মাঠে না নেমেই নাঈমের অন্যরকম সেঞ্চুরি
সেরা একদশে জায়গা করে নিয়েই অনন্য এক রেকর্ডের মালিক বনে গেলেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ। মাঠে নামার আগেই করে ফেলেছেন সেঞ্চুরি। তার এই সেঞ্চুরি আবার ২২ গজে কিংবা ব্যাট হাতে নয়। সেরা একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি বাংলাদেশের শততম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস গড়া টেস্টে মাহমুদুল হাসান জয় চতুর্থ দিন খেলা শুরুর আগে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ে দল থেকেই ছিটকে যান। হাতে নিতে হয়েছিল তিনটি সেলাই। তখনই এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় টেস্টে তার পরিবর্তে মোহাম্মদ নাঈম শেখের খেলা। কারণ মোহাম্মদ নাঈম শেখ ছিলেন দলের একমাত্র তৃতীয় ওপেনার। মাহমুদুল হাসান জয়ের ইনজুরিই তার ভাগ্যের দরজা খুলে দেয়। সেরা একাদশে পেয়ে যান সুযোগ। আর সুযোগ পেয়েই ছুঁয়ে ফেলেন দেশের হয়ে শততম টেস্ট ক্রিকেটারের মাইলফলক। যার পরিবর্তে তিনি সুযোগ পেয়েছেন সেই মাহমুদুল হাসান জয় ছিলেন নিরানব্বইতম ক্রিকেটার। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে জয়ের অভিষেক হয়েছিল। অভিষেকটা অবশ্য জয় রাঙাতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে কোনো রান করতে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ৬ রান। শুরুর সেই ব্যর্থতা তিনি ডেকে দিয়েছিলেন মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম ইনিংসে ২২৮ বলে ৭৮ রানের ধৈর্য্যশীল ইনিংস খেলে।
মোহাম্মদ নাঈম শেখ নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। কারণ তিনি মূলত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার। ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ২টি। প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলেছেন কম, মাত্র ৬টি। পারফরম্যানন্সও আহামরি নয়। এক হাফ সেঞ্চুরিতে ১৬.৬৩ গড়ে মোট রান ১৮৩। প্রথম শ্রেণির সর্বশেষ ম্যাচও খেলেছেন ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। টেস্ট দলে তার সুযোগ পাওয়া নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছিল। সেই তিনিই এখন সেরা একাদশে সুযোগ পেয়েই অনন্য উচ্চতায়। ইতিহাসের পাতায় নাম থাকবে অমুছনীয় হয়ে।
কোনো দেশের হয়ে প্রথম শততম টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন ইংল্যান্ডের জেমস উড। ১৮৯৬ সালে পোর্ট এলিজাবেথে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার অভিষেক হয়েছিল। এই তালিকায় দ্বিতীয় ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়ার জন ম্যাকলার্ন। ১৯১২ সালে অ্যাসেজ সিরিজে তার অভিষেক হয়েছিল সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ক্যারিয়ারে এই একটিই টেস্ট তিনি খেলেছিলেন। পরে আর দলে ডাক পাননি।
কেপটাউনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার শততম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয়েছিল নরমান রেইডের। ইংল্যান্ডের জন ম্যাকলার্নের মতো তিনিও অভিষেকের পর আর কোনো টেস্ট খেলেননি। ১৯৫৭ সালে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে শততম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে সেন্ট জন ম্যাকমরিসের অভিষেকে প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান।
তালিকায় পঞ্চম শততম টেস্ট ক্রিকেটার হলেন ভারতের বালকৃষ্ণ পন্দ্রিনাথ গুপ্ত। তার অভিষেক হয়েছিল চেন্নাইতে ১৯৬১ সালে। প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। নিউ জিল্যান্ডের শততম ক্রিকেটার ছিলেন পেননেল ব্রাডবার্ন। ডানেডিনে ১৯৬৩ সালে অভিষেকে তিনি পেয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
পাকিস্তানের শততম টেস্ট ক্রিকেটারের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম। না বাংলাদেশ তার প্রতিপক্ষ ছিল না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৮৪ সালে লাহোরে অভিষেক হওয়া মহসিন কামাল কিছুদিন বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
শ্রীলঙ্কার শততম টেস্ট ক্রিকেটার নুয়ান কুলাসেকারা। ২০০৫ সালে নেপিয়ারে তার অভিষেকে প্রতিপক্ষ ছিল নিউ জিল্যান্ড। বাংলাদেশের আগে সর্বশেষ শততম টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন জিম্বাবুয়ের কার্ল মুম্বা। তার অভিষেক হয়েছিল ২০১৬ সালে হারারেতে। প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা।
এমপি/এএস