সাকিব বিসিবির কর্মী, ভালো না লাগলে টেস্ট থেকে অবসর নেয়ার পরামর্শ
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সাকিবের খেলতে না পাওয়া নিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের পর এবার চটেছেন পরিচালক টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। তার প্রতিক্রিয়া ছিল বিসিবি সভাপতির চেয়েও আরও বেশি আক্রমণাত্বক। সাকিবের না খেলাটাকে তিনি ডোন্ট কেয়ার বলে জানিয়েছেন। একান্তই যদি সাকিবের টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি অনীহা থাকে তাহলে তাকে অবসর নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন এই সাবেক অধিনায়ক। সাকিবকে তিনি বিসিবির একজন বেতনভুক্ত কর্মী হিসেবেও উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) মিরপুরে সাংবাদিকদের খালেদ মাহমুদ বলেন, ’সাকিব টেস্ট না খেললে না খেলুক, আই ডোন্ট কেয়ার। বিসিবি এত উদ্বিগ্ন না। সে যদি উপভোগ না করে, ওর বলে দেওয়া উচিত আমি আর টেস্ট খেলব না বা এই ফরম্যাটে খেলব না।’
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের ঘনিষ্ট পরিচালকদের একজন খালেদ মাহমুদ সুজন। বিসিবি সভাপতি যে কয়জন পরিচালকদের সঙ্গে আলাপ করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন খালেদ মাহমুদ তাদের একজন। আবার অনেক সময় তার পরামর্শও বিসিবি সভাপতি নিয়ে থাকেন। তাই খালেদ মাহমুদের এ রকম হুংকার বুঝাই যাচ্ছে বিসিবি এবার আর কোনো ছাড় দেবে না সাকিবকে।
তিনি বলেন, ‘সাকিবকে কোনো অনুরোধ করা হয়নি। সাকিব যেহেতু আইপিএল খেলছে না, সাকিবের কাজটা কী? দল পেলে তো আইপিএলেই খেলতে যেত। আমরা জিজ্ঞেস করেছি- আইপিএল যেহেতু খেলছো না টেস্ট খেলবে কি না খেলবে না। সে বলেছে- হ্যাঁ! বোর্ড কেন অনুরোধ করতে যাবে? তারা চুক্তির খেলোয়াড়। বেতন নেওয়া খেলোয়াড়। এমন তো না নতুন একজন খেলোয়াড় যে চুক্তিতে নেই। চুক্তির বাইরের খেলোয়াড়কে আমরা অনুরোধ করতে পারি। সে বলতে পারে আমি যাব না, আমি তো চুক্তিতে নেই। কিন্তু ও তো আমাদের চুক্তিতে আছে। ও আমাদের কর্মী। এখানে তো অনুরোধের কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘ পাপন ভাই তো তাও ভালো, অনুরোধ করে বলতে গেছেন। তিনি আদেশ করতে পারেন, যে তোমাকে খেলতে হবে কারণ তুমি চুক্তিতে আছো।’
সাকিবের এ রকম আচরণে দলের তরুণ ক্রিকেটারদের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করেন সুজন। তিনি বলেন, ‘সাকিব-তামিম যখন খেলে তখন কোনো সমস্যা তৈরি হয় না। সমস্যা তখনই তৈরি হয় যখন ওরা খেলে না। ওদের জায়গায় অন্য কাউকে খেলাচ্ছি। নতুন করে তৈরি করছি। সাকিব যখন ফিরে আসবে তখন ওই ছেলেটার কী হবে? আমরা দল তো তৈরি করতে পারছি না। সাকিব যদি খেলতে না চায়, না খেলুক টেস্ট ম্যাচে।’
জাতীয় দলে খেলে সাকিব উপভোগ করছেন না-এ বিষয়টি নিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘ আমি এখনও খেলতে চাই। আমি এখন ৫১ বছর। মন চায় বাংলাদেশের জার্সি পড়ে খেলি। আপনি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের একটি ছেলেকে জোর করতে পারেন। কিন্তু ৩৬-৩৮ বছর বয়সী কাউকে জোর করতে পারেন না। তারা তাদের সিদ্ধান্তটা ভালো করে বুঝে নেয়। তারা যদি খেলতে না চায়, আগ্রহী না থাকে কিংবা মানসিকভাবে কোনো সমস্যা থাকে তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু এটা এমন সময়ে নয় যে আমরা যখন একটা দল নিয়ে সিদ্ধান্তে চলে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন ক্রিকেটার ছুটি চাইতেই পারে। কিন্তু সাকিব সেটা আগে বললেই পারত। আগে একটা চিঠি দিয়েছিল (টেস্ট থেকে বিরতি চেয়ে)। পরে আবার পাপন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে রাজি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট-ওয়ানডে সব খেলতে। তারপরও কেন এ রকম বলল, এটা তো আমি বলতে পারব না।’
সুজন মনে করেন, সাকিবকে নিয়ে জল ঘোলা অনেক হয়েছে। এবার এর সমাপ্তি হওযার সময় এসেছে। যাকে বলে ফুলস্টপ।
তিনি বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে, এখানে অনুরোধের কিছু নেই। সাকিব খেলতে চাইলে সে যাবে। না চাইলে যাবে না। কিন্তু সময় হয়েছে, এটার একটা ফুল স্টপ করা উচিত। বোর্ড থেকে ফুল স্টপ করা উচিত। বারবার এটা হতে পারে না যে আমি চাইলাম না, খেললাম না। আবার চাইলাম তো খেললাম। এটা হতে পারে না। ফুল স্টপের সময় এসেছে। যথেষ্ট হয়েছে। ইউ কান নট ডিকটেট বিসিবি। বিরতি চাইলে বিরতি নাও। প্রেসিডেন্টও বলতে চায় এভাবে। হয়তো বা উনি একটু আস্তে বলেছেন, আমি একটু জোরে বললাম।’
সুজন মনে করেন সবার উপরে বিসিবি। বিসিবির উপরে কেউ নয়। তিনি বলেন, ‘চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিসিবি নেবে। বিসিবির প্রোডাক্ট ওরা, বিসিবি ওদের প্রোডাক্ট নয়। বিসিবি কোনো ব্যক্তির জন্য নয়, বিসিবির জন্যই ওরা। নিশ্চিতভাবে ওরা বাংলাদেশ ক্রিকেটের মূল স্টেক হোল্ডার। কিন্তু এই স্টেক হোল্ডারের জন্য তো বিসিবির অনেক বিনিয়োগ ছিল। সেই অনূর্ধ্ব-১৩, ১৫, ১৭ থেকে তাদেরকে গড়ে তোলা, তাদের পেছনে তো বিসিবি অনেক খরচ করেছে সেই সময়। বিসিবি তাদের অভিভাবক। আমাদের সবার অভিভাবক বিসিবি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ওপর আমরা কেউ নই। তারাও নয়।’
এখন দেখার বিষয় সাকিব ইস্যুর সমাপ্তি কিভাবে হয়?
এমপি/এসআইএইচ