সাফ অনূর্ধ্ব-২০ আসরেও রানি বাংলাদেশ
সাফের রানি হওয়ার পর এবার প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপেও রানি হয়েছে বাংলাদেশ। সাফের মতো এই আসরেও প্রতিপক্ষ ছিল নেপাল। কেবল পরিবর্তন ভেন্যু। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামের পরিবর্তে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম। যেখানে বাংলাদেশ হিমালয় কন্যাদের বধ করেছে ৩-০ গোলে।
গোল করেন রিপা, অধিনায়ক শামসুন্নাহার ও আফিদা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ জয়ী হয়েছিল ৩-১ গোলে।
প্রথমার্ধে ২ গোল জিতে শিরোপার ঘ্রাণ পেতে শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের শেষের দিকে রিপা ও অধিনায়ক শামসুন্নাহারের গোলে বাংলাদেশ ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায়।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশ যেভাবে প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে, তাতে করে দ্বিতীয়ার্ধে গোল ধরে রাখা নয়, ব্যবধান আরও বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েই যেন মাঠে নামে তারা।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশ ২-০ গোলে এগিয়ে থাকলেও সেই গোল পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ম্যাচের ৪২ মিনিট পর্যন্ত। তবে এর আগে গোল না পাওয়া ছিল ভাগ্যের বিড়ম্বনা। যেভাবে একচেটিয়া দাপট দেখিয়ে খেলেছেন শামসুন্নাহাররা আর একের পর এক গোলের সহজ সুযোগ তৈরি করে কাজে লাগাতে পারেননি তা ছিল অবিশ্বাস্য।
যে গোল বাংলাদেশ ৪৩ মিনিটে পেয়েছে, সেটি পেতে পারত ২ মিনিটেই। মাহফজুার লম্বা পাস ধরে শামসুন্নাহার বল নিয়ে ভেতরে ঢোকার সময় বিপদ আঁচ করতে পেরে নেপালের গোলরক্ষক পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে আসেন। এসময় শামসুন্নাহার বল ঠেলে দেন আকলিমাক। কিন্তু আকলিমা ফাঁকা পোস্টে বল বারের অনেক উপর দিয়ে মেরে সুযোগ নষ্ট করেন। পরের মিনিটেই কর্নার থেকে মাহফুজার হেড পোস্টের উপর দিয়ে চলে যায়।
১৮ মিনিটে রিপার কাছ থেকে বল পেয়ে আকলিমার মাটি কামড়ানো শট নেপালের গোলরক্ষক ধরলেও হাত ফসকে বের হয়ে যায়। সেই বল পরে নেপালের রক্ষণভাগের একজন খেলোয়াড় গোলরক্ষককে ব্যাক পাস দেন। এ নিয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফ্রি-কিক দাবি করেন। কিন্তু রেফারি তা কর্ণপাত করেননি। প্রকৃত নিয়ম হলো এভাবে গোলরক্ষককে ব্যাক পাস দেওয়ার নিয়ম নেই। দিলে তা ফ্রি-কিক পায় প্রতিপক্ষ।
বাংলাদেশের একের পর এক আক্রমণে কোণঠাসা নেপাল প্রথম সুযোগ পায় ৩৬ মিনিটে। আমিশার গড়ানো শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ৪ মিনিট পরই বাংলাদেশ আবার সুযোগ পায়। রিপার উড়ন্ত শট নেপালের গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন।
অবশেষে ৪২ মিনিটে বাংলাদেশ গোলের মুখ দেখে। স্বপ্না রাণীর কাছ থেকে বল পেয়ে আকলিমা বল ধরে এগোনোর সময় নেপালের রক্ষণভাগের একজন খেলোয়াড় ট্যাকেল করলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। পরে সেই বল পেয়ে যান রিপা। তিনি কোনাকুনি শটে নিশানাভেদ করেন। বুকের ভেতর জমাট হয়ে থাকা উল্লাসের পাখাগুলো ডানা মেলে উড়তে থাকে বাংলার আকাশে। ফাইনালের গোল বলে কথা।
প্রথমার্ধের যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে (৪৫+১) বাংলাদেশ পেয়ে যায় দ্বিতীয় গোল। নিজেদের সীমানা থেকে উঁচু পাস দেন আফিদা। সেই বল নেপালের প্রতীক্ষা চৌধুরী ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে বল পেয়ে যান শামসুন্নাহার। বিপদ আঁচ করতে পেরে পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে আসেন নেপালি গোলরক্ষক। কিন্তু তাতে কী? শামসুন্নাহার দেখে-শুনে ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়িয়ে স্বস্তিতে যান বিরতিতে। আসরে এটি ছিল তার ষষ্ঠ গোল। পরে তিনিই হন সর্বোচ্চ গোলদাতা।
দ্বিতীয়ার্ধেও বাংলাদেশ চাপিয়ে খেলে। নেপালও গোল পরিশোধ করে খেলায় ফিরে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানে তারা সফল হতে পারেনি। উপরন্তু বাংলাদেশই আরও এক গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় তিনে।
দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ এক গোল করলেও আরও বেশ কয়েকটি সহজ সুযোগ নষ্ট করে। ৭৯ মিনিটে শামসুন্নাহার একক প্রচেষ্ঠায় বল নিয়ে বক্সে ঢুকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নেপালের গোলরক্ষকের বাধার কারণে আর পারেননি। নেপালের গোলরক্ষককে কাটাতে গিয়ে তিনি বলের নিয়ন্ত্রণ হারান। পরের মিনিটেই নেপালের আমিশার একটি নিশ্চিত গোলের চেষ্টা বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ৮৭ মিনিটে বাংলাদেশ পায় তৃতীয় গোল। শাহেদা আক্তার রিপার ফ্রি-কিক থেকে উন্নতি খাতুন আলতো টোকায় বলকে পাঠিয়ে দেন তার আপন ঠিকানায় (৩-০)। ৮৮ মিনিটে কর্নার থেকে ফাঁকা পোস্ট শামসুন্নাহার মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ গোলের হালি পূর্ণ করতে পারেনি।
এমপি/এসজি