বর্তমানে প্রতি কেজি খেজুরের দাম বছরের ব্যবধানে কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এবার ১০ শতাংশ শুল্কহার কমানোয় খেজুরের দাম কমেছে। পবিত্র রমজান মাসে খেজুরের দাম আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।
গত বছর খেজুরের দাম যখন রোজাদারদের নাগালের বাইরে তখন ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন পরামর্শ দিয়েছিলেন খেজুরের বদলে বরই (কুল) খাওয়ার জন্য।
চট্টগ্রাম নগরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বহু জাতের খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ইরাকি জায়েদি খেজুরের। এ ছাড়া নিম্নবিত্তের ভরসায় আছে নরম বরই খেজুর। গত বছরের তুলনায় নরম বরই খেজুর ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, জায়েদি খেজুর ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কমে ৩৫০ থেকে ৩৭০, আজোয়া খেজুর ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমে ৬০০ থেকে ৮০০, মেডজল খেজুর ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কমে ৯০০ থেকে ৯৫০ এবং মাবরুম খেজুর ৪০০ টাকা কমে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে বহুল চাহিদা থাকা জায়েদি খেজুর পাইকারিতে ১০ কেজি কার্টনের দাম ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বস্তার খেজুর ১২৫ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জায়েদি খেজুরের দাম আরো কমে আসতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশে ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি ও ফলমণ্ডীর ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ডিউটি কমানোর কারণে ছোট ছোট আমদানিকারকরা এবার প্রচুর খেজুর আমদানি করেছে। গত বছর ডিউটিসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে তারা আমদানির সুযোগ পায়নি।
তাই খেজুর নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের মধ্যে একটা অস্বস্তি ছিল। এ বছর খেজুরের দাম ও সরবরাহ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। বন্দর ও জাহাজে আরো ৩০ শতাংশের মতো খেজুর আছে। যা আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজারে ঢুকবে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই লাভজনক অবস্থায় থাকবে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘গত বছর হাজী সেলিমের মদিনা ও নজরুল ইসলামের নাসা সিন্ডিকেট করে একচেটিয়া খেজুর এনে সেগুলো সংরক্ষণ করে, শোরুম খুলে খেজুর বিক্রি করেছে। তাই বাজারে খেজুরের সংকট ও দাম বেড়েছে। ঋণপত্র খোলার মার্জিনসহ বিভিন্ন শর্ত শিথিলের কারণে এবার ছোট-ছোট আমদানিকারকরা ব্যবসা করার সুযোগ পেয়েছে। তাই রমজানের বাজার নিয়ে ক্রেতাদের দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না।’
রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী মো. সুমন বলেন, ‘এ বছর খেজুরের দাম এখন থেকেই কম। আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে। দাম নিয়ে সবাই শুধু ব্যবসায়ীদের দোষ দেয়। কিন্তু এবার সরকার যেভাবে মনিটরিংয়ে রেখেছে তাতে দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। এবার খেজুরের দাম রমজানের শুরুতেও কম থাকবে। পরে হয়তো আরো কমতে পারে।’
ফ্রেশ ফ্রুটস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে খেজুরের বার্ষিক চাহিদা ৬০ থেকে ৯০ হাজার টন। শুধু রমজান মাসে ৪০ হাজার টন খেজুর প্রয়োজন হয়। খেজুরগুলো মূলত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তিউনিসিয়া, মিসর, জর্দান, ইরাক, ইরান ও পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ইরাকি জায়েদি খেজুরের।
আসন্ন রমজানকে লক্ষ্য করে ৪৮ দিনে আমদানি হয়েছে বিভিন্ন জাতের ৩১ হাজার ৬৪৩ টন খেজুর, যা মোট আমদানির ৭০ শতাংশ। পাইপ লাইনে থাকা বাকি ৩০ শতাংশ আগামী ১০ দিনের মধ্যেই বাজারে আসবে। অথচ গতবছর খেজুর আমদানির পরিমাণ চলতি বছরের তুলনায় বেশি হলেও খোলা বাজারে পর্যাপ্ত খেজুর ছিল না।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, পচনশীল পণ্য হওয়ায় দুই মাস আগে রমজানকে লক্ষ্য করে খেজুর আনা হয়। সে হিসেবে গত রমজানের আগের ৬০ দিনে ৫৪ হাজার ৩৫৩ টনের বেশি আমদানির বিপরীতে এবার আনা হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৭০ টন আর পাইপ লাইনে রয়েছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টন।