মেলবোর্নে দৃষ্টি রেখে সিডনিতে নিউজিল্যান্ডের সামনে পাকিস্তান
সাফল্য পেতে চেষ্টার বিকল্প নেই কিন্তু ভাগ্যের ও সহায়তাটা খুব বেশি প্রয়োজন পড়ে। সিডনিতে আগামীকাল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে পাকিস্তান।
কিন্তু পাকিস্তান যে সেমিফাইনাল খেলবে, এমন সম্ভাবনা কি আদো ছিল। যে দল টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে যায় ,সেখান থেকে সেমিফাইনালে খেলার কথা কেউ ভুলেও হয়তো ভাবেননি। না ভাবারই কথা। কিন্তু কথায় বলে না ‘কপালের লিখন যায় না খণ্ডন’। সব সমীকরণ মিলিয়ে পাকিস্তান ঠিকই সেমিফাইনালে।
তবে পাকিস্তান নিজে কিন্তু এই সমীকরণ মেলাতে পারেনি। তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। যে ম্যাচ জিতলেই দক্ষিণ আফ্রিকা চলে যাবে সেমিফাইনালে, সেই ম্যাচেই তারা হেরে যায় নেদারল্যান্ডসের কাছে। দক্ষিণ আফ্রিকার এই হারে পাকিস্তানের সেমিতে যাওয়ার দরজা সরাসরি খুলে যায়। সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশেরও। ‘যদি’ উঠে গিয়ে দুই দলের ম্যাচটি হয়ে ওঠে অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনাল। সেই ম্যাচ জিতে পাকিস্তান সেমিফাইনালে। অথচ দক্ষিণ আফ্রিকা যদি নেদারল্যান্ডসের কাছে হারতো, তাহলে পাকিস্তান জিতেও কোনো লাভ হতো না ।তারা এখন দেশে থাকত।
পাকিস্তানের এই উত্থান সবাইকে মনে করে দিচ্ছে ১৯৯২ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ইতিহাসকে। নিশ্চিত হারা ম্যাচ বৃষ্টির কল্যাণে জিতে পাকিস্তান উঠে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। তারপর সেখানে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে । তারপর ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন। ইমরান খানের পাকিস্তানের ইতিহাস রচনা। এবার বাবর আজমের পাকিস্তানের সামনেও একই সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গিয়েছে। এবারও তাদের সামনে নিউজিল্যান্ড। ১৯৯২ সালের মতন সেই সিডনিতেই সেমিফাইনাল। এখানে সাফল্য পায় তাহলে ফাইনাল। ফাইনালে কিন্তু আবার ইংল্যান্ডকেই পেতে পারে। কারণ, দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে খেলবে ইংল্যান্ড।
১৯৯২ থেকে ২০২২-সময়ের ব্যবধানে ৩০ বছর । অনেক কিছুই কাকতলীয়ভাবে মিলে যাচ্ছে। যেমন প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডতো আছেই। আবার সেমিফাইনালের খেলাও সেই সিডনিতেই। ৯২ সালের মতো এবারের নিউজিল্যান্ডও আছে দারুণ ছন্দে। দুরন্ত ছন্দে থাকা মার্টিন ক্রোর নিউজিল্যান্ডকে বধ করেছিল ইমরান খানের পাকিস্তান, এবার বাবর আজমের পাকিস্তানকে একিই কাজ করতে হবে কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
প্রায় একে মাসের ব্যবধানে দুই দলের এটি হবে চতুর্থ মোকাবিলা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে নিউজিল্যান্ডে তিন জাতির আসরে খেলেছিল এই দুই দেশ। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশ। ডাবল লিগ পদ্ধতির আসরে দুই দল এক বার করে জয়ী হয়েছিল পরস্পরের বিপক্ষে। কিন্তু ফাইনালে গিয়ে পাকিস্তানের কাছে শিরোপা গচ্ছা দিয়েছিল নিউজিল্যান্ডে। আর ফাইনাল মানেই যেন নিউজিল্যান্ডর হার। এর আগে তারা আইসিসিরি সর্বশেষ তিন ফরম্যাটের তিনটি আসরেই ফাইনালে উঠে শিরোপা জিততে পারেননি।
এবরের আসরে নিউজিল্যান্ড অবলীলায় সেমিতে উঠে এসেছে। এখানে তারা পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু সার্বিক মুখোমুখিতে আবার তারা পিছিয়ে। ২৮ বারের মোকাবিলাতে পাকিস্তানের জয় ১৭ বার। নিউজিল্যান্ড জিতেছে ১১ বার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সাক্ষাৎয়েও পাকিস্তান এগিয়ে। ৬ বারের মোকাবিলাতে পাকিস্তানের জয় ৪ বার। নিউজিল্যান্ড জিতেছে ২ বার। সাফল্যের বিবেচনাতেও এগিয়ে পাকিস্তান। আগের সাত আসরের ২টিতেই তারা খেলেছে ফাইনাল। একবার হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। সেমি ফাইনাল খেলেছে ৬ বার। নিউজিল্যান্ড এখনো শিরোপা জিততে পারেনি। শুধুমাত্র গতবারই তারা প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। সেমিতে উঠেতে পেরেছে ৪ বার।
এ সবই অঙ্কের হিসেবে। মাঠের হিসেব আলাদা। বেশি নম্বর পেতে হলে, যেমন পরীক্ষার ভালো করে লিখতে হয়, তেমনি ২২ গজের পরীক্ষায়ও জিততে হলে, খেলতে হবে ভালো। এর কোনো বিকল্প নেই। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন পাকিস্তানকে যথেষ্ট শক্তিশালী দল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তানের কোচ ম্যাথু হেইডেন ১৯২২ সালের সাফল্যোর স্মৃতিকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন।
এমপি/এমএমএ/