ফিরে দেখা ২০২১
ফুটবল মাঠে এক টুকরো চাঁদ বাংলার মেয়েরা
বাংলাদেশের ফুটবলকে রেখা চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হলে দেখা যাবে ছেলেদের ফুটবলে নিম্নগামী । বিপরীতে মেয়েদের রেখা চিত্র উর্ধ্বগামী। এটাই বাস্তবতা। এই রেখা চিত্র যে শুধু ২০২১ সালে তা কিন্তু নয়, বিগত কয়েক বছর থেকেই এমনটি চলছে। ২০২১ সালে ছেলেদের ফুটবেলে জাতীয় দলের কোনো সাফল্যই নেই। পুরোটাই ব্যর্থতার মোড়কে আচ্ছাদিত। উপমহাদেশের বিশ্বকাপ হিসেবে পরিচিত সাফ ফুটবলে আবারো বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছে ছেলেরা। কিন্তু মেয়েরা দিয়েছে শিরোপা উপহার। স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তীতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলে হয়েছে রানি।
স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তীতে সেরা উপহার মেয়েদের
২০২১ সাল ছিল বাংলাদেশের জন্মদিনের ৫০বছর পূর্তি। একই সাথে ছিল মুজিববর্ষ। দেশব্যাপি ব্যাপক আয়োজনের সমাপ্তি টানা হয় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে। সব উদযাপন যখন শেষ, তখনই মেয়েরা দেশবাসীকে উপহার দেন সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের শিরোপা। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের টার্ফে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে নান্দনিক খেলা উপহরা দিয়ে রিপা-মারিয়া-আঁখি-মনিকারা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ করেন। ফাইনালে ৬৯ মিনিটে একমাত্র গোলটি করেছিলেন আনাই মুগিনী। এই মেয়েরাই অনূর্ধ্ব-১৮ আসরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। এরাই অনুর্ধ্ব-১৫ আসর খেলার সময়ও দেশবাসীকে শিরোপা উপহার দিয়েছিলেন।
সাফ ফুটবলে আবারো ব্যর্থ জামাল ভুইয়ারা
সাফ ফুটবলের শিরোপা যেন বাংলাদেশ দলের জন্য আকাশের চাঁদ হয়ে গেছে।২০০৩ সালে প্রথম ও শেষবার জিতেছিল শিরোপা। এরপর আর কখনই নাগাল পায়নি শিরোপা। যখনই সাফের আসর বসে, তখনই শিরোপার স্বপ্নে বিভোর থাকে দল। কিন্তু মাঠে নেমে তা হয়ে যায় অশ্বডিম্ব। ফাইনালে উঠা দূরের কথা, সেমি ফাইনালেও উঠতে পারে না। ২০০৯ সালে খেলেছিল সর্বশেষ সেমি ফাইনাল। এবার আসর বসেছিল মালদ্বীপে। পাঁচ দলের আসর ছিল লিগ পদ্ধতিতে। শীর্ষ দুই দল খেলবে ফাইনালে। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল চারে।
ব্যর্থ শ্রীলঙ্কায় চার জাতির আসরেও
সাফে ব্যর্থতার কারণে ইংরেজ কোচ জেমি ডেকে বিদায় করে দেয় বাফুফে। দায়িত্ব দেয়া হয় ঘরোয়া ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের সফল কোচ অস্কাব ব্রুজেনকে। তার কোচিংয়ে সাফ ফুটবলের পর বাংলাদেশ দল খেলতে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কাতে রাজপাকশে চার জাতির আসরে। সেখানেও ব্যর্থ হয় তারা। লক্ষ্য ছিল শিরোপা। কিন্তু ফাইনালেই উঠতে পারেনি। অপর তিন দল ছিল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা মালদ্বীপ ও আফ্রিকা মহাদেশের সেলস।
ব্যর্থ ছিল বিশ্বকাপ বাছাই ফুটবলেও
চলতি বছর পর বাংলাদেশ কাতার বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের বাকি চারটি ম্যাচ খেলে। যেখানে একটিতেও জিততে পারেনি। এমনকি ড্রও করতে পারেনি। ভারত কাছে ২-০ ওমানের কাছে ৩-০, প্যালেস্টাইনের কাছে ২-০ ও কিরগিস্তানের কাছে ৪-১ গোলে হেরেছিল।
এএফসি কাপে বসুন্ধরা কিংসের নৈপুণ্য
ঘরোয় ফুটবলে বসুন্ধরা কিংস নতুন শক্তি। প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া্র সুবাদে তারা এএফসি ক্লাব কাপে খেলার সুযোগ পায়। দক্ষিণ এশিয়া জোনে ‘ডি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের প্রতিপক্ষ ছিল ভারতের দুই ক্লাব মোহানবাগান ও ব্যাঙ্গুলুরু এএফসি এবং মালদ্বীপের মার্জিয়া ক্লাব। শুরু করেছিল মার্জিয়া ক্লাবকে ২-০ গোলে হারিয়ে। পরের ম্যাচে ব্যাঙ্গারুর সাথে ১-১ গোলে ড্র করে। পরের রাউন্ডে যেতে হলে প্রয়োজন ছিল শেষ ম্যাচে মোহনবাগানকে হারানো। কিন্তু সম্ভব হয়নি। প্রথমে গোল দিয়েও পরে গোল হজম করাতে ১-১ গোলে ড্র করে বিদায় নেয়। বসুন্ধরা কিংসের খেলা সবার নজর কাড়ে।
বছরের শেষে ফেডারেশন কাপে লঙ্কাকান্ড
সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এক সপ্তাহ পরই মাঠে গড়ায় ফেডারেশন কাপ। ১২ দলের আসরে ড্র ও গ্রুপিং হওয়ার পর হঠাৎ করেই বসুন্ধরা কিংস কমলাপুর টার্ফে খেলবে না বলে বাফুফেকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়। সাথে নাম উল্লেখ না করে একটি ক্লাবের প্রতি বাফুফের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরনেও অভিযোগ তুলে। অথচ উদ্বোধনী খেলাই ছিল তাদের। বসুন্ধরা পরে মাঠে যায়নি। তাদের অনুসরন করে উত্তরা বারিধার ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদও খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু বাফুফে তাদের সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকে। তিন দলও মাঠে আসেনি। পরে বাফুফে ডিসিপ্লিনারি কমিটি সভা করে তিন দলকেই একক বছরের জন্য সাসপেন্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে। এই তিন ক্লাবই আগামী বছর ফেডারেশন কাপ খেলতে পারবে না। বছরের শেষের দিকে এই ঘটনা নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করে। এর রেশ কোথায় গিয়ে শেষ হয় তা জানা যাবে নতুন বছরে।