বাংলাদেশে-নিউ জিল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট কাল
ভয়ডরহীন বাংলাদেশ
দুর্গম গিরি, কান্তার মরু, দুস্তর পারবার
লংঘিত হবে রাত্রি নিশিতে যাত্রীরা হুশিয়ার-
ভয় কেটে গেছে। আর হুশিয়ারও থাকতে হবে না। কারণ নিউ জিল্যান্ড নামক দুর্গম গিরি বাংলাদেশ পাড়ি দিয়েছে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। রাত্রি নিশিতে নয়, সূর্য্যরে উজ্জ্বল আলোর বিচ্ছুরনের মাঝে বাংলাদেশ জয় করেছে ২২ গজের কান্তার মরু। এবার মিশন ক্রাইস্টচার্চ। আরেকটি সোনালী ভোরের প্রত্যাশায় ১১ যোদ্ধার লড়াই শুরু হবে আগামীকাল ভোর ৪টা থেকে।
ক্রাইস্টচার্চ নামটি শুনলেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের হৃদযন্ত্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। এর কারণ কিন্তু ২২ গজে নিউ জিল্যান্ডের হুংকার নয়। ২০১৯ সালে জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। অল্পের জন্য প্রাণ বেঁচে গিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। পরে টেস্ট না খেলেই দেশে ফিরে এসেছিল দল। ক্রাইস্টচার্চে যখনই বাংলাদেশ দল যায়, তখন ভয়াবহ এই স্মৃতি অন্তর কাঁপিয়ে দেয়। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে টেস্ট জিতে বাংলাদেশ যেমন ২২ গজে নিউ জিল্যান্ড ভীতি দূর করেছে, এবার ক্রাইস্টচার্চেরও সেই ভয়ংকর ভয়ও দূর করার পথে। কারণ এবার এখানেই ছিল বাংলাদেশের প্রথম আস্তানা। তারপর গিয়েছিল মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। সেখানে বিজয় নিশান উড়িয়ে আবার এসেছে ক্রাইস্টচার্চে। ২০১৯ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশ ২০২১ সালেও এখানে এসে একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অন্তরে যতো রকমের ভয়-শঙ্কা বিদ্যমান ছিল, তা কেটে গেছে। এখন শুধুই নতুন নতুন রাঙা ভোরের সন্ধান পেতে চায় মুমিনুল বাহিনী। ক্রাইস্টচার্চ হতে পারে আরেকটি লগন!
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয় গোটা ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন ফেলেছে। এই জয়কে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের এখন পর্যন্ত সেরা প্রাপ্তি। কারণ সাদা পোশাকে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্য খুব একটা নেই। ঘরের মাঠে স্পিনার দিয়ে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে ঘায়েল করেছিল। সেটিই ছিল মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের আগ পর্যন্ত সেরা। এ ছাড়া দেশের বাইরে শ্রীলঙ্কা, ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় থাকলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের শততম টেস্টে জয় পাওয়া ছিল আলাদা মযার্দার। কিন্তু নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশনে নিউ জিল্যান্ড ‘বধ’, এ যেন আকাশ কুসুম ঘটনা। বাংলার ১১ যোদ্ধারা সেই অসম্ভবকে মাটিতে নামিয়ে এনেছেন। এবার আরেকটি আকাশ কুসুমের পেছনে তারা ছুটছেন। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়। তা ক্রাইষ্টার্চ টেস্ট জিতেই। যদি এবারও বাংলাদেশ স্বপ্নকে বাস্তবে নামিয়ে আনে, তাহলে তা হবে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করে! কী ভয়ংকর স্বপ্নই না? কিন্তু প্রথম টেস্ট জেতা বাংলাদেশের ১১ যোদ্ধার কাছে এখন আর কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। অসম্ভবকে সম্ভব করাই যেন তাদের কাজ। কে জানে ক্রাইস্টচার্চে কী অপেক্ষা করছে?
ক্রাইস্টচার্চে নিউ জিল্যান্ডের শুধুই সুখ স্মৃতি গাঁথা। ২০১৬ সালে তারা সর্বশেষ হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে। এরপর শুধুই জয়ের কাব্য। একে একে হারিয়েছে ইংল্যান্ডসহ উপমহাদেশের ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কাকে। ২০১৭ সালে তাদের হারের তালিকায় ছিল লাল-সবুজের দেশটিও। কিন্তু মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জিতে বাংলাদেশ এখন ভয়ডরহীন। নিউ জিল্যান্ডের সবুজ গালিচা দেখলে আগে যেখানে আতকে উঠত, এখন সেখান থেকে ফায়দা নেয়ার রণ পরিকল্পনা করে। ভাবনাটা এমন-তারা পারলে, আমরা পারবো না কেন? মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউ জিল্যান্ড চার পেসার নিয়ে যা পারেনি বাংলাদেশ তিন পেসার নিয়ে তা করে দেখিয়েছে। ক্রাইস্ট্চার্চের হুগলি ওভালে নিউ জিল্যান্ডর পেসারা যদি আগুন জ্বালাতে পারে, তাহলে এবাদত-তাসকিন- শরিফুলরা চেয়ে চেয়ে দেখবেন না। তারাও পাল্টা আগুন জ্বালানোর জন্য প্রস্তুত। নিউ জিল্যান্ড সফরে দলে থাকার পরও পরে ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নিয়ে না যাওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোষ্টার বয় সাকিব আল হাসানের কথায় ছিল সে রকমই ইঙ্গিত। শুক্রবার একটি মুঠো ফোন প্রতিষ্ঠানের ‘দূত’ হিসেবে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ক্রাইস্টচার্চে ওদের এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, আমাদের বোলারদেরও খেলতে হবে।’
কোচ রাসেল ডমিঙ্গোতো বলেই দিয়েছেন এই টেস্টে চাপে থাকবে নিউজিল্যান্ড। এখানকার কন্ডিশন একটু আলাদা। উইকেট সবুজ হলেও বাংলাদেশ ভয় পাবে না। বরং আমাদের পেসাররা এমন কন্ডিশনে বোলিং করতে উদগ্রীব হয়ে আছেন।’ তিনি বলেন, ‘ নিউজিল্যান্ড খুবই ভালো দল। তারা প্রথম টেস্টে হেরে ব্যথিত। যে কারণে দ্বিতীয় টেস্টে তারা একটু হলেও নার্ভাস থাকবে। আবার দুই টেস্টের মাঝে বিরতিও খুব একটা পায়নি। তারপরও দুই/একটি পরিবর্তন এনে তারা তাদের তাদের সেরা খেলাটাই খেলতে চাইবে। চাইবে জিতে সিরিজ ড্র করতে।’ কিন্তু তা কী তিনি হতে দেবেন। জেতার জন্য যে তিনিও লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের তিন পেসার খুবই উঁচু মানের। তারা খুবই আত্মবিশ্বাসী। আশা করছি টেস্টের শুররুতে বোলিং করে কিছু উইকেট নেয়া সম্ভভ হলে আশা করি, আমরা তাদের হারাতে পারব।’
মাহমুদুল হাসান জয় ইনজুরিতে না পড়লে বাংলাদেশ দল অপরিবর্তিত একবাদশ নিয়েই মাঠে নামতো। কিন্তু তা আর এখন সম্ভব হচ্ছে না। জয়ের পরিবর্তে মোহাম্মদ নাঈম শেখকে দেখা যাবে সাদমান ইসলামের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন উদ্বোধনী জুটি হয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বাংলাদেশকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছিল টস জয়। ক্রাইস্টচার্চেও এই টেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবুজের গালিচায় স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরন করতে হলে যে কোনো অধিনায়কই চাইবেন টস জিতে বোলারদের হাতে বল তুলে দিতে। তিনি বলেন, ‘এই টেস্টে টস জেতা অনেক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন বলের ফায়দা নেয়ার জন্য প্রথম দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে দলই টস জিতবে তারাই বোলিং নিতে চাইবে।’
এমপি