অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলে সাফের রানি বাংলাদেশ
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে দেশবাসীকে আনন্দে ভাসালেন বাংলাদেশের মেয়েরা। দিলেন সেরা উপহার। বুধবার (২২ ডিসেম্বর) কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েদের ফুটবল ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে উৎসবে মেতে উঠে বাংলাদেশের মেয়েরা। ৭৯ মিনিটে খেলার একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন রক্ষণভাগের আনাই মুগিনী। লিগ পর্বেও ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার ৫০ বছর আর মুজিববর্ষ উদযাপনের রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠানই শেষ। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনে এখনো শেষ হয়নি। শেষ উপহারটি যেন দিলেন রিপা-মারিয়া-আঁখি-আনাই মুগিনীরা।
ফটুবলে দর্শক হয় না। কিন্তু এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ভালো খেলতে পারলে যে দর্শকরা মাঠে আসেন আজকের ফাইনালে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক তার একটা বড় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এমনিতেই বয়স ভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েরা ভালো খেলে থাকে। অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৮ ফটুবলে তারা চ্যাম্পিয়ন। এবার সেখানে যোগ হলো আরেকটি পালক। বাংলার বাঘিনীদের খেলা দেখার জন্য মাঠে প্রবেশের জন্য দর্শকদের ছিল লম্বা লাইন। হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। শরীরে লাল-সবুজের জার্সি। ছিল ভুভুজেলার আওয়াজ। ’বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ শ্লোগানে স্টেডিয়াম মুখরিত করে তুলেন তারা। স্টেডিয়ামের পাশে থাকা বাসা-বাড়ি থেকেও অনেকে খেলা দেখেছেন। সবার উপস্থিতিকে বাংলাদেশের মেয়েরা স্বার্থক করে তুলেন নান্দনিক খেলা উপহার দিয়ে।
গতবার অনূর্ধ্ব-১৮ আসরে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নেপালকে হারিয়ে। এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অপরাজিত থেকে। এমন কি কোনো গোল হজমও করেনি। ২০ গোল দিয়েছে। ৭ গোল করে রিপা হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা।
গোটা আসরে বাংলাদেশ দল যে চমৎকার খেলা উপহার দিয়েছিল ফাইনালে ছিল তার সফল সমাপ্তি। চমৎকার বোঝাপড়া, ছোট ছোট পাস খেলাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে দর্শকদের মোহিত করে তুলেন রিপা-মারিয়ারা। শুধু গোলটিই হচ্ছিল না।
শুরুতে ভারত আক্রমণে ছিল। তবে তা ক্ষণিকের জন্য। এরপর স্বাগতিকরা নিজেদের ঘুছিয়ে নেয়। ভারতকে কোনঠাসা করে রাখে ম্যাচের বাকি সময়। আক্রমণে আক্রমণে ব্যস্ত করে তুলে ভারতের রক্ষণসীমানাকে। ৭৯ মিনিটে গোল করার আগে আরো দুইবার গোলের মুখ দেখেছিল! একবার ১৫ মিনিটে মাঝমাঠ খেকে মারিয়া মান্ডারের শট ভারতীয় গোলরক্ষক আনশিকা ঠিকমতো ফেরাতে পারেননি। সামনে পড়লে পেয়ে যান তহুরা খাতুন। তবে দুজন খেলোয়াড়ের বাঁধা স্বত্তেও তার নেয়া শট ফাঁকা পোষ্টে গোলে প্রবেশের সময় গোল লাইন থেকে রক্ষা করেন সেই ভারতীয় গোলরক্ষক আনশিকাই। এ সময় গোলের দাবিতে রেফারিকে ঘিরে ধরেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। কিন্তু রেফারি সাড়া দেননি। আরেকবার ৭৫ মিনিটে ঋতু পর্নার কর্ণার থেকে মনিকার হেড থেকে জটলায় গোল হয়। কিন্তু তার আগেই রেফারির ফাউলের বাঁশি বাজে।
এই দুইটি ছাড়াও বাংলাদেশের আকমণ ছিল অগনিত। ২৫ মিনিটে আনাই মুগনির উড়ন্ত ক্রস পোস্টে লেগে ফিরে আসলে গোলের মুখ দেখা হয়নি বাংলাদেশের। বাংলাদেশের অব্যাহত আক্রমণে ভারত রক্ষণাত্বক পদ্বতি গ্রহণ করে। ফলে খেলা ভারতের সীমানায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে করে বাংলাদেশের আক্রমণের ধার আরো বেড়ে যায়। কিন্তু ভারতের রক্ষণের দেয়াল ভাঙ্গা কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে বাংলাদেশ দল লম্বা শটে গোল করার চেষ্টা করে। এসব শট কখনো বারের উপর দিয়ে, কখনো বারপোষ্ট ঘেষে বাইরে চলে যায়। কিন্তু পরে সেখানে সফলও হয়। মাঠে তখন বাংলাদেশের একচেটিয়া দাপট। বল ঘুরে-ফিরে বাংলাদেশের খেলোযাড়দের পায়েই। এরই ধারবাহিকতায় ৭৯ মিনেটে ডানপ্রান্ত দিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং আসরের সেরা খেলোয়াড় রিপার ব্যাক হিল থেকে বল আনাই মুগিনী দুরপাল্লার শট ভারতের গোলরক্ষক ধরার চেষ্টা করেও আটকে রাখতে পারেননি। তার গ্লাভস ছুঁয়ে জালে প্রবেশ করে। গগণবিদায়ী আওয়াজে মেতে উঠেন দর্শকরা। এই আওয়াজ মিলিয়ে যাওযার আগেই রেফারি বাজান শেষ বাঁশি।
এমপি/এমএমএ/এসআইএইচ