দক্ষিণাঞ্চলের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন মধ্যাঞ্চল
বিসিবি দক্ষিণাঞ্চলের মুখের খাবার কেড়ে নিল ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল। নিশ্চিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে তারা। ২১৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৬৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে মধ্যাঞ্চল। নিশ্চিত হার। সেই হার কতো বড় ব্যবধানে হতে পারে তার অপেক্ষায় সবাই। সেখানে ঘটল নাটকীয়তা। রোমাঞ্চকর। শুভাগত হোমের (১১৪*) সেঞ্চুরির সঙ্গে জাকের আলীর অপরাজিত ৪১ রানে আর কোনো উইকেটই হারাতে হয়নি মধ্যাঞ্চলকে। ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতে গত পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণাঞ্চলের ক্রিকেটারদের বাকরুদ্ধ করে নিজেরা উল্লাসে মেতে উঠে। মধ্যাঞ্চলে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০১৫-১৬ সালে।
মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে বিসিএলের ফাইনাল ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। দুলেছে পেন্ডলামের মতো। একবার দক্ষিণাঞ্চলের দিকে, আরেকবার মধ্যাঞ্চলের দিকে। এই দোলা পঞ্চম ও শেষ দিন পর্যন্ত ছিল। এমনকি মধ্যাঞ্চলের ৬৮ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর শুভাগত ও জাকের আলী মিলে রানের চাকা এগিয়ে নিতে থাকে। কারণ যেকোনো সময় ভেঙ্গে যেতে পারে এই জুটি। আর এই জুটি ভেঙ্গে গেলে লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের পরবর্তী করণীয় কঠিন হয়ে যেতো?
চতুর্থ দিনই ব্যাকফুটে ছিল মধ্যাঞ্চল। ৩ উইকেটে ২৬ রান নিয়ে খেলতে নামে। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৯২ রানের। আশা-ভরসার প্রতিক হয়েছিলেন বিসিএলে দারুণ ফর্মে থাকা সৌম্য সরকার। সঙ্গে ছিলেন আরেক ইনফর্ম ব্যাটসম্যন সালমান হোসেনও। কিন্তু দিনের শুরুতেই সৌম্য সরকার ব্যক্তিগত কোনো রান যোগ না করেই মেহেদী হাসান রানার বলে ফিরে গিয়ে মধ্যাঞ্চলের চাপ বাড়িয়ে দেন। সেই চাপ আরো ঘনীভূত হয়। তাইবুরও ব্যক্তিগত ৩ ও দলীয় ৪৭ রানে ফিরে যায়। তাকেও আউট করেন মেহেদী হাসান রানা। মধ্যাঞ্চলের আশা নিভু নিভু হয়ে আসে। দলীয় ৬৮ রানে যখন সালমান(৩৭) কামরুল ইসলাম রাব্বির শিকার হন, তখন মধ্যাঞ্চলের সব সম্ভাবনাই শেষ হয়ে যায়! কিন্তু এসব হিসেবে-নিকেশে আবার ছিলেন না প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ক্যাপ্টেন শুভাগত হোম। প্রথম ইনিংসে ১৬ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর মোহাম্মদ মিঠুনকে(২০৬) নিয়ে দলকে লিড এনে দিয়েছিলেন তিনি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে তারা যোগ করেছিলেন ২৮৩ রান। শুভাগত করেছিলেন ১১৬ রান। এবার তিনি পেয়ে যান উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান জাকের আলীকে। জাকের আলী প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ৫৩ রান। এই দুজন মিলে প্রথম ধস ঠেকান। দলীয় সংগ্রহ শতরান পার করান। এরপর সেই রানকে ধীরে ধীরে দ্বিশত রানও অতিক্রম করান। তখন পেতে থাকেন জয়ের ঘ্রাণ। অনেক চেষ্টা করেও দক্ষিণাঞ্চলের অধিনায়ক ফরহাদ রেজা এই জুটি ভাঙ্গতে পারেননি। চুম্বকের মতো ক্রিজে আটকে থাকা শুভাগত ও জাকের আলী পরে দলকে জয়ী করে সতীর্থদের কাঁধে চড়ে উল্লাস করতে করতে মাঠ ছাড়েন। তারা জুটিতে ১৫৩ রান যোগ করেন।
শুভাগত ৬৩ বলে ফিফটি করার পর শতরান করেন ১১২ বলে রিশাদকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। জয়সূচক রান আসে জাকেরের ব্যাট থেকে। নাসুম আহমেদকে চার মেরে। শুভাগত ১২১ বলে ১৩ চারও ২ ছক্কায় ১১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। জাকের ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। যদিও শুভাগত হোমের চেয়েও বেশি ১১৪ বল খেলেন। তার ইনিংসে ছিল ৫টি চারের মার।
দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন শুভাগত হোম। আসরের সেরা হয়েছেন এক ডাবল সেঞ্চুরি ও এক সেঞ্চুরি করা মোহাম্মদ মিঠুন ও তিন সেঞ্চুরি করা জাকির হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল: ৩৮৭ ও ২৬৮।
ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল: ৪৩৮ ও ২২১/৬, (আগের দিনের ২৬/৩) ওভার ৬৩.৫ ( শুভাগত হোম ১১৪*, জাকের আলী ৪১*, সালমান হোসেন ৩৭, নাসুম আহমেদ ২/ ৪৩, ফরহাদ রেজা ২/ ৫০)।
এমপি/এসআইএইচ