চমকের অপেক্ষায় ইকুয়েডর, জবাব দেবে নেদারল্যান্ডস
সৌদি আরব অঘটন ঘটিয়েছে আর্জেন্টিনা ম্যাচে। জার্মানিকে অপ্রত্যাশিত হার উপহার দিয়েছে জাপান। চলতি বিশ্বকাপের দুই অঘটন এখন ইকুয়েডরের আত্মবিশ্বাসের রসদ। আগামীকাল নেদারল্যান্ডস ম্যাচে চমকের অপেক্ষায় লাতিন অঞ্চলের দলটি। অপরদিকে, জবাব দিতে প্রস্তুত ডাচরা।
আল রায়ানে খলিফা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় মুখোমুখি হবে দুই দল। ‘এ’ গ্রুপে এটা তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ। দুই দলই বিশ^কাপ শুরু করেছে ২-০ গোলের জয় দিয়ে। কাল টানা দ্বিতীয় জয়ে নকআউটে উঠার পথটা অনেকাই সহজ হয়ে যাবে যেকোনো এক দলের।
তার আগে, বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) ভিন্ন দুই সংবাদ সম্মেলনে দুই দলের কোচ ও খেলোয়াড় জানান তাদের প্রত্যাশার কথা। ডাচ বস ফন গাল বলেন, ‘ইকুয়েডর সেনেগালের চেয়ে বেশি সংগঠিত দল, তাদের বুদ্ধিমান খেলোয়াড় আছে এবং আমরা মনে করি তারা সেনেগালের চেয়ে আমাদের জন্য (ম্যাচ) আরও কঠিন করে তুলবে।’
তাই শিষ্যদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ফন গাল, ‘বল দখলে আমরা সেনেগালের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছি সেভাবে খেলা যাবে না। আমরা যখন আরও গুরুত্বপূর্ণ দলের বিপক্ষে খেলব, তখন আমাদের এ দিক থেকে উন্নতি করতে হবে। অন্যথায় আমরা জিততে পারব না।’
কোচের সুরে সুর মিলিয়েছেন ডাচ ডিফেন্ডার ডেনজেল ডামফ্রিজ। তিনি বলেন, ‘ইকুয়েডর শরীর-নির্ভর একটি দল। আমরা জানি কী আশা করতে হবে। মনোযোগ আমাদের নিজেদের উপর, নিজেদের খেলার উপর হতে হবে। এটা ঠিক থাকলে আমরা সবার বিপক্ষে ভালো খেলতে পারব।’
এদিকে, হারের মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে প্রস্তুত গুস্তাফো আলফারো শিষ্যরা। ইকুয়েডর কোচ বলেন, ‘আগামীকালের ম্যাচ হারের জন্য বরাদ্দ। এটা একই রকম হয় যখন আপনি আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের মুখোমুখি হন। আমাদের সবকিছু পাওয়ার আছে এবং অনেক কিছু হারানোর আছে।’
আলফারো যোগ করেন, ‘আমি আমার দল নিয়ে খুশি। তবে নেদারল্যান্ডস বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। আমাদের মানসিক এবং শারীরিক দিক থেকে শক্তিশালী হতে হবে। মাঠ ছাড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কঠোরভাবে (খেলা) চালিয়ে যেতে হবে। কাতারের বিপক্ষে আমরা যা করেছি সেটা নেদারল্যান্ড বা সেনেগাল ম্যাচে যথেষ্ট হবে না, আমাদের উন্নতি করতে হবে।’
কাতারের বিপক্ষে কাতারের বিপক্ষে ইকুয়েডরের জয়ের ম্যাচে দুটো গোলই করেছেন ইনার ভ্যালেন্সিয়া। একইসঙ্গে ওই ম্যাচে হাঁটুর চোটে ভুগেন তিনি। তবে আলফারোর বিশ্বাস, ইকুয়েডর ম্যাচে ভ্যালেন্সিয়ার সার্ভিস পাবেন তিনি, ‘আমি অন্য দিন বলেছিলাম যে আগুনও ইনারকে থামাতে পারে না। এখন বিষয়টা যদি তার উপর ছেড়ে দেই, সে খেলবে। আশা করছি এই বিকালে অনুশীলনে ভালোভাবে ফিরবে সে।’
ইকুয়েডর মিডফিল্ডার সেবাস্তিয়ান মেন্দেজের ভাবনায় চমক। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ফেবারিটরা হেরেছে (আর্জেন্টিনা ও জার্মানি)। পরের দলটি আমরা হতে চাই যারা চমক দেখাবে। আমরা আমাদের সক্ষমতায় বিশ্বাস রাখি। আমরা সব ধরনের ঘটনার জন্য প্রস্তুত।’
২৫ বছর বয়সী ফুটবলার আরও বলেন, ‘এই দলটি একটি পরিবারের মতো এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সবাই একে-অন্যের উপর নির্ভর করতে পারে। এটি আমাদের শক্তিশালী করে তোলে, এটি আমাদের আরও ভালো করে তোলে। বিশ্বকাপে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার জন্য ইকুয়েডর ম্যাচটি একটি অনন্য মুহূর্ত। আমরা প্রতিটি মিনিট উপভোগ করি এবং দেশের মানুষকে খুশি করতে চাই।’
ম্যাচ ফ্যাক্ট
* ফুটবলে তৃতীয়বার মুখোমুখি হবে হল্যান্ড এবং ইকুয়েডর। বিশ্বকাপের প্রথমবারের মতো। ২০০৬ মার্চে প্রথম প্রীতি ম্যাচে হল্যান্ড জিতেছিল ১-০ গোলে। ২০১৪ মেতে দুই অপর প্রীতি ম্যাচ অমীমাংসিত থেকে যায় ১-১ গোলে।
* নেদারল্যান্ডস লাতিন অঞ্চলের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তাদের ১৪ বিশ্বকাপ ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটিতে হেরেছে (৮ জয়, ৪ ড্র) : ১৯৭৮ সালে ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে এবং ১৯৯৪ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে হেরেছে।
* ইকুয়েডর ইউরোপিয়ান দলের বিপক্ষে ৭ বিশ্বকাপ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ২টিতে জিতেছে (১ ড্র, ৪ হার) : ২০০২ সালে ক্রোয়েশিয়া এবং ২০০৬ সালে পোল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছে।
* সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ইকুয়েডর তাদের শেষ ৭ ম্যাচের প্রতিটিতে ক্লিনশিট রেখেছে (৩ জয়, ৪ ড্র)। গত মার্চে তাদের জালে সবশেষ বল পাঠিয়েছেন আর্জেন্টিনার জুলিয়ান আলভারেজ।
* নেদারল্যান্ডস তাদের শেষ চার বিশ্বকাপ ম্যাচের প্রতিটিতে ক্লিনশিট রেখেছে, যা টুর্নামেন্টে তাদের দীর্ঘতম সেরা যাত্রা। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ ম্যাচে ক্লিনশিট রাখা সবশেষ দল সুইজারল্যান্ড।
* নেদারল্যান্ডস বিশ্বকাপে তাদের শেষ ১৪ গ্রুপপর্বের ম্যাচে অপরাজিত। টুর্নামেন্টে শুধুমাত্র জার্মানি (১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ১৬ ম্যাচে) এবং ব্রাজিল (সার্বিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে) এর বেশি ম্যাচ অপরাজিত থেকেছে।
* বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো একই সংস্করণে ব্যাক-টু-ব্যাক জয়ের স্বপ্ন দেখছে ইকুয়েডর। এর আগে ২০০৬ সালে টানা দুই ম্যাচ জিতে নকআউটপর্ব নিশ্চিত করেছিল তারা।
* বিশ্বকাপে ইকুয়েডরের সবশেষ পাঁচ গোলের প্রতিটি করেছেন এনার ভ্যালেন্সিয়া। টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে মাত্র তিনজন খেলোয়াড় একটি দেশের হয়ে টানা ছয়টি গোল করেছেন : ১৯৬৬ সালে পর্তুগালের ইউসেবিও, ১৯৮২ সালে ইতালির পাওলো রুশি এবং ১৯৯৪ সালে রাশিয়ার ওলেগ সালেঙ্কো।
* নেদারল্যান্ডস কোচ লুইস ফন গাল দায়িত্বে থাকাকালীন বিশ্বকাপের ৮ ম্যাচের একটিতেও হারেননি (৬ জয়, ২ ড্র, শুটআউট বাদে)। শুধুমাত্র ভিট্টোরিও পোজো টুর্নামেন্টে কখনো না হেরে (৯ ম্যাচে ৮ জয় এবং ১ ড্র) আরও বেশি ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন।
এমএমএ/