ব্রাজিলের নান্দনিক ফুটবলে ধরাশায়ী সার্বিয়া
সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনা ও জাপানের কাছে জার্মানির হারের পর বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল এর পরের শিকার কে? সার্বিয়ার বিপক্ষে আজ (২৫ নভেম্বর) ব্রাজিলের খেলা থাকায় তীর ছিল সে দিকেই। কিন্তু এই সব ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে ব্রাজিল ২-০ গোল জয় দিয়ে দারুণভাবে শুরু করেছে কাতার বিশ্বকাপ। দলের হয়ে দুইটি গোলই করেন রিচার্লিসন।
যে মাঠে আর্জেন্টিনার পতন হয়েছিল, সেই লুসাই স্টেডিয়ামেই উড়েছে ব্রাজিলের পতাকা। ব্রাজিলের নান্দনিক খেলার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি সার্বিয়া। একচেটিয়া আক্রমণ করে খেলেছে তারা। সার্বিয়ার খেলোয়াড়রা সারাক্ষণই ব্যস্ত ছিল ব্রাজিলের আক্রমণ ঠেকাতে। ব্রাজিল যেভাবে খেলেছে তাতে আরও অধিক গোলে জয়ী হলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। গোটা ম্যাচে সার্বিয়ার খেলোয়াড়রা বলার মতো কোনো আক্রমণই গড়তে পারেননি।
প্রথমার্ধে ব্রাজিল বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু গোলের মুখ দেখতে পারেনি। নেইমার, রিচার্লিসন, রাফিনহা, ভিনিসিয়াস জুনিয়ররা হতাশ করেন। প্রথম সুযোগটি আসে ব্রাজিলের আশার প্রতীক নেইমারের মাধ্যমে। ১৪ মিনিটে তার নেওয়া কর্নার শট বাঁক খেয়ে সরাসরি গোলে ঢোকার মুহূর্তে সার্বিয়ার গোলরক্ষক বানজা মিলিনকভিক কর্নার করে রক্ষা করেন। এরপর শুরু হয় ভিনিসিয়াস ‘শো’।
ব্রাজিল একের পর এক আক্রমণ করেছে আর ভিনিসিয়াস-রিচার্লিসনরা সেখানে ফল এনে দিতে পারেননি। ২৮ মিনিটে থিয়াগো সিলভা দারুণ পাস দেন ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে। বাঁ দিক দিয়ে দ্রুতগতিতে ঢুকছিলেন ভিনিসিয়াস। কিন্তু দারুণ ডাইভে তাকে রুখে দেন সার্বিয়ার গোলরক্ষক। ৩৩ মিনিটে নেইমারের চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয় সার্বিয়ার রক্ষণে। পরক্ষণে রাফিনহার ভুলে সুযোগ নষ্ট করে ব্রাজিল। ৪১ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়র বল নিয়ে বক্সে ডুকে গোলরক্ষককে একা পেয়েও বারের বাইরে মেরে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই খেলার সবচেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করে ব্রাজিল। গোলরক্ষককে একা পেয়েও সরাসরি তার শরীরে মেরে ব্রাজিলকে গোলবঞ্চিত করেন রাফিনহা। ৪৮ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে নেইমার বাইরে মেরে ব্রাজিলের গোল পাওয়াটাকে আরও বিলম্বিত করে তুলেন। ৬১ মিনিটে আলেক্স সান্দ্রার বাম পায়ের বুলেট শট সাইড বারে লেগে ফিরে আসলে ব্রাজিল সমর্থকদের হতাশা বাড়ে।
অবশেষে ৬৩ মিনিটে ব্রাজিল সমর্থকদের উল্লাস করার উপলক্ষ এনে দেন রিচার্লিসন। কৃতিত্ব ভিনিসিয়াস জুনিয়রের। বক্সের ভেতর থেকে তার ডান পায়ের কোনাকুনি শট সার্বিয়ার গোলরক্ষক বানজা মিলিনকভিক ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সামনে অরক্ষিত থাকা রিচার্লিসন ডান পায়ের টোকায় গোল করেন। ব্রাজিলের হয়ে গত ৮ ম্যাচে রিচার্লিসনের এটি ছিল সপ্তম গোল। আবার বিশ্বকাপে ২০১০ সালে নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের পর ব্রাজিল প্রথমে গোল করে ম্যাচ আর হারেনি।
৭২মিনিটে ভিনিসিয়াসের কাছ থেকে বল পেয়ে এই রিচার্লিসনই দর্শনীয় ভলি শটে গোল করে ম্যাচের সব ব্যর্থতা ডেকে দেন।
দ্বিতীয় গোলের পর রিচার্লিসনকে কোচ তুলে নিলে তিনি আর হ্যাট্রিক করতে পারেননি। তার আগে পরে মাঠ থেকে তুলে নেওয়া হয় ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও নেইমারকেও। আক্রমণের প্রধান তিন অস্ত্রকে তুলে নেওয়ায় পরে ব্রাজিল আর কোনো গোল পায়নি। তবে দাপট অব্যাহত ছিল।
এমপি/এসজি