আবাহনীর আরেকটি শিরোপা, রহমতগঞ্জের প্রথম
একটা সময় ঘরোয়া ফুটবল মানে ছিল হয় আবাহনী, না হয় মোহামেডান। এর বাইরে অন্য কোনো দলের শিরোপা জেতা ছিল অবিশ্বাস্য ঘটনা। মাঝে মধ্যে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ভাগবসাতো। এই পর্যন্তই। কিন্তু আবাহনী-মোহামেডানের বলয় ভাঙ্গার পর সেখানে আর নির্দিষ্ট করে কোনো দলের একাধিপত্য নেই। ফাইনালে এই দুই দলের অনুপস্থিত অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল দর্শকদের কাছে। ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই দুই দল ফাইনাল খেলতে পারেনি।
এ সময় ফাইনালে দেখা গেছে বসুন্ধরা কিংস, শেখ জামাল, শেখ রাসেল শিরোপা, মুক্তিযোদ্ধ সংসদ, চট্টগ্রাম আবাহনী, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব, টিসম বিজেএমসি, এমন কি আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ক্লাবকে। আবাহনী-মোহামেডানের পর বসুন্ধরা কিংসকে অবশ্য একাধিপত্য বিস্তার করতে দেখা গেছে। গত তিন আসরের ফাইনালিষ্ট তারা। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও পরের দুইবারের চ্যাম্পিয়ন তারা। কিন্তু এবার তারা আসরের শুরু থেকে নেই। তাই হ্যাটট্টিক শিরোপার জন্য আর চেষ্টা করতে পারেননি। এবার ফাইনাল খেলবে রহমতগঞ্জ। প্রতিপক্ষ অবশ্য আবাহনী। আগামীকাল কমলাপুর বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বিকেল ৫টায় শুরু হবে খেলা।
এবারের ঘটনাবহুল ফেডারশেন কাপ সব বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। অথচ আসর শুরু হওয়ার আগেই বসুন্ধরা কিংসসহ তিন দল খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সরে দাঁড়িয়েছিল। এতে করে আসরের গুরুত্ব অনেক কমে গিয়েছিল। কিন্তু কয়েকটি খেলা এমন উত্তেজনাপূর্ণ ছিল তিন দল যে খেলছে না এটা অনেকটা আড়ালে পড়ে যায়। টাইব্রেকারে আবাহনী-শেখ রাসেলের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ, মোহামেডান-রহমতগঞ্জ কিংবা আবাহনী-সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের উত্তেজনাপূর্ণ নান্দনিক সেমিফাইনাল সবার নজর কেড়েছিল।
আবাহনী এবার নিয়ে ২১ বার ফাইনাল খেলবে। যেখানে তারা শিরোপা জিতেছে ১৩ বার। এর মাঝে দুইবার যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ছিল মোহামেডানের সঙ্গে। সর্বশেষ ফাইনাল খেলেছিল ২০১৮ সালে। বসুন্ধরাকে হারিয়ে শেষবারের মতো চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল। রহমতগঞ্জের এটি দ্বিতীয় ফাইনাল। ২০১৯-২০ সালে তারা প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলে হেরেছিল বসুন্ধরা কিংসের কাছেই।
কালকের ম্যাচে আবাহনী ইনজুরির কারণে দলের গুরুত্বপূর্ণ দুজন বিদেশি ফুটবলারকে পাবে না। একজন হলেন ব্রাজিলের ডার্লিংটন। তিনি সেমিতেও খেলতে পারেননি। সেমিতে রাফায়েল ইনজুরির কারণে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ফুটবলারের অনুপস্থিতি ফাইনালের মতো খেলায় মোটেও ভাবাচ্ছে না আবাহনীর পর্তুগীজ কোচ মারিও লামোসকে। তিনি বলেন, ‘চোট নিয়ে আমি খুব বেশি চিন্তিত নই। আমি মনে করি কঠিন ম্যাচগুলো খেলোয়াড়দের পরখ করে নিতে আরও সাহায্য করে। আমি মনে করি না আমাদের মাঝ মাঠে বড় কোনো সমস্যা আছে।’
সেমিতে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে ১২০ মিনিট খেলার ধকল সামলে উঠে ফাইনালের জন্য সৈনিকদের পুরোপুরি প্রস্তুত করে তোলার দিকে জোর দিয়েছেন বেশি। লামোস বলেন, ‘দুই দিন আগে আমরা সাইফ স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলেছি। রিকভারিটা এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেহেতু মাঝে খুব বেশি সময় পাইনি। এ কারণে রিকভারির দিকে এবং ফাইনালের জন্য ছেলেদের শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি।’
কোচের সাথে একমত পোষণ করে আবাহনীর অধিনায়ক নাবীব নেওয়াজ জীবন বলেন, ‘কোচও ললেন আমরা আসলে অনেক ক্লান্ত। দুই দিন পর পর খেলা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত রিকভার করার জন্য। কাল আমরা ইনশাল্লাহ আমরা মাঠে যাব জয়ের জন্য।’
এদিকে কঠিন সব বাঁধা পার হয়ে ফাইনালে উঠে এসেছে রহমতগঞ্জ। কোয়ার্টার ফাইনালে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মতো দলকে ৪-৩ গোলে হারানোর পর সেমিতে মোহামেডানকে হারিয়েছিল ২-১ গোলে। আবার গ্রুপ পর্বে শেখ জামালের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছিল। পরে হেরেছিল টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে।
ফাইনাল নিয়ে কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী বলেন, ‘যে তিনটা ম্যাচ খেলে আমরা ফাইনালে এসেছি, তারা তিন দলই দেশের কঠিন প্রতিপক্ষ। এখন আমাদের প্র্রতিপক্ষ আবাহনী, আমি ছেলেবেলায় আবাহনী-মোহামেডান খেলা দেখতাম। বাংলাদেশের ফুটবল বলতে আবাহনী-মোহামেডান; এখন তো অনেক করপোরেট দল এসেছে। আবাহনী অনেক ভালো দল, তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলে। আমরা চেষ্টা করব ভালো একটা খেলা উপহার দিয়ে ট্রফি আদায় করা যায় কি না।’
দলের অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান কিরন বলেন, ‘আবাহনী আমাদের কাছে ফেবারিট। যেহেতু ফাইনাল ম্যাচ, ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে এসে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। আবাহনীর শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে কাজ করছি। জমজমাট লড়াই দেখতে পারবেন ইনশাল্লাহ।’
এমপি/এসআইএইচ