জয়-শান্তর ব্যাটে বাংলাদেশের স্বস্তির দিন
বল হাতে বোলাররা সাফল্য দেখানোর পর তাদের পথ অনুসরণ করেছেন ব্যাটসম্যানরা। ফলে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেও বাংলাদেশ আছে স্বস্তিতে। নিউ জিল্যান্ডকে ৩২৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১৭৫। ওভার খেলেছে ৬৭টি। এখনো তারা পিছিয়ে আছে ১৫৩ রানে।
প্রথমে বল হাতে সাফল্য দেখিয়েছিলেন শরিফুল-মিরাজ-মুমিনুলরা। যে কারণে নিউ জিল্যান্ড খুব বেশি দূর যেতে পারেনি। এদিকে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ব্যাটিংয়ে সে রকম সাফল্য নেই। তাদের ব্যর্থতায় বোলাররাও তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি। এবার ব্যাটসম্যানরা নিজেদের পায়ের তলার মাটি খুঁজে পেয়েছেন। তাদের দৃঢ়তায় নিউ জিল্যান্ডের কঠিন পরিস্থিতিকে জয় করতে চলেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। নাজমুল হোসেন শান্ত হাফ সেঞ্চুরি করে আউট হয়ে গেলেও মাহমুদুল হাসান জয় ক্রিজে আছেন ৭০ রানে। তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন দলপতি মুমনিুল ৮ রানে। আগামীকাল তৃতীয় দিন তারা আবার ব্যাট করতে নামবেন।
নিউ জিল্যান্ডকে ৩২৮ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশের শিবিরে ছিল স্বস্তি। কিন্তু এর বিপরীতে ছিল শঙ্কাও। কারণ স্বাগতিকদের চার পেসারদের তোপ সামলে ব্যাটসম্যানরা কতদূর যেতে পারবেন তা ছিল কোটি টাকা দামের প্রশ্ন। এর কারণ বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতা মোটেই ভালো ছিল না। দেখা যাবে বোলারদের সাফল্যের স্বস্তি পেতে না পেতেই ব্যাটসম্যানরা উইকেটে আসা-যাওয়া শুরু করেছেন। কিন্তু না এবার আর তা হতে দেননি ক্রিজে যাওয়া ব্যাটসম্যানরা। বুক চিতিয়ে তারা মোকাবেলা করেছেন নিউ জিল্যান্ডের পেস অ্যাটাক। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে ছিল হা-হুতাশ। ব্যর্থতার আরেক নাম ছিল টপ অর্ডার। আজ সেখানেই ইউ টার্ন। উদ্বোধনী জুটি মোটামুটি সফল। টপ অর্ডারও রানের দেখা পেয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের ইনিংস রোগাক্রান্ত না হয়ে পেট মোটা হতে চলেছে।
সাদমান-মাহমুদুলের উদ্বোধনী জুটি ৪৩ রানে এনে দেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ রান অনেক স্বস্তিদায়ক। কারণ টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট ক্রিকেট গত কয়েকটি ম্যাচে ওপেনার বেশ কয়েকজনকে খেলিয়েও উদ্বোধনী জুটিতে ন্যূনতম সাফল্য ছিল না। এবার সেই খরা দূর করেন। ব্যক্তিগত ২২ রানে ওয়েগনারের বল রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সাদমান। তাদের এ শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে দলের ইনিংসকে মেরামত করতে থাকেন মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দুইজনের চমৎকার বোঝাপড়াতে দলের রান বাড়তেই থাকে। কাটতে থাকে ভীতি। শক্ত হতে থাকে ভিত।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা তরুণ মাহমুদুল হাসান খেলছিলেন টেস্ট মেজাজে। নাজমুল ছিলেন কিছুটা আক্রমণাত্মক। এক সময় মাহমুদুলের রান ছিল যখন ৩০, তখন নাজমুলের ৫, সেখান থেকে হাফ সেঞ্চুরি আগে করেন নাজমুল। তাও আবার ছক্কা মেরে। ৯০ বলে ১ ছক্কার সঙ্গে ৬ চারে তিনি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন। সেখানে মাহমুদুল তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৬৬ বলে রবিন্দ্রর বলে মিড উইকেটে ঠেলে ১ রান নিয়ে। বাউন্ডারি ছিল ৫টি। দুই জনের ১০৪ রানের জুটিতে বাংলাদেশের পায়ের তলার মাটি অনেক শক্ত হয়ে উঠে। জুটি ভাঙে নাজমুল আউট হলে। ওয়েগনারে আউট সুইং করা বল নাজমুলের ব্যাটের কানায় লেগে গালিতে ইয়াংয়ের হাতে জমা পড়ে। তার ৬৪ রানের ইনিংস সাজানো ছিল ১ ছক্কার সঙ্গে ৭ চারে। নাজমুল আউট হওয়ার পর মুমিনুল এসে জুটি বাঁধেন। এ দুইজনে দিনের বাকি সময় পার করে দেন। জুটিতে তারা যোগ করেছেন ২৮ রান।
এর আগে নিউ জিল্যান্ডকে ৩২৮ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। ৫ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে খেলতে নেমে ৭০ রান যোগ করতেই পড়ে ৫ উইকেট। শেষ ৪ উইকেট পড়ে দিনের দ্বিতীয় ঘণ্টায়। আগের দিন ৩২ রান করে অপরাজিত থাকা হ্যানরি নিকোলাস ৭৫ রান করে আউট হন। ৭০ রানের ৪৩ রানই আসে তার ব্যাট থেকে। তাকে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট করেন দলপতি মুমিনুল। তিনি আগের দিন আউট করেছিলেন সেঞ্চুরিয়ান কনওয়েকেও। তবে দিন প্রথম আঘাত হানেন শরিফুল রবিন্দ্রকে আউট করে। এরপর টানা তিন উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। যেখানে তার পরপর ২ বলে ২ উইকেট ছিল। তিনি আউট করেন জেমিসন, সাউদি ও ওয়েগনারকে। তবে সাদমান লং অনে বোল্টের ক্যাচ ফেলে দিলে পরপর দুই বলে সাউদি ও ওয়েগনারকে আউট করেও হ্যাটট্রিক করতে পারেননি।
বাংলাদেশের সফল বোলার ছিলেন শরিফুল ও মিরাজ। তারা যথাক্রমে ৬৯ ও ৮৬ রান দিয়ে নেন ৩টি করে উইকেট। ৬ রানের খরচায় ২টি উইকেট নেন মুমিনুল। ৭৫ রানে ১ উইকেট নেন এবাদত।
এমপি/এসএন