বিশ্বকাপের উন্মাদনা, অলিতে-গলিতে উড়ছে পতাকা
রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। আর বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে রাজধানীর অলিতে-গলিতে পতাকা উড়াচ্ছেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। শনিবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব দৃশ্য চোখে পড়ে।
বিশ্বকাপ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে, কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকার অলিতে-গলিতে। বিশ্বকাপের প্রতিটি আসর শুরুর আগেই রাজধানী পরিণত হয় পতাকার শহরে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পছন্দের দলের জন্য সমর্থকরা পতাকা উড়িয়ে ও জার্সি পরে আনন্দে মেতেছেন। আর মাত্র একদিনের অপেক্ষায় আছেন তারা। বিশ্বকাপকে ঘিরে অনেক পরিবার মাতে আনন্দ উল্লাসে।
আগামী এক মাস বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তেজনা-উন্মাদনা ছুঁয়ে যাবে গোটা বিশ্বকে। বৈশ্বিক এই জনপ্রিয় আসরে বাংলাদেশ ফুটবল দল না থাকলেও প্রিয় দলের সমর্থনে বিভোর থাকেন প্রেমময়ী সমর্থকরা। প্রতি বিশ্বকাপে তারা প্রিয় দলের পতাকা উড়িয়ে জানান দেন তাদের ভালোবাসার। প্রিয় দল নিয়ে করেন ভিন্ন ভিন্ন প্রতিযোগিতা।
দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন গলিতে দেয়ালে আঁকা হয়েছে পছন্দের দলের পতাকা। আবার অনেক জায়গায় ব্যানার টাঙিয়ে বা পছন্দের দলের পতাকার রঙে ঘর রাঙিয়ে ভালোবাসার জানান দিচ্ছেন সমর্থকরা। এ ছাড়া বাসাবাড়ির ছাদ, বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, রিকশা, ভ্যানে এসব পতাকা উড়তে দেখা গেছে। বাদ যায়নি পরিবহন, চায়ের দোকান, অফিস এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।
বরাবরের মতো ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশিরা ফুটবল পাগল জাতি। প্রতি ৪ বছর পর যখন বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়, তখন সবাই একসঙ্গে পছন্দের দলের সমর্থনে মেতে উঠে উন্মাদনায়।
এখন পর্যন্ত বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার অধিভুক্ত ২১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯২তম। বিশ্ব ফুটবলে নিজ দেশের অবস্থানে মোটেও কারও গুরুত্ব বা গ্রাহ্য নেই। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা বড় দলগুলোর পতাকা পতপত করে উড়তে দেখা যায় এদেশে। এসব পতাকা দেখে বোঝা যায় বাঙালিরা কতটা ফুটবলপ্রেমী।
৪ বছর পরপর বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতেই বিপণিবিতানে ভিড় জমে সমর্থকদের। ফুটবলে একটি দলের মনোনীত কয়েক রঙের জার্সি থাকে। সমর্থকরা সবাই তাদের পছন্দের জার্সি কিনে তা গায়ে দিয়ে ঘুরে প্রমাণ করেন তারা সেই দলের ভক্ত।
ফুটবলপ্রেমীরা তাদের পছন্দের দেশের পতাকা হাটবাজার ও বাসা-বাড়ির ছাদে, আঙিনায়, দোকানে, রাস্তার পাশে, গাছের ডালসহ বিভিন্ন জায়গায় উত্তোলন করেন।
দেখা গেছে, আমাদের দেশে ব্রাজিলের ও আর্জেন্টিনার সমর্থকই বেশি। সেই হিসেবে তৃতীয় সারিতে রয়েছে জার্মানির সমর্থকরা। তবে একটু কম বললেই চলে। বেশিরভাগ সমর্থক লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রেনালদো আর নেইমারের ভক্ত। রোনালদো ও মেসির মধ্যে কে সেরা ভক্তদের মধ্যে এই লড়াই চললেও রোনালদোর পর্তুগালের সমর্থকের সংখ্যাও কম নয়।
এদিকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রিয় দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সমর্থকরা। চলে পোস্ট ও ভিডিও শেয়ার। এ নিয়ে চলে বাগযুদ্ধ আবার কখনো কেউ কেউ তর্কাবিতর্কে লিপ্ত হচ্ছেন। অনেকের মধ্যে শুরু হয় ব্যক্তিগত আক্রমণ। যা একটি শান্তিপ্রিয় আনন্দকে নষ্টের পথে নিয়ে যায়।
কথা হয় ব্রাজিলের সমর্থক আল-নোমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আসলে যখন থেকে খেলা দেখি তখন থেকে ব্রাজিলের খেলা ভালো লাগে। খেলা দেখে ব্রাজিলের প্রেমে পড়ি। আর ব্রাজিল ৫ বারের বিশ্বকাপজয়ী সেদিক থেকেও ব্রাজিলের প্রতি ভালোবাসা জন্মে। তখন কাকার খেলা ভালো লাগত। সব মিলিয়ে আমি একজন ব্রাজিল ভক্ত।
আর্জেন্টিনার সমর্থক মোহাম্মাদ ফিরোজ বলেন, আমার পছন্দের দল আর্জেন্টিনা। প্রিয় দলের জন্য শুভকামনা রইল। মেসিবাহিনী যদি সেরা খেলাটা খেলতে পারে তাহলে আর্জেন্টাইনরাই বিশ্বকাপ ঘরে তুলবে। আমি পতাকা উড়িয়েছি এবং জার্সি গায়ে পছন্দের দলের খেলা উপভোগ করব এটাই আমার আনন্দ।
কেএম/এসজি