জয়ের পরিবর্তে মোহাম্মদ নাঈম
সাধারণত জেতা ম্যাচের সেরা একাদশে পরের ম্যাচে কোনো পরিবর্তন আনা হয় না যদি কোনো ক্রিকেটার ইনজুরিতে না পড়েন। রবিবার (৯ জানুয়ারি) ক্রাইস্টচার্চে শুরু হতে যাওয়া নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে বাংলাদেশ ‘যদি’র খপ্পরে পড়েছে।
প্রথম টেস্টে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েছেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট নিয়ে এবাদত আলো ছড়ানোর আগে সমস্ত আলো ছিল মাহমুদুল হাসান জয়ের উপর। তার ২২৮ বলে ৭৮ রানের ইনিংসের মাঝে ফুটে উঠেছিল একজন জাত টেস্ট ক্রিকেটারের প্রতিচ্ছবি। সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছিল এই ইনিংস। কিন্তু ফিল্ডিং করতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ে হাতে তিনটি সেলাই পড়েছে। যে কারণে তিনি দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে পারেননি। এমনকি ছিটকে গেছেন সিরিজ থেকেও। দ্বিতীয় ইনিংসে তার পরিবর্তে উদ্বোধন করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শান্ত প্রথম ইনিংসে ওয়ান ডাউনে ব্যাটি করে ৬৪ রান করেছিলেন। তখনই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল জয়ের পরিবর্তে দ্বিতীয় টেস্টে খেলবেন কে?
বাংলাদেশ থেকে নিউ জিল্যান্ডের দূরত্ব প্রথম টেস্টের সঙ্গে দ্বিতীয় টেস্টের সময়ের ব্যবধান এবং সর্বোপরি নিউ জিল্যান্ডে কোয়ারেন্টিনের কারণে টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে জয়ের পরিবর্তে কাউকে চেয়ে পাঠানো হয়নি। এখন নিউ জিল্যান্ড থাকা বাকিদের মাঝ থেকে একজনকে বেছে নিতে হবে।
প্রথম টেস্টে যে ১১ জন খেলেছেন সেখান থেকে বাকি আছেন আর সাতজন। এই সাতজনের মাঝে ব্যাটসম্যান আছেন মাত্র দুজন, মোহাম্মদ নাঈম শেখ এবং ফজলে মাহমুদ রাব্বি। অন্যরা হলেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান, পেসাার আবু জায়েদ রাহী, সৈয়দ খালেদ আহমেদ,শহিদুল ইসলাম এবং স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ খেলেছিল আট ব্যাটসম্যান (একজন স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ) নিয়ে। মূলত নিউ জিল্যান্ডের ভয়ংকর পেস অ্যাটাকের কথা বিবেচনা করেই এতো লম্বা ব্যাটিং লাইন ছিল। বোলার ছিলেন চারজন। তিন পেসারের সঙ্গে এক স্পিনার। যেখানে বাংলাদেশ দারুণ সফল হয়েছিল। চার বোলার মিলেই নিউ জিল্যান্ডকে উভয় ইনিংসে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন। অপরদিকে ব্যাটসম্যানরাও দলকে ১৩০ রানের লিড এনে দিয়েছিলেন ৪৫৮ রান করে।
ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নিউ জিল্যান্ড সিরিজে সমতা আনতে মরিয়া হয়ে উঠবে। পিসে সবুজের আচ্ছাদন। তার মানে পেসারদের রাম রাজত্ব তৈরি হবে। পূর্বে এ রকম পিচ দেখলেই বাংলাদেশ ভড়কে যেতো। ব্যাটসম্যানরা হাবুডুবু খেতেন, আর পেসাররাও ফায়দা নিতে পারতেন না। এবার অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। অন্তত মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে টেস্টে তার প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে। তারপরও বাংলদেশ চাইবে এই টেস্ট যাতে না হারে। তাই ব্যাটিং লাইন লম্বাই রাখবে। আর সে হিসেবে ব্যাটসম্যান আটজনই থাকবে। সে ক্ষেত্রে মোহাম্মদ নাঈম শেখ অথবা ফজলে মাহমুদ রাব্বির যে কেউ সেরা একাদশে ঢুকতে পারেন। দু’জনেরই কারও টেস্ট অভিষেক হয়নি। তবে রঙিন পোষাকে অভিষেক হয়েছে। এখানে মোহাম্মদ নাঈমের সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, তিনি ওপেনার। ওয়ানডেতে অভিষেক হলেও তা ছিল বিভীষিকাময়। ২০১৮ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকে ম্যাচে শুন্য রানে আউট হয়েছিলেন। পরের ম্যাচও খেলতে নেমেই একই পরিণতি বরন করেছিলেন। এরপর দলে ডাক পেলেও সেরা একাদশে কখনো খেলার সুযোগ হয়নি। দলের সাথে থাকা টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন মোহাম্মদ জানিয়েছেন নাঈমের খেলার সম্ভাবনাই বেশি।
মোহাম্মদ নাঈমের আবার সাদা পোষাকের ক্রিকেটে ঘরোয় আসরেও সে রকম ভালো কোনো অভিজ্ঞতা নেই। মাত্র ৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে রান করেছেন ১৮৩। গড় ১৬.৬৩। হাফ সেঞ্চুরি একটি। সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিলেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশার সুমন ঢাকাপ্রকাশকে জানিয়েছেন যেহেতু নাঈমই দলের তৃতীয় ওপেনার, তারই খেলার সম্ভাবনা বেশি। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সাদমান ইসলামের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তর ওপেন করেছিলেন। তাদের কোনো সম্ভাবান আছে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি তা উড়িয়ে দেন। বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে শান্ত তখন ওপেন করেছিল। তাকে তিন থেকে সরানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। অধিনায়কও চান শান্ত তিনেই ব্যাটিং করুন। তাই সাদমানের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন ওপেনিং জুটি দেখা যাবে।
এমপি/এমমএ/