দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টেও পালাবাদল করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
আঁধার আছে বলেই মানুষ আলোর পেছনে ছুটে। ব্যর্থতা আছে বলেই সাফল্য পেতে চায় সবাই। দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট ম্যাচ জেতা হয়নি বলে যে বাংলাদেশ সেখানে পরিবর্তন আনতে পারবে না কিন্তু নয়। একদিনের ম্যাচেও তাই ছিল। ব্যর্থতার সেই জাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ জয়ের দেখা পায়। পরে সেই জয়কে রূপ দিয়েছে সিরিজ জয়েও। এবার সেই খরা দুর করার পালা টেস্টে ক্রিকেটেও। দুই দেশেল ১২ মোকাবেলাতে ১০টিতেই বাংলাদেশের হার। ২টি ড্র। ড্র ২টি নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে বৃষ্টির কারণে দুইটি টেস্টই খেলা হতে পারেনি। চট্টগ্রামে শেষ ২দিন ও মিরপুরে প্রথম দিনের পর আর মাঠেই খেলা গড়াতে পারেনি। হেরে যাওযা ১০ ম্যাচের ৮টিতেই ছিল ইনিংসে ব্যবধানে। বাকি দুইটির একটি ছিল ৫ উইকেটে, অপরটি ৩৩৩ রানের বিশাল ব্যবধানে।
২০২২ সাল বাংলাদেশ শুরু করেছে গ্লানি দূর করার মিশনে। শুরুটা নিউ জিল্যান্ড সফর দিয়ে। প্রথম টেস্ট জিতে, পরের টেস্টে হেরে সিরিজ ড্র করেছিল। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় চলতি সফরে ওয়ানডে সিরিজ জেতার মাধ্যমে। এবার পালাবদল করতে চায় টেস্ট সিরিজেও। খেলা শুরু হবে দুপুর ২টায়।
ডারবানের কিংসমিডে আগামীকাল দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হবে, সেখানে বাংলাদেশের শক্তি অনেক বেড়েছে। বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তি হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ফিরে পাচ্ছে তামিম ইকবালের সঙ্গে নতুন সেনশেসন মাহমুদুল হাসান জয়কে। এই দুই জনই ইনিংসের গোড়া পত্তন করবেন। এই দুই জনের সঙ্গে যোগ হবেন মুশফিকুর রহিমও। সেখানে আইপিএলের কারণে দক্ষিণ আফিকা পাচ্ছে না রাবাদা-এনগিডির মতো বোলারদের। তাইতো বাংলাদেশের আশার পালে হাওয়া লেগেছে টেস্টে জয়ের দূর্ভিক্ষ দূর করার। ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর একদিকে বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। অপরদিকে ওয়ানডে দল যখন সিরিজ খেলায় ব্যস্ত, তকণ টেস্ট দলের ক্রিকেটাররা নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন গ্যারি কারস্টেন একাডেমিতে অনুশীলনে। সব মিলিয়ে প্রস্তুতিতে নেই কোনো ঘাটতি। যে কোন রকমের আক্রমণ আসলে তা মোকাবেলা করতে প্রস্তুতি মুমিনুল বাহিনী।
দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন মানেই পেস আক্রমণ ভরপুর। নানাভাবে তারা ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করার জন্য ফন্দি এটে থাকেন। একটিতে ব্যর্থ হলে, আরেকটি। এ রকম একটি হলো শর্ট বল। যেখানে অতীতে বহুবার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পরাস্ত হেয়েছেন। এবারও সে রকম আঘাত আসলে তার জন্য রণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন মুমিনুল বাহিনী। শর্ট বল নিয়ে তারা কাজও করেছেন। তিনি বলেন, ‘একটা সময় আসে যখন পেসাররা কিছু করতে পারে না তখন শর্ট বল দিয়ে চেষ্টা করে ওই সময় হয়ত বেশি লম্বা সময় থাকে না। মেক্সিমাম ১০ ওভার হয়। তো ওই সময় চাপটা কিভাবে সামলে উঠতে পারেন সেটা ম্যাটার করে। তো আমাদের দলে যারা আছে তারা সবাই টেস্ট ম্যাচ খেলা ক্রিকেটার। তো তারা জানে এই চাপটা কিভাবে কাটানো যায় বা প্রেসারটা ধরে রাখা যায়। তিনি বলেন, ‘পেস বান্ধব উইকেট মানে এই না যে রান হবে না। পেস উইকেট মানে এই না যে গেলাম আর আউট হয়ে গেলাম। নিউজিল্যান্ড সিরিজে যদি দেখেন ওই খানেও রান হয়েছে, কিন্তু পেস বোলাররা সুবিধা বেশি পায় বা উইকেট বেশি পাবে। তো আমার ধারনা যে পেস বোলাররা উইকেট বেশি পাবে।‘
এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পেস বোলার ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্ক। এখন আর সেই ভয় নেই। ওয়ানডে সিরিজ জিতে অর্জন করেছে সাহস। এ প্রসঙ্গে মুমিনুল বলেন, ‘বিদেশে টেস্ট ম্যাচ জিততে হলে পেস বোলারদের পারফরম করা গুরুত্বপূর্ণ। ওর যদি ভালো জায়গায় বল করতে পারে, দ্রুত ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারে সেটা খুবই কাজে দেয়। আর আমার পেসারদের কয়েকজন তো ওয়ানডে সিরিজে খেলেছে।শেষ কিছুদিন ওরা ভালো বিশ্রাম নিয়েছে। তো আমার কাছে মনে হয় ওরা বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে।’
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ খেলা সেরা একাদশে দুইটি পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। ক্রাইস্টচার্চে খেলা সেরা একাদশের দুই জন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও নুরুল হাসান সোহান এবার দলেই নেই। আরেকটি পরিবর্তন হতে পারে। তামিম ও মাহমুদুল ইনিংসের উদ্বোধন করার সম্ভাবনার কথা বলেছেন মুমিনুল। সে ক্ষেত্রে সাদমান ইসলাম বাদ পড়বেন। তামিম ফিরছেন ২০২১ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলার পর। তার ফেরা নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘তামিমের ফেরা অনেক বড় ব্যাপার। এরকম অভিজ্ঞ ও সিনিয়র খেলোয়াড় দলে থাকা সবসময়ই ভালো। তামিম রান করলে আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। আমি আশা করি তামিমের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে।’
এমপি/