আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষায় ৩৬ অতিক্রম!
বিশ্বের আর কোথায়ও নয়, এটা শুধু বাংলাদেশ বলেই সম্ভব। বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ কখনই খেলেনি। অদূর ভবিষ্যতেও খেলার কোনো সম্ভাবনা নেই? অথচ প্রতি ৪ বছর পরপর যখন বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসে তখন বাংলাদেশে যেরকম উন্মাদনা দেখা যায়, তা বিরল। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা আর জার্সিতে ছেয়ে যায় লাল-সবুজের বাংলাদেশ। দেখে বোঝার উপায় নেই এই দেশ বিশ্বকাপে খেলছে না। আগন্তুক কেউ বাংলাদেশে আসার পর অন্য কোনো দেশে এসে পড়েছেন ভেবে থাকলেও ভুল করবেন না।
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের সাক্ষাৎ ঘটে না। কিন্তু এই দুই দল নিয়ে বাংলাদেশের সমর্থকরা তর্কে লিপ্ত হন। প্রতিযোগিতা করে প্রিয় দলের পতাকা বেশি উড়ানো, চলে দল বেঁধে মাস্তি। পরিধানে থাকে সমর্থিত দলের জার্সি। যখন দুই দলই ফাইনালের আগে বিদায় নেয়, তারপর বিশ্বকাপের আমেজ ঝিমিয়ে পড়ে বাংলার জমিনে।
২১ আসরের মাঝে দুই দল মিলে ফাইনাল খেলেছে ১২ আসরে। যেখানে ব্রাজিল ৫ বার ও আর্জেন্টিনা ২ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ ছাড়া ব্রাজিল ৪ বার সেমি ফাইনাল খেলে বিদায় নিয়েছে।
এবার কাতার বিশ্বকাপেও দুই দলকে নিয়ে একই রকম উন্মাদনা বিদ্যমান। নেইমারের ব্রাজিলকে নিয়ে সমর্থকরা যেমন আশাবাদী, তেমনি আশাবাদী মেসির আর্জেন্টিনাকে নিয়েও। তবে মেসি ভক্তরা এবার একটু বেশি আবেগপ্রবণ। তাদের এই আবেগপ্রবণের কারণ মেসির শেষ বিশ্বকাপ। এই সময়ের বিশ্বসেরা ফুটবলার এখন পর্যন্ত জিততে পারেননি বিশ্বকাপের মুকুট। এবার না পারলে এখানে অপূর্ণতায় থেকে যাবে মেসি ভক্তদের। অথচ এই মেসির ললাটে অগণিত সাফল্য আছে। সবই ক্লাব ফুটবলে। কিন্তু মেসি কি পারবেন তার কোটি কোটি ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে। আগামীকাল ২২ নভেম্বর সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে মেসির স্বপ্নপূরণের শেষ যাত্রা।
বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকের পাল্লা প্রায় সমান সমান হলেও সাফল্যের দিক দিয়ে কিন্তু ব্রাজিলই এগিয়ে। কারণ তারা ৫ বার চ্যাম্পিয়ন, ২ বার রানার্সআপ হয়েছে। ৪ বার খেলেছে সেমি ফাইনাল। সেখানে আর্জেন্টিনা ২ বার চ্যাম্পিয়ন ও ৩ বার রার্নাসআপ হয়েছে। সময়ের ব্যবধানেও ব্রাজিল এগিয়ে। তারা সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ২০০২ সালে। অংঙ্কের হিসাবে ২০ বছর যাবৎ তারা শিরোপাহীন। সেখানে আর্জেন্টিনা সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল ১৯৮৬ সালে। ৩৬ বছর যাবৎ তারা ভুগছে শিরোপা খরায়।
ফুটবল জাদুকর ম্যারাডোনার একক দ্যুতিতে আর্জেন্টিনা ১৯৭৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার এক আসর পরই ১৯৮৬ সালে জিতেছিল দ্বিতীয় শিরোপা। এমনকি এই ম্যারাডোনার নৈপুণ্যেই ১৯৯০ সালেও খেলেছিল ফাইনাল। ফুটবল বিশ্বে মেসির আগমনের পর আর্জেন্টিনা ভক্তদের শিরোপা জেতার পালে হাওয়া লাগে বেশি করে। কিন্তু মেসি তাদের চাহিদা পূর্ণ করতে পারেননি। ২০১৮ সালে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু জামার্নির সঙ্গে আর পেরে উঠেননি। ১-০ গোলে হেরে মেসি ভক্তদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। যেমনটি হয়েছিল ১৯৯০ সালে জামার্নির কাছে একই ব্যবধানে হেরে।
৩৬ সংখ্যাটি এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সঙ্গে বেশ ভালোভাবে জড়িয়ে পড়েছে। ৩৬ বছর তারা যেমন শিরোপা জিততে পারেনি, তেমনি আবার সৌদি আরবের বিপক্ষে মিশন শুরু করার আগে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত। সৌদি আরবকে হারাতে পারলে বা ড্র করলে যেমন ৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচানোর মিশন শুরু করবে, তেমনি টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার নতুন রেকর্ডে ভাগ বসাবে। বর্তমানে ইতালিও ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত। ইতালি এই রেকর্ড গড়তে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিল ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর। তাদের এই কীর্তি শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর। সৌদি আরবের বিপক্ষে হার এড়াতে পারলে ২৬ নভেম্বর মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচেও যদি ড্র কিংবা জিতে তখন আর্জেন্টিনা এককভাবে হবে এই রেকর্ডের মালিক।
আর্জেন্টিনার এই রেকর্ডে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৩ বারের মোকাবিলা আছে। যেখানে তারা জয়ী হয়েছিল ২ বার, ড্র করেছিল ১ বার। ৩৬ ম্যাচে তারা জয় পেয়েছিল ২৭টিতে। বাকি ৯টি হয়েছে ড্র।
আর্জেন্টিনার এই মিশন শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে কোপা আমেরিকা আসরে। ১৬ জুলাই তারা চিলিকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল। ৩৬ ম্যাচের মাঝে সবচেয়ে বেশি ৫ ম্যাচ খেলেছে চিলির বিপক্ষে। ২ বার জিতেছে, ৩ বার ড্র করেছে। ইকুয়েডর ও উরুগুয়ের বিপক্ষে খেলেছে ৪ বার করে। দুই দলের বিপক্ষেই ৩ বার করে জিতে ১ বার করে ড্র করেছে। ব্রাজিল ছাড়া ৩ বার করে খেলেছে বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে ও কলম্বিয়ার বিপক্ষে। বলিভিয়ার বিপক্ষে ৩ বারই জয়ী হয়েছে। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ১ বার জিতে ২ বার ড্র হয়েছে। কলম্বিয়ার বিপক্ষে জয় ২ বার, ড্র ১ বার। ২ বারের জয়ের মাঝে একটি আছে কোপা আমেরিকার সেমি ফাইনালে, টাইব্রেকারে। নির্ধারিত সময়ে খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল। পরে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে জয়ী হয়েছিল পেরু ও ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ২ বার করে খেলে ২ বারই জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া ১ বার করে খেলেছে মেক্সিকো, জামার্নি, ইতালি, ইস্তোনিয়া, হন্ডুরাস, জামাইকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। জামার্নি ছাড়া বাকি সবার বিপক্ষে জয় পেয়েছিল।
এমপি/এসজি