এটা এক কথায় অবিশ্বাস্য: মুমিনুল
নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে নিউ জিল্যান্ড বধ। তাও বাংলাদেশের কাছে। যে দল সাম্প্রতিক সময়ে খুবই মন্দা সময় পার করছিল। যেন দুর্ভিক্ষ চলছিল। টেস্টে জয় নেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে জয় নেই। এক একটি হার যেন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম! চারদিকে সমালোচনার তীর!
এ এরকম একটি দলের কাছে নিউ জিল্যান্ড শিকার। যারা কি না আবার টেস্ট ক্রিকেটে ঘরের মাঠে অপরাজেয়। টানা ১৭ টেস্টে অপরাজিত। সর্বশেষ হেরেছিল ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৮ উইকেটে। এরপর একে একে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৪ টেস্ট), ইংল্যান্ড (৩ টেস্ট), বাংলাদেশ (২ টেস্ট), ভারত (২ টেস্ট), পাকিস্তান (২ টেস্ট), শ্রীলঙ্কাকে (১ টেস্ট)। তিনটি টেস্ট ড্র হয়েছিল। পরিসংখ্যান আরও আছে। ২০১১ সালের র্প উপমহাদেশের কোনো দল গিয়ে জিততে পারেনি। সর্বশেষ জিতেছিল পাকিস্তান। ২০১১ সালে তারা হ্যামিলটন জিতেছিল ১০ উইকেটে। এমন একটি দলের বিপক্ষে অনভিজ্ঞ, নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে তিন ফরম্যাটে ৩২ ম্যাচ খেলে কোনো জয় না পাওয়া, হারে জর্জরিত বাংলাদেশ দলের জয় ৮ উইকেটে। দলপতি মুমিনুলের কাছে অবিশ্বাস্যই ঠেকাচ্ছে। তিনি ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না কী অনুভব করছি। এটা এক কথায় অবিশ্বাস্য। সত্যি কথা, কাল রাতে আমি আর ঘুমাতে পারিনি আজ কি হবে সেটা ভেবে। কারণ যখন পাঁচ উইকেট পড়ে গেল, তখন মনে হচ্ছিল ওরা আরও বেশি রানও করতে পারে, কমও করতে পারে। এই চিন্তায়। এই টেস্টটা জেতার খুব গুরুত্ব ছিল।’
চতুর্থ দিন জয়ের সুবাতাস পেতে থাকলেও তখনো মুমিনুলরা ম্যাচের রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা করেননি উল্লেখ করে তিনি জানান তার কথা শুনে অনেকেই বলবে লোকটা পাগল হয় গেছে। মুমিনুল বলেন, ‘আমরা ফল নিয়ে কিন্তু চিন্তা করিনি। আমি এখন বললে হয়তো অনেকে বলবে লোকটা পাগল হয়ে গিয়েছে। আমাদের ভেতরে ছিল, প্রস্তুতিটা ভালো নেই। প্রক্রিয়া অনুযায়ী খেলি। যেমন লক্ষ্য ছিল লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করার। বোলিং একটা জায়গায় প্রসেস করবো। শেষে বিকালে কাল যখন এবাদত হঠাৎ করেই কয়েকটি উইকেট নিল, তখন আমাদের মনে হলো, এ টেস্ট জেতার জন্য যাচ্ছি।’
টেস্টের চিন্তায় মুমিনুলের যেমন আগের রাতে ঘুম হয়নি, তেমনি টার্গেট নির্ধারণ হওয়ার পর আবেগতাড়িত হননি। তিনি বলেন, ‘আজ অলআউট হওয়ার পর ক্লিয়ার হয়েছি। তবে বাড়তি উত্তেজনা কাজ করছিল না। টিভিতে দেখে থাকলে দেখবেন, আমরা কাম অ্যান্ড কুলই থাকার চেষ্টা করেছি। বল ধরে ধরে খেলার চেষ্টা করেছি। ব্যাটিংয়ে শুরুতে প্রেসারে ছিলাম। মুশফিক ভাই ওই ডাবলস (বাউণ্ডারি) নেওয়ার পরই মনে হয়েছে জিতেছি।’
নিউ জিল্যান্ডের শেষ ৫ উইকেট নেয়ার জন্য আজ সকালে তিনি বোলারদের বার্তা দিয়েছিলেন, ‘গত চার দিন আমরা যেভাবে বল করেছিলাম, সেভাবেই আমরা নিজেদের কৌশল অনুযায়ী বল করব।’
খুবই কঠিন সময়ে পাওয়া জয়ে দলের সবার অবদানের কথা উল্লেখ করে মুমিনুল এই জয় ক্রিকেটের উন্নতির একটা ‘সিম্বল’ হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলে, ‘আমাদের টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করার চিহ্ন হতে পারে এটা। পাকিস্তান সিরিজ হারার পর সবার ভেতরে দলীয়ভাবে আরো উন্নতি করার জন্য তাগাদা ছিল। ব্যাটিং, বোলিং সবক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে সহায়তা করেছে। যখনই কেউ একটু খারাপ করেছে বা ক্যাচ মিস করেছে, বাকিরা তাকে সমর্থন দিয়েছে ভালো করতে।’
এমপি/এসএ/