বিশ্বকাপে টিকে থাকার লড়াই জার্মানির
বিশ্বকাপের সবশেষ সংস্করণে মুকুটে ভার সইতে পারেনি জার্মানি। ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়নরা রাশিয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে এবং বিদায় নেয় গ্রুপপর্ব থেকে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির শঙ্কায় এখন জার্মানরা। সেই শঙ্কা এড়িয়ে বিশ্বকাপে টিকে থাকা লড়াইয়ে আজ রাতে স্পেনের মুখোমুখি হবে হ্যান্স ফ্লিকের শিষ্যরা।
বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় আল বায়েত স্টেডিয়ামে লড়বে দুই দল। স্পেন বিশ্বকাপ শুরু করেছে সেরা উপায়ে। কোস্টারিকাকে বিধ্বস্ত করেছে ৭-০ গোলে। আর জার্মানরা হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে জাপান ম্যাচে। এশিয়ান প্রতিপক্ষের কাছে হারে ২-১ গোলে।
গত আসরও হার দিয়ে শুরু করেছিল জার্মানি।
রাশিয়ায় নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে মেক্সিকোতে ধরাশায়ী হয়েছিল ওই আসরের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ে পেলেও শেষটায় দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে সর্বনাশ হয়েছিল জার্মানদের। প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নেয় শিরোপা ধরে রাখার মিশন থেকে।
সেবার জার্মানির ডাগআউটে ছিলেন জোয়াকিম লো, এবার হ্যান্স ফ্লিক। নতুন কোচ দলকে বিশ্বমঞ্চে টিকিয়ে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এরই প্রমাণ পাওয়া যায় গতকালের সংবাদ সম্মেলনে। যেখানে দলের মুখপাত্র হয়ে নিয়মিত হাজির দিচ্ছেন দুজন করে, সেখানে ফ্লিক আসলেন একা।
কিন্তু কেন? সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্নের জবাবে জার্মান কোচ বলেছেন, ‘আমি একা এসেছি কারণ আমরা চাই না কোনো খেলোয়াড় প্রায় তিন ঘন্টা গাড়িতে কাটাক। তাই বলেছিলাম একাই করব। ২৬ খেলোয়াড়ই গুরুত্বপূর্ণ, তাই এখানে আমার সঙ্গে কোনো খেলোয়াড় নেই। আমাদের পুরো মনোযোগ আগামীকালের (আজকের) ম্যাচ ঘিরে।’
বাঁচা-মরার লড়াইয়ের আগে প্রস্তুতিতে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি ফ্লিক, ‘এই ম্যাচটা আমাদের জন্য জেতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মাঠে নিজেদের উপস্থিতি দেখাতে হবে। স্পেন এমন একটি দল যারা স্পষ্ট স্বয়ংক্রিয়তা আছে, যেভাবেই খেলুক না কেন। তবে আমাদেরও একটা পরিকল্পনা আছে। আশা করি তা কার্যকর হবে।’
এদিকে, টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত শুরু পেলেও জার্মানিকে নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক স্পেন। কোচ লুইস এনরিকে বলেছেন, ‘(কোস্টারিকা ম্যাচে) আমরা নিজেদের স্বাভাবিক খেলা দিয়ে সেই জয় পাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা তিন পয়েন্ট পেয়েছি, এটাই। এটি একটি দুর্দান্ত জয় যা আমাদের আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে দেয়।’
স্পেন কোচ আরও বলেন, ‘তবে আমাদের খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকা উচিত নয়। আমরা জার্মানির মতো প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হচ্ছি, যাদের বিপক্ষে আমরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হতে পারি না। অন্যথায় তারা আমাদের হাতুড়ি-পেটা করবে। এটা সত্যিই কঠিন চ্যালেঞ্জ।’
ম্যাচ ফ্যাক্ট
* বিশ্বকাপে পঞ্চমবার মুখোমুখি হবে স্পেন এবং জার্মানি, যা টুর্নামেন্টে কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার হবে স্প্যানিশদের। বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্রাজিলের সঙ্গে পাঁচবার দেখা হয়ে গেছে তাদের। বিগ ইভেন্টে জার্মানির বিপক্ষে প্রথম তিন দেখায় জয় পায়নি স্পেন (১ ড্র, ২ হার)। তবে সবশেষ ২০১০ সালে সেমিফাইনালে জার্মানদের ১-০ গোলে পরাস্ত করেছিল ওই আসরের চ্যাম্পিয়নরা।
* সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে স্পেনের বিপক্ষে শেষ ৭ ম্যাচের মাত্র ১টিতে জিতেছে জার্মানি (২ ড্র, ৪ হার)। ১-০ গোলে সেই জয়টি এসেছে ২০১৪ সালের নভেম্বরে, প্রীতি ম্যাচে। ১৯৮৮ ইউরোর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ম্যাচে কখনোই স্পেনকে হারাতে পারেনি জার্মানি। একই সময়কালে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে স্পেন জিতেছে তিনবার, ড্র হয়েছে দুই ম্যাচ।
* জার্মানি বিশ্বকাপে তাদের সবশেষ চার ম্যাচের তিনটি হেরেছে। টুর্নামেন্টে তৃতীয়বার টানা দুই ম্যাচ হারল তারা। আগের দুবার ১৯৫৮ ও ১৯৮২ সালে। পূর্বে কখনোই বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচ হারেনি জার্মানরা।
* স্পেন কোস্টারিকাকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে। টুর্নামেন্টে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় জয়। এর অগের মাত্র তিন সংস্করণে স্পেন তাদের প্রথম দুই ম্যাচ জিতেছে: ১৯৫০, ২০০২ এবং ২০০৬ সালে।
* গত বছরের ন্যায় এবারও হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে জার্মানি। টুর্নামেন্টে কখনোই গ্রুপপর্বে টানা দুই ম্যাচ হারেনি তারা।
* স্পেন বিশ্বকাপে পেনাল্টি থেকে ১৬ গোল করেছে, যা টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে অন্য সব দলের তুলনায় সর্বোচ্চ।
* জার্মানির টানা ২৯ ম্যাচ অপরাজেয়-যাত্রা থেকে বিশ্বকাপে। জাপানের কাছে তারা হেরেছে ২-১ গোলে।
এমএমএ/