মিঠুন-মিজানুরের জোড়া সেঞ্চুরিতে মধ্যাঞ্চলের রানের পাহাড়
ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ইনিংসের উদ্বোধন করতে নেমেই সেঞ্চুরি করে চমক দেখিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের হয়ে বিসিবি উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে তিনি খেলেছেন ১৭৬ রানের ইনিংস। সঙ্গী মিজানুর রহমানকে নিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ২৪ রানের অভাবে নতুন রেকর্ড গড়তে পারেননি তিনি। মিজানুর ১৬২ রানে আউট হয়ে গেলে জুটি ভাঙ্গে ৩২৭ রানে। উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রান ৩৫০।
২০১৮ সালে ঢাকা বিভাগের হয়ে করেছিলেন রনি তালুকদার ও আব্দুল মজিদ। চট্টগ্রামে এই দুই ব্যাটসম্যানই বিসিবি উত্তরাঞ্চলের করা ২১৯ রান টপকে গিয়ে দলকে বড় লিড এনে দেওয়ার রাস্তা করে দেন। দ্বিতীয় দিন শেষে মধ্যাঞ্চলের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৪৩০। তারা এগিয়ে আছে ২১১ রানে। মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) তুষার ইমরান ৩৯ ও সালমান হোসেন ৪০ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামবেন। রাজশাহীতে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের করা ২৬০ রানও টপকে গেছে বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল। ৬ উইকেটে তাদের সংগ্রহ ২৮৮। হাতে ৪ উইকেট নিয়ে তারা এগিয়ে আছে ২৮ রানে।
বিসিএলের প্রথম দিন দুইটি ম্যাচেই ছিল বোলারদের দাপট। দ্বিতীয় দিন দুইটি ম্যাচেরই দৃশ্যপট বদলে যায়। প্রভাব বিস্তার করেন ব্যাটসম্যানরা। চট্টগ্রামে উইকেট পড়েছে মাত্র ২টি। রান উঠে ৩৬৯। সে তুলনায় রাজশাহীতে উইকেট পড়েছে বেশি ৬টি। রান উঠেছে আবার কম ২৮৫। তবে রান কম উঠলেও মাত্র ১২ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত এনামুল হক বিজয়। সেঞ্চুরির অপেক্ষায় আছেন ৯১ রানে অপরাজিত থাকা জাকির হাসান। তার সাথে ২৮ রানে অপরাজিত আছেন মেহেদী হাসান।
রান খরায় ভুগার কারণে মিঠুন জাতীয় দলের পাশাপাশি বিসিবির চুক্তি থেকেও বাদ পড়েন। আবার জাতীয় ক্রিকেটি লিগেও রান পাননি। অবস্থার উত্তোরনের জন্য তিনি নিজের ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন এনে গোড়াপত্তন করে শতভাগ সফল। আগের দিন ব্যাট করেছিলেন ওয়ানডে স্টাইলে। দ্বিতীয় দিন কিছুটা দেখেশুনে খেলেন। ৪৩ রান নিয়ে ব্যাট করতে নেমে ৬৪ বলেই দেখা পেয়ে যান হাফ সেঞ্চুরির। সেঞ্চুরি করতে বল খেলেন ১৪৫ টি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটি ছিল তার তেরোতম সেঞ্চুরি। তার সঙ্গী মিজানুর রহমান আগের দিনই সাবধানী ব্যাটিং করেছেন। দ্বিতীয় দিনও তার সেই সাবধানী ব্যাটিং অব্যাহত ছিল। ১৮ রান নিয়ে ব্যাট করতে নেমে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান ৮৯ বলে। সেঞ্চুরি করতে বল খেলেন ১৬৩ টি। সেঞ্চুরি করার পরও দুই জন থেমে না থেকে সমান তালে এগুতে থাকেন। দেড়শও পার হয়ে যান দুই জনেই।
দুই জনের ব্যাটে ভর করে দলের রান ৩০০ পার হওয়ার পর সবার চিন্তায় আসে এরা আর কতোদূর যান, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৩৫০ রানের জুটি ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়তে পারবেন কি না? চা বিরতির কড়া নাড়ছিল। দলের রান ৩২৭। ঠিক তখনই আউট হয়ে যান মিজান। ১৬২ রানে নাঈম ইসলামের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন। ২৪৩ বলের ইনিংসে ছিল ২১ চারের সঙ্গে ৩টি ছয়। মিজান আউট হওয়ার পর মিঠুনও বেশি সময় টিকতে পারেননি। ১৭৬ রানে তিনি নোমান চৌধুরীর বলে উইকেটের পেছনে মাইদুল ইসলাম অংকনের হাতে ধরা পড়েন। তার ২৫৭ বলের ইনিংসে ছিল ২১টি চার ও ২টি ছক্কা। উইকেটে আসা নতুন দুই ব্যাটসম্যান তুষার ইমরান ও সালমান হোসেন ইমনও আছেন রানের মাঝে। জুটিতে ৭৪ রান যোগ করে তারা আছেন অবিচ্ছিন্ন।
রাজশাহীতে দক্ষিণাঞ্চল শুরুতে বিপদেই পড়েছিল ৪২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে। এই অবস্থার সামাল দেন এনামুল হক বিজয় ও জাকির হাসান। দুই জনে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১২৮ রান যোগ করেন। এনামুল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা তৈরি করে ফেলেন। কিন্তু ৮৮ রানে তাকে হতাশায় ডুবান মোহাম্মদ আশরাফুল। ব্যাট হাতে ৬১ রান করার পর তিনি বল হাতে নিয়ে ফিরিয়ে দেন এনামুলকে। তার বলে ক্যাচ ধরেন শাহদাত।
নাহিদুল (৭) দ্রুত ফিরে গেলেও ফরহাদ রেজা এসে খেলেন ৩৬ বলে ৪ ছক্কায় ৩৮ রানের ইনিংস। এরপর মেহেদী হাসানকে নিয়ে জাকির হাসান ৬০ রান যোগ করে দলের লিডকে বাড়িয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নিজের সেঞ্চুরিও করে নিতে চাইবেন। পূর্বাঞ্চলের হয়ে নাঈম হাসান ৯৫ রানে নেন ৩ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বিসিবি উত্তরাঞ্চল বনাম ওয়ালটন দক্ষিণাঞ্চল
উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২১৯
মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৪৩০/২ ( আগের দিন ৬১/০ ওভার ১০৩ ( মিঠুন ১৭৬, মিজানুর ১৬২, সালমান ৪০*; সৌম্য ৩৯*, নোমান ১/৭৯, নাঈম ১/৩৩ )।
ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল বনাম বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল
পূর্বাঞ্চল: ১ম ইনিংস: ২৬০
দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২৮৮/৬ (আগের দিন ৩/০), ওভার ৮২ (জাকির ৯১*, এনামুল ৮৮, ফরহাদ রেজা ৩৮, মেহেদি ২৮*; নাঈম ৩/২১, মোহাম্মদ আশরাফুল ২/৪৯, মোহাম্মদ এনামুল ১/৪০)।
এমপি/এএস