়ে আছেন ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির অপেক্ষায়। প্রথম ইনিংসে তিনি করেছিলেন ১২২ রান।
এমপি/এসএন