বাংলাদেশের লড়াকু পূঁজি
বাজির ঘোড়ায় বাংলাদেশের প্রাথমিক সাফল্য এসেছে সাব্বির রহমান পারেননি, কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজ পেরেছেন। দুইটি করে চার ও ছক্কায় ২৬ বলে ৩৮ রানের উড়ন্ত সূচনায় ভর করে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ১৮৩ রানের লড়াকু পূঁজি সংগ্রহ করেছে। হয় মারো, নয় মরো-এই থিউরিতে আপাতত স্বস্তি। এখন বাকি কাজ বোলারদের হাতে।
সংযুক্ত আরবি আমিরাতে বাংলাদেশের এটিই সর্বোচ্চ রান। আগের সবোচ্চ রানও ছিল এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ১৭১ রান করেও হেরেছিল ৫ উইকেটে। এর চেয়ে বেশি রান করে বাংলাদেশ টি-টোয়ন্টি ক্রিকেটে হেরেছিল একবার। সেখানেও প্রতিপক্ষ ছিল এই শ্রীলঙ্কা। ভেন্যু ছিল মিরপুর। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান করার পর শ্রীলঙ্কা সেই রান টপকে গিয়েছিল ২০ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখেই।
উদ্বোধনী জুটি নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। উদ্বোধনী জুটির এই ব্যর্থতা সংক্রমণ রোগের মতো সংক্রমতি হয়ে দলের উপরও প্রভাব ফেলে। যেখান থেকে আর বের হয়ে আসতে পারেনি। এবারের এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের কাছে প্রথম ম্যাচ হেরে খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল। যেখানে থেকে পড়লে মৃত্যু তথা আসর থেকে বিদায় ছিল অবধারিত। তাই নেওয়া হয়েছিল ঝুঁকি। ধরা হয়েছিল বাজি। ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয় চার বছর আগে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলা মেহেদী হাসান মিরাজ ও তিন বছর আগে খেলা সাব্বিরকে নিয়ে। দুইজনকেই আবার পাঠিয়ে দেওয়া হয় ওপেনিংয়ে। জুটি খুব বেশি এগোতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু দুইজনের মাঝেই ছিল আগ্রাসী মনোভাব। চার বছর পর খেলতে নামা সাব্বির তো প্রথম বলই প্যাডেল সুইপ করে বাউন্ডারি মারিয়ে অবাক করে দেন। তার এই শটে ছিল ঈস্খঢ়হু আত্মবিশ্বাস। যে কারণে দলীয় ১৯ রানে যখন সাব্বির ৬ বলে ৫ রান করে ফিরে যান, তখন ওভার ছিল ২.৫টি। অপরপ্রান্তে মিরাজ ছিল শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক। প্রায় প্রতি বলেই শট খেলার চেষ্টা করেছেন। সেখানে তিনি সফলও হন। যে কারণে পাওয়ার প্লেতে রান আসে ১ উইকেটে ৫৫। শুরুর এই মজবুত ভিতের কারণে শেষ পাঁচ ওভারে রান যোগ হয় ৬০। ডট বল হয়েছে ৪১টি। ছক্কা মারতে না পারার যে দুর্নাম ছিল,সেখানে ছক্কা হয়েছে ছয়টি। মিরাজ (২টি) আফিফ ২টি), মাহমুদউল্লাহর (১টি) সঙ্গে শেষ ওভারে তাসকিনও মেরেছেন এক ছক্কা। বাউন্ডারি হয়েছে ১৫টি। সাব্বির, মুশফিক ও শেখ মেহেদী ছাড়া সবার স্ট্রাইক রেট ছিল একশর অনেক উপরে। মোসাদ্দেকের ছিল দুইশর উপরে।
২.৫ ওভারে সাব্বির আউট হলেও মিরাজ নিজের ধরন পাল্টাননি। আক্রমণকেই হাতিয়ার বানিয়ে এগুতে থাকেন। সাকিবের সঙ্গে জুটিতে ৪ ওভারে যোগ করেন ৩৯ রান। আক্রমণ করতে গিয়েই পাওয়ার প্লে শেষ প্রথম ওভরেই তিনি বোল্ড হয়ে যান হাসারাঙ্গা ডি সিলভার বলে। মুশফিক এসে ( ৫ বলে ৪ রান) দ্রুতই ফিরে গেলেও আফিফ এসে আবার আক্রমণ শুরু করেন। এ সময় অপরপ্রান্তে সাকিব একটু ধীরে খেলে সঙ্গ দিতে থাকে। জুটিতে ২৪ রান আসে ২.৩ ওভারে। একটু ধীরে খেলার পর সাকিবও আক্রমণ শুরু করতে গিয়ে থিকসানার বলে বোল্ড হয়ে যান। সাকিব বিদায়ের পরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি গড়ে উঠে আফিফ-মাহমুদউল্লাহর মাধ্যমে পঞ্চম উইকেটে। ৬.১ ওভারে তারা যোগ করেন ৫৭ রান। ৪ বরে ব্যবধানে দুই জনেই ফিরে যান। আফিফ করেন ২২ বলে ৩৯ রান। তার ইনিংসে ছিল ২ ছক্কা ও চারটি চার। মাহমুদউল্লাহ একটি করে চার ও ছক্কা মেরে ২২ বলে করেন ২৭ রান। শেষের দিকে মোসাদ্দেক ও তাসকিন ঝড় তুললে বাংলাদেশের রানের চাকা বানের পানির মতো বাড়তে থাকে। এই দুই জনে ১১ বলে অবিচ্ছিন্ন থেকে ২৪ রান যোগ করেন। শেষ ওভারে রান আসে ১৭। মোসাদ্দেক ৯ বলে চার বাউন্ডারিতে ২৪ ও তাসকিন ৬ বলে এক ছক্কায় ১১ রান করে অপরাজিত থাকেন।
শ্রীলঙ্কার চামিকা করুনারত্নে ৩২ ও হাসারাঙ্গা ডি সিলভা ৪১ রানে নেন ২টি করে উইকেট। ১টি করে উইকটে নেন মাদুশাঙ্কা, মহেশ থিকসানা ও আশ্বিতা ফার্নান্ডো।
এমপি/এসএন