ব্যাটিং ব্যর্থতায় আঁধারে তাইজুলের ৭ উইকেট
পাকিস্তানের টার্গেট বাংলাদেশকে দ্রুতই অলআউট করা, সে রকমই ইংগিত দিয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলী।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের চরম ব্যর্থতার আবরনে ঢাকা পড়া বাংলাদেশ দলের টেস্ট ম্যাচ নিয়ে ছিল আরও বেশি শঙ্কা! চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ তিন দিনও টিকতে পারবে না বলে আশঙ্কা ছিল অনেকেরেই! কিন্তু সেই আশঙ্কাকে বঙ্গোপোসাগরে নিক্ষেপ করে চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন মুমিনুল বাহিনী নতুন ইতিহাস রচনা করতে শুরু করেছিলেন।
পাকিস্তানকে ২৮৬ রানে অলআউট করে ৪৪ রান লিড ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু তা ছিল ক্ষনিকের। মুহুর্তেই তা বিলীন হয়ে যায় সেই বঙ্গোপোসাগরেই। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ২৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে। তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৩৯ রান। হাতে ৬ উইকেট নিয়ে এগিয়ে আছে মাত্র ৮৩ রানে।
বাংলাদেশের কপাল ভালো, আলোর স্বল্পতার কারণে ১৪ ওভার আগেই দিনের খেলা শেষ হয়ে যায়। নতুবা যেভাবে বাংলাদেশের ইনিংসের ধ্বস নেমেছিল, তাতে করে ১৪ ওভার খেলা হলে বাংলাদেশের ইনিংসের অবস্থা আরো কতোটা ভয়াবহ হতো কে জানে? টেস্টের বাকি এখনো ২ দিন। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ইনিংস চুইগামের মতো টেনে কতোটা লম্বা করতে পারবে, পাকিস্তানকে কতোট চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারবে তাই এখন দেখার বিষয়! কিন্তু পাকিস্তানের টার্গেট বাংলাদেশকে দ্রুতই অলআউট করা। সে রকমই ইংগিত দিয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলী। টার্গেট যেন বেশি না হয়। কারণ তার মতে উইকেটে স্পিন ধরার পাশাপাশি চিড়ও ধরবে। এতে করে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা কঠিন হবে।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় পড়েছিল ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে। সেই ভগ্ন অবস্থানের অবসান ঘটিয়ে দলকে হৃষ্টপুষ্ট অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিলেন লিটন (১১৪) ও মুশফিক (৯১)। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ২৫ রানেই হারিয়েছে ৪ উইকেট। উইকেটে আছেন মুশফিক ১২, অভিষিক্ত ইয়াসির আলী ৮ রানে। সেখানে এখন কে হবেন কান্ডারি? কে করবেন ইনিংস মেরামত, তার উপরই নির্ভর করছে টেস্ট বাংলাদেশের ভাগ্য!
উইকেটের দিকে দৃষ্টি ফেরালে অনেকেরই রক্তচাপ বেড়ে যাবে। কারণ উইকেট ক্রমেই বোলারদের কথা বলতে শুরু করেছে। প্রথম দুই দিন ছিল ব্যাটিং সহায়ক। উইকেট পড়েছিল ১০টি। সেখানে কাল তৃতীয় দিনই উইকেট পড়েছে ১৪টি। পাকিস্তানের সব উইকেটের সাথে বাংলাদেশের ৪টি। আগামীকাল চতুর্থদিন আরো বেশি বোলারদের হয়ে কথা বলবে। যদি তাই হয় তা হলে বাংলাদেশের আকাশে ঘোর অমানিশাই অপেক্ষা করছে। পাকিস্তানের ইনিংসে রাজত্ব করেছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। ৮টিই নিয়েছেন তারা। তাইজুলের ৭ উইকেট ছাড়া অপর উইকেটটি ছিল মেহেদী হাসান মিরাজের। সেখানে বাংলাদেশের ইনিংসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন পাকিস্তানের পেসাররা। প্রথম ইনিংসে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হাসান আলী ৫ উইকেট নিয়ে। ২টি করে উইকেট ছিল অপর দুই পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদী ও ফাহিম আশরাফের।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে পতন হওয়া ৪ উইকেটের সব কটিই পেসারদের। শাহীন শাহ আফ্রিদী ৩টি ও হাসান আলী ১টি। কিন্তু আজ এই পাকিস্তানের পেস ত্রয়ীপ সাথে যোগ হবেন দুই স্পিনার নুমান ও সাজিদ খান। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য টিকে থাকা অনেকটা সাগরের উত্তাল ঢেউ পাড়ি দেয়ার শামিল।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতায় অনেকটা আড়ালে পড়ে গেছে তাইজুল ইসলামের ৭ উইকেট নেয়ার কীর্তি। ৪৪ দশমিক ৪ ওভারে ১১৬ রান দিয়ে তিনি ৭ উইকেট নিয়ে তিনি ম্যাচে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ৪৪ রানের লিড এনে দিয়েছিলেন। তাইজুলের অবশ্য এটি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং কীর্তি নয়। তার সেরা বোলিং জিম্বাবুংয়ের বিপক্ষে ২০১৪ সালে মিরপুরে ৩৯ রানে ৮ উইকেট। তার কারণেই পাকিস্তানের সব উইকেটের পতন ঘটেছিল তৃতীয় দিন। রান যোগ করে ১৪১। আগের দিন তাদের রান ছিল বিনা উইকেটে ১৪৫।
আগের দিনের বিনা উইকেটে ১৪৫ রান নিয়ে খেলতে নেমে পাকিস্তানের ইনিংস যে চা বিরতির আগেই গুটিয়ে যাবে তা ছিল ভাবনার অতীত। প্রথম ওভারেই তাইজুল জোড়া আঘাত হানেন আব্দুল্লাহ শফিক (৫২) ও আজহার আলীকে (০) ফিরিয়ে দিয়ে। বাবর আজম (১০) ফাওয়াদ আলম (৮), মোহাম্মদ রিজওয়ানও (৫) দ্রত ফিরে যান। উইকেট পতনের এই মিছিলে আগের দিনের ৯৩ রানে অপরাজিত থাকা ওপেনার আবিদ আলী ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন ২০৯ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে। সেঞ্চুরি করার পর তিনিও পরে বেশি দূর যেতে পারেননি। ১৩৩ রানে তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সেই তাইজুলই। পরে ফাহিম আশরাফের ৩৩ রানের সুবাদে পাকিস্তান ২৮৬ রানে অলআউট হয়।
৪৪ রানের লিড নিয়ে বাংলাদেশ চা বিরতিতে গিয়েছিল। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে উদ্বোধনী জুটিতে যে ব্যর্থতা সেখান থেকে দ্বিতীয় ইনিংসেও বের হয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের অদল-বেদলেও কাজ হয়নি। এবার সাইফ-সাদমান জুটির স্থায়ীত্ব ছিল ৪.৩ ওভার। জুটিতে ভাঙ্গণ আসে সাদমান (১) শাহীন শাহ আফ্রিদীর শিকার হলে। নাজমুল হোসেন শান্ত ও দলপতি মুমিনুল ফিরে যান কোন রান না করেই। নাজমুলকে আফ্রিদী ও মুমিনুলকে হাসান আলী শিকার করেনে। সাইফ হাসান চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ১৮ রানে তাকেও আফ্রিদী ফিরিয়ে দিলে সূর্য ডুবার অনেক আগেই বাংলাদেশের আকাশের সূর্য অস্তগামী হয়ে যায়। দিনের অনেকটা সময় বাকি থাকায় বাংলাদেশ দল কোন নাইটওয়াচম্যান নামায়নি। মুশফিক ও ইয়াসির আলী জুটি বেঁধে কোন উইকেটও পতন হতে দেননি! ভাগ্যও সুপ্রসন্ন ছিল আলোর স্বল্পতার কারণে ১৪ ওভার আগেই দিনের খেলা শেষ হয়ে গেলে। যে কারণে মুশফিক-ইয়াসির আলী ৪ দশমিক ১ ওভার খেলার পরই দিনের খেলা বন্ধ হয়ে যায়।