অনুশীলনে ক্রিকেটারদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস
‘ঊষার দুয়ারে হানি' আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত,
আমরা টুটাব তিমির রাত,
বাধার বিন্ধ্যাচল’
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চরণগুলো যেন হাল জমানায় নিউ জিল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকেই বুঝাচ্ছে। করোনার প্রভাব বাংলাদেশ দলকে বেশ ভালোভাবেই ঘিরে ধরেছিল। সেই তিমির রাত তারা জয় করে এসেছে। এখন করোনা মুক্ত বাংলাদেশ দল। রাঙা প্রভাতের অপেক্ষায়। যদিও লক্ষ্য কঠিন।
সময়ের পরিক্রমায় কখনো নিউ জিল্যান্ড গিয়ে কোনো ফরম্যাটেই বাংলাদেশের জেতা হয়নি একটি ম্যাচও। ইস্পাত দৃঢ় মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ দল প্রতিবারই নিউ জিল্যান্ড যায়। প্রতি বারই হোচট খায়। কিন্তু অতীতে হয়নি বলে যে এবারও হবে না, তাতো নয়? ইতিহাসের পালা বদল তো হয়। বিবর্ণ সেই ইতিহাস বদলে নতুন ইতিহাস রচনা হতেই পারে। তার জন্য নিউ জিল্যান্ডের দুয়ারে হানতে হবে আঘাত। যে আঘাতের জন্য বাংলাদেশ দল হচ্ছে প্রস্তুত। আজ গোটা দল প্রথমবারের মতো মাঠে নেমে করেছে অনুশীলন। ক্রাইস্টচার্চের লঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে অনুশীলনে টাইগাররা ছিলেন প্রাণবন্ত। উচ্ছ্বাসিত। অবয়বে ছিল মুক্তির আনন্দ।
এ রকম অনুভূতি হবে নাই বা কেন? নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে কী বিপর্যস্ত অবস্থায়ই না ছিলেন তারা? গৃহবন্দি। এক হোটেলে থেকেও একে অপরের থেকে ছিলেন আলাদা। চাইলেও দেখা করা সম্ভব ছিল না। রুটিন অনুযায়ী বরাদ্দ করা নির্দিষ্ট সময়ই একে অপরের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন। এ যেন কারাগার বন্দিদের সঙ্গে যেমন তার স্বজনরা দেখা করতে আসেন, অনেকটা সে রকমই।
নিউ জিল্যান্ড গিয়ে পৌঁছে টানা ১১ দিন এভাবে পার করার পর আজ যেন ছিল তাদের ‘মুক্তি দিবস’। তাইতো তাদের এ রকম উৎফুল্লতা। অনেকেই যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন। কোচ ডমিঙ্গোর কথায়ও ফুটে উঠেছে সে রকম অভিব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘বাইরে বের হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। অনুভূতি অসাধারণ। ১১ দিন হোটেলে বন্দি থাকা ছেলেদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। উজ্জ্বল সূর্য। নীল আকাশ। এমন পরিবেশে মাঠে এসে অনুশীলন করতে পেরে সবাই খুবই খুশি।’
ভিডওতে দেখা যায়, খালেদ মাহমুদ সুজন স্পিনার তাইজুলকে উদ্দেশ করে কিছু একটা বলার পর তাইজুল হেসে উঠেন।
এদিন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটররা রানিং, ফিটনেস আর স্কিল ট্রেনিং করেছেন। নেটে মুশফিকুর রহিমকে দেখা গেছে। টিম পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজনও বোলিং করেন। বাংলাদেশ দলের অনুশীলন মানেই ফুটবল খেলে গা গরম করা। যেখানে খেলার চেয়েও বেশি থাকে হৈ-হুল্লড় আর খুনসুটি। আজো তার ব্যতিক্রম ছিল না।
স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের করোনা পজেটিভ আসার কারণে দলের পরিকল্পনা সব উলোট-পালোট হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে অনেক ঘাটতি। এসব ঘাটতি আগামী কয়েকদিনে পুষিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নতুন করে করেছেন ডমিঙ্গো। তিনি বলেন, ‘আগামী দুই-তিন দিন খুবই গভীর মনযোগ দিয়ে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন করতেহ হবে।’
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট শুরু হবে নতুন বছরের প্রথম দিন মাউন্ট মঙ্গানুইতে। সেখানে গিয়ে টেস্ট শুরুর আগে ৬ দিনের অনুশীলন করার সুযোগ পাবে দল। শুক্রবার যাবে তাওরাঙ্গা। ডমিঙ্গোর আশা ক্রিকেটাররা এর মাঝে নিজেদের ছন্দ ফিরে পাবেন। তিনি বলেন, ‘টেস্টের আগে তাওরাঙ্গা গিয়ে আমরা ৬ দিন অনুশীলন করার সুযোগ পাব। প্রথম টেস্ট খেলতে নামার আগে আশা করি সবাই ছন্দে ফিরতে পারবে। যে ইনটেনসিটি দরকার তা নিশ্চিত করতে পারবে।’
এমপি/এসএন