শুন্য থেকে জয়: মাশরাফি
নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডকে হারানো চাট্টিখানি কথা নয়। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। যারা ২০১১ সালের পর নিজেদের মাটিতে কোনো টেস্ট হারেনি। এমন একটি দলেকে অনভিজ্ঞ বাংলাদেশ দাপুটে খেলে হারিয়েছে ৮ উইকেটে। বাংলাদেশের এমন জয়ে ক্রিকেট বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসে টাইগাররা। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাসেজ চলাকালীন স্কোর বোর্ডে ডিসপ্লে হয় বাংলাদেশ-নিউ জিল্যান্ড টেস্টের স্কোর কার্ড। এমন জয়কে বাংলাদেশের অনেকে অন্যতম সেরা জয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি এর সঙ্গে একমত নন। তিনি এটিকে বাংলাদশের সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জানিয়েছেন, বাংলাদেশ শুন্য থেকে পেয়েছে জয়।
বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) মিরপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যতম সেরা জয় না বলে, বলা উচিৎ এটাই সর্বোচ্চ জয় (সাফল্য)। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটের কথা চিন্তা করলে তো অবশ্যই। তাও নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে, যখন কিনা নিউজিল্যান্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়ন। এটা তো দারুণ ব্যাপার। অনেক খেলোয়াড় নেই। এখান থেকে ভাবলে শূন্য থেকে এত বড় জয় দারুণ ব্যাপার।’
মাশরাফি শুধু এখানেই এভাবে সরাসরি কথা বলেননি। আরো অনেক কিছু নিয়ে সরাসরি কথা বলেছেন। যেমন দল হিসেবে বাংলাদেশের খেলা নিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা দল হিসেবে ভালো খেলেছে। এটা সোজাসাপ্টা বলতে পারি। আর ব্যাটিং বোলিং খুব ভালো করেছে। ক্যাচিং যদি দেখেন, দারুণ কিছু ক্যাচ নিয়েছে। ম্যাচ জিততে গেলে এগুলো তো আসল। দল নিয়ে সমালোচনা-আলোচনা হচ্ছিল। সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো... মুমিনুল আছে, সুজন ভাই গেছে ওখানে। যারা আছে তারা হয়তো দলকে প্রেরণা যুগিয়েছে যে হারানোর কিছু নেই। নিজেদের ওপর দারুণ এক বার্তা তৈরি করতে পেরেছে। কে আছে কে নেই এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, নিজেদের আত্মবিশ্বাস থাকলে যেকোনো জায়গায় যেকোনো কন্ডিশনে ম্যাচ জেতা সম্ভব। এটা দারুণ এক বার্তা নিজেদের জন্য ।
টেস্টে পেসারদের নিয়ে প্রায় সব সময়ই কম-বেশি সমালোচনা হয়েছে। এখানেও মাশরাফি সরাসরি কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, টেস্ট ক্রিকেটে পেসাররা বোলিং করার সুযোগ কম পেয়ে থাকে। স্পিনাররা বেশি বোলিং করে। টেস্টের তুলনায় টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ক্রিকেটে পেসাররা এতো খারাপ বোলিং করে না বলও জানান তিনি।
মাশরাফি বলেন, ‘পেস বোলারদের নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। অথচ টি-টোয়েন্টি দেখুন, পেসাররাই ভালো করে আসছে। তাসকিন ভালো করেছে। টেস্টে পেসাররা তেমন প্রভাব রাখতে পারেনি। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে পেসাররা কখনও এত খারাপ করেনি। টেস্টে কাজ করার সুযোগ আছে। কাজ করলে ফলাফলও আসছে। তাসকিনের দিকে তাকান। এবাদত এমনি এমনি ভালো করেনি। ও লম্বা সময় ধরে খেলছে এবং ওকে টেস্টে কন্সিডার করা হয়েছে। তাকে নিশ্চিত করা হয়েছে তুমি খেলছ। সে জানে এটা আমার ফিউচার। এখানে সার্ভিস দিতে হবে। একটা খেলোয়াড়ের সেট হতেও সময় লাগে। গত বিপিএল থেকে এবাদত দারুণ বোলিং করছে। টেস্টে হয়তো অনেক সময় উইকেট পক্ষে ছিল না। রাহীও (আবু জাহেদ) অনেক দিন ধরে সার্ভিস দিচ্ছে। যখন জায়গাটা পায় তখন ফলাফল আসে। বাংলাদেশে খেলা হলে স্পিনাররা বেশি বোলিং করে। তবে মিরপুরের উইকেটে পেসারদের ভালো করার সুযোগ থাকে। কতটুকু আস্থা আপনার আছে এটাও প্রভাব রাখে। আপনার আস্থা না থাকলে পেসারের আস্থাও কমে যায় নিজের ওপর।
এ সময় দলপতি মুমিনুলের প্রশংসায় পঞ্চমুখী ছিলেন মাশরাফি। টেস্ট জেতার পর মুমিনুল তাকে ফোনও দিয়েছিল। কিন্তু তিনি রিসিভ করতে পারেননি। পরে ফোন করে কথা বলবেন জানিয়ে মাশরাফি বলেন,
‘মুমিনুল কল দিয়েছিল, কিন্তু দুই দেশের সময়ে ফারাক থাকায় কথা হয়নি। আজ দুই-একজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করব। কথা বলা জরুরি না। জরুরি হলো ওরা খেলা উপভোগ করছে। এত বড় জয় এসেছে। এটা বাংলাদেশের সবার জন্য বিরাট মুহূর্ত।’
মুমিনুল প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘মুশফিককে সরানোর পর সাকিব আসল। তারপর সাকিব ছিল না, তখন মুমিনুলকে করা হলো। আমি জানি না মুমিনুলও তখন প্রস্তুত ছিল কি না। তারপর এতো সমালোচনা এতো কিছু। ওখান থেকে দলটাকে গুছিয়ে এনে ও এতো বড় একটা জয় এনে দিয়েছে। পরে কি হবে এটা পরের ব্যাপার। কিন্তু তাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। এখন দলে যারা আছে, বাইরে থেকে দেখছি সাকিব-তামিম নেই মানে দলের অর্ধেক নেই। কিন্তু সে এই দলকেই বুস্ট আপ করেছে। এটা দারুণ ব্যাপার। মুশফিকও ওকে হেল্প করছে। পুরো কৃতিত্ব মুমিনুলকেই দেওয়া উচিৎ।’
নিউ জিল্যান্ডকে হারানো টেস্টে অনেক প্রশ্নের জবাবও আছে বলে জানান মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘এই টেস্ট অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। শুধু খেলোয়াড় না, বাইরের অনেকেও চাইলে অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারবে। এখানেই সব লেসন আছে ।’
এমপি/এসআইএইচ