অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা
বাঁচতে হলে লড়তে হবে, এই লড়াইয়ে জিততে হবে। যে কোন টুর্নামেন্টের নকআউট পর্ব এমনই। শিরোপার জন্য এগিয়ে যেতে হলে এখানে জয়ের কোনও বিকল্প নেই। মেসির জন্য একটু বেশিই যেন। শেষ বিশ্বকাপ। ফুটবলের এই ক্ষুদে যাদুকর জিততে পারেননি কোনও বিশ্বকাপ। এবারই শেষ সুযোগ। কোটি কোটি ভক্তরা তাকিয়ে আছেন মেসির হাতে শিরোপা দেখার জন্য। মেসি ক্রমেই তাদের স্বপ্ন পূরেণের পথে নিয়ে যাচ্ছেন।
শেষ ষোলর নকআউট পর্বে অস্ট্রেলিয়াকে কোনও বাঁধাই হয়ে উঠার সুযোগ দেননি। তার বাম বায়ের যাদুতেই কোটি কোটি দর্শকদের উল্লাসে ভাসিয়েছেন। মেসির গোলে আর্জেন্টিনার জয় যেন দর্শকদের কছে এক টিকিটে দুই ছবি দেখার মতো। ২-১ গোল ম্যাচ জিতে আর্জেন্টিনা পৌছে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। ৯ ডিসেম্বর কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডসের।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হলে আর্জেন্টিনা আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে। ৫০ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে মেসি তার আরেকটি বাম পায়ের যাদু দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এবার আর পারেননি। ঠিক মতো বল মারতে গিয়ে তিনি পড়ে যান। ফলে বল চলে যায় সরাসরি অজি গোলরক্ষক রিয়নের হাতে।
আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোল ছিল অস্ট্রেলিয়ার গোলরক্ষকের ভুলে। ব্যাকপাস থেকে বল পেয়ে তিনি ডি পাউলকে কাটাতে গেলে পেছন থেকে এসে ম্যানসিটির স্ট্রাইকার জুলিয়ান আলভারেজ ডান পায়ের শটে বল খালি পোষ্টে জালে ঠেলে দেন। ৭৬ মিনিটে বক্সের উপর থেকে অস্ট্রেলিয়ার গুডউইনের বাম পায়ের তীব্র শট আর্জেন্টিনার ফার্নান্দেজের শরীরে লেগে দিক পরিবর্তন করে সরাসরি জলে প্রবেশ করে। ফার্নান্দেজের শরীরে লাগার কারণে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্টিনেজে বলের গতিপথ বুঝতে পারেননি। ৮০ মিনিটে আর্জেন্টিনা নিশ্চিত গোল হজম করার হাত থেকে রক্ষা পায়। বিহাইচ বিপজ্জনকভাবে কয়েকজন খেলোাড়কে কাটিয়ে বক্সে ডুকে গোলবার লক্ষ করে শট নেয়ার সময় লাসান্দ্রো মার্টেনিজ ব্লক করে রক্ষা করেন। বল তার পায়ে লেগে কর্ণার হয়। ৮৭ মিনিটে ডি পলের কাছ থেকে বল পেয়ে মার্টিনেজের শট দ্বিতীয় বার দিয়ে বাইরে চলে যায়। পরের মিনিটে মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মতো করেই মেসি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন সেই মার্টিনেজকেই। তার সামনে ছিলেন শুধু্ গোলরক্ষক। কিন্তু তিনি চলন্ত বলে যে শট নেন, তা বারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। তার এমন নেয়া শট দেখে মেসি নিজেও অবাক হয়ে যান।
ইনজুরির টাইমের সাত মিনিট অস্ট্রেলিয়ার উপর দিয়ে আক্রমণেন ঢেউ তুলে আর্জেন্টিনা। এ সময় গোল না হওয়া ছিল যেন অবিশ্বাস্য। এক মর্টিনেজই তিন তিনটি সুযোগ নষ্ট করেন। দ্বিতীয় মিনিটে মার্টিনেজ সুযোগ নষ্ট করেন গোলরক্ষকের গায়ে মেরে। তৃতীয় মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে মেসির সেই বাম পায়ের যাদুকরি শট বার ঘেষে চলে যায়। পঞ্চম মিনিটে মেসি-মার্টিনেজ বল আদান-প্রদান করে নিয়ে বক্সে ঢুকে মেসি মার্টিনেজকে দিলে গোলরক্ষক পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন। সেই বল মেসির কাঠে আসলে তিনি সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেননি। এদিকে আর্জেন্টিনার এই ক্রমাগত আক্রমণ ঠেকিয়ে অস্ট্রেলিয়া গোল পরিশোধ করেই দিয়েছিল। শেষ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার নিশ্চিত আক্রমণ বাঁচিয়ে দেন গোল পোস্টের নিচে দাঁড়ানো গোলরক্ষক মার্টিনেজ। তরুণ গারাং কাউল শট নেয়ার আগে ইমিলিয়ানো মার্টিনেজ গোলপোষ্ট ছেড়ে গারাংয়ের শট নেয়ার রাস্তা ব্লক করে দেন। পরে তিনি যে শট নেন তা মার্টিনেজের কোলে গিয়ে জমা পড়ে। এটি ছিল একটি অসাধারণ গোল বাঁচানো। এমন গোল বাঁচানোর পর আর্জেন্টিনার খেলেোয়াড়রা গোলরক্ষককে নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেন। তাদের উল্লাস দেখে মনে হবে মার্টিনেজ গোল করেছেন!
এমপি/এএস