ক্রোয়েশিয়ার ‘সামুরাই’ যুদ্ধ
জাপানিজ যোদ্ধাদের বলা হয় সামুরাই। তারা অনেক ধরনের অস্ত্র ব্যবহারে যেমন পটু, তেমনি লড়াইয়ের নানা কলা-কৌশল রপ্ত তাদের। বিশ্বকাপের মঞ্চে সেই সামুরাই আত্মা ভর করেছে জাপান ফুটবল দলের উপর। তাই সোমবার (৫ ডিসেম্বর) শেষ ষোলোতে এশিয়ান দলটির মুখোমুখি হওয়ার আগে ক্রোয়েশিয়া প্রস্তুত ‘সামুরাই’ যুদ্ধের জন্য।
গ্রুপপর্বে জাপান চমকের সারাংশ- জার্মানিকে দিয়ে শুরু এবং স্পেনকে দিয়ে শেষ। এক লাইনে বিস্তারিত বললে- ইউরোপের দুই পরাশক্তিকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে নকআউটে জাপান। বিশ্বকে চমকে দেওয়া এশিয়ান দলটিকে নকআউটের প্রথম রাউন্ডে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে ক্রোয়াটরা। আল জানুব স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় মুখোমুখি হবে দুই দল।
বিশ্বকাপে তৃতীয়বার মুখোমুখি হবে জাপান ও ক্রোয়েশিয়া। আগের দুই সাক্ষাতে জয়হীন ছিল জাপানিজরা। ১৯৯৮ সালে হারে ১-০ গোলে এবং ২০০৬ সংস্করণে করে গোলশূন্য ড্র। দুটোই ম্যাচ ছিল গ্রুপপর্বের। তবে সেই জাপান আর এই জাপানের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর, যা ভালোভাবেই আঁচ পেয়েছে স্পেন ও জার্মানি।
যদিও স্প্যানিশরা টিকে গেছে টুর্নামেন্টে, তবে বিদায় ঘণ্টা বেজেছে জার্মানদের। তাই ক্রোয়াট কোচ জ্লাটকো দালিচ জানিয়েছেন, জাপানকে হারাতে জাপানিজ স্টাইলে খেলবে তার দল। সবশেষ বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। কাতারে চলতি টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত অপরাজেয় তারা। জাপান ভীতির বিপরীতে এটাই শক্তি যোগাচ্ছে দালিচকে।
ক্রোয়েশিয়া কোচ বলেছেন, ‘ক্রোয়েশিয়ার জনসংখ্যা ৪ মিলিয়ন এবং বিশ্বমঞ্চে আমরা যে ফল অর্জন করেছি তা অলৌকিক। আমরা প্রতিনিয়ত টুর্নামেন্ট এবং বিশ্বকাপে উপস্থিত থাকি, এটা সত্যিই দুর্দান্ত একটি সাফল্য। আমরা একটি বিশ্ব ফুটবল শক্তিতে পরিণত হয়েছি।’
ক্রোয়াটদের সেই শক্তির সামনে দুধের শিশু জাপান। এশিয়ার দলটি কখনোই বিশ্বকাপে শেষ ষোলোর বাধা টপকাতে পারেনি। সবশেষ সংস্করণেও বিদায় নিয়েছিল নকআউটের প্রথম পর্ব থেকে এবং সব মিলে তৃতীয়বার। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান ২৪তম স্থানে। যে তালিকায় ১২ নাম্বারে ক্রোয়েশিয়া। দুই দলের শক্তি-সামর্থ্যে পার্থক্য তুলে ধরতে এতটুকু তথ্যই যথেষ্ট।
কিন্তু গ্রুপপর্বে জোড়া অঘটন ঘটিয়ে জাপান এখন সমীহ করার মতোই প্রতিপক্ষ। তাদের সমীহ করছে ক্রোয়েশিয়াও। দালিচ বলেছেন, ‘জাপান সামুরাই যোদ্ধা দর্শন প্রয়োগ করবে। আমরাও তাই করব। আমরা যদি আরও এগিয়ে যেতে চাই, তবে আমাদের অবশ্যই একই মনোভাব নিয়ে খেলতে হবে। কাউকে অবমূল্যায়ন না করে আমাদের সেরাটা দিতে হবে।’
রবিবার (৪ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে ক্রোয়েশিয়া কোচ আরও বলেন, ‘বিশ্বের (অন্য দলের তুলনায়) জাপান সবচেয়ে কম বলের দখল রাখে, কিন্তু তারা দুর্দান্ত পরিবর্তন আনে। এটা সবচেয়ে অধ্যবসায়ী, অবিচল প্রতিপক্ষ। এক কথায়, তারা হাল ছাড়ে না। জাপান ও ক্রোয়েশিয়ার মানসিকতা একই এবং আমরা একই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছি।’
অন্যদিকে সামুরাই স্পিরিটে আরও একটি জয়ের অপেক্ষায় জাপান। দলটির ডিফেন্ডার ইউতো নাগাতোমো বলেছেন, ‘সামুরাই যুদ্ধে যাওয়ার আগে, তারা তাদের অস্ত্রে ধার দিত এবং কৌশল উন্নত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যুদ্ধের সময় যদি ভয় পায়, তবে তারা সেই অস্ত্রগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবে না। ফুটবলেও বিষয়টা একই।’
জাপানিজ ফুটবলার যোগ করেন, ‘আমরা যেসব কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছি এবং অনুশীলন করেছি তার সুফল পাওয়ার প্রথম পূর্বশর্ত হলো সাহস থাকা। তাই আগামীকাল (আজ) আমরা কতটা সাহসী হতে পারি তা দেখাতে চাই।’
এসজি