রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ | ৭ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

বিশেষ সাক্ষাৎকার

‘বাংলাদেশের মেয়েরা যেন সাবিনাকে ফলো করে’

সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এক সপ্তাহেরও বেশি হয়েছে। কিন্তু তার ঢেউ এখনো আছে। চলছে সাবিনাদের সংবর্ধনার পর সংবর্ধনা। খেলোয়াড়দের নিশ্বাস ফেলার সময় নেই। এই ব্যস্ততার কারণ খেলোয়াড়দের এখনো ছুটি দেওয়া হয়নি। এই ঢেউ থামার পর তারা যাবেন নিজ নিজ বাড়িতে। এ রকম ব্যস্ততার মাঝেও অধিনায়ক বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রথমবারের মতো এককভাবে এসেছিলেন ঢাকাপ্রকাশ-এর অফিসে। দিয়েছেন অনেক সময়। হয়েছে অনেক কথা। সেই সব কথার উল্লেখযোগ্য অংশ ঢাকাপ্রকাশ-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। 

ঢাকাপ্রকাশ: ঢাকায় নামার পর বিমানবন্দরে এত মানুষ থাকবে, বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনে আসার পথে দুই পাশে এ রকম মানুষের ঢল থাকবে এটি কি আপনারা ধারণা করতে পেরেছিলেন?

সাবিনা: ম্যাচের দুই দিন আগে থেকে সবার প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল। সবাই এক্সাইটেড হয়ে পড়েছিল। আমিও একটা পর্যায়ে ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম যে সবার মুখে হাসি ধরে রাখতে পারব কি না? ম্যাচ জেতার পর আমাদের ওমেন্স উইংসের চেয়ারম্যান কিরন (মাহফুজ আক্তার কিরন) আপা আমাদের বলেছিলেন তোমাদের জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। তোমরা গেলেই বুঝতে পারবে। আসলে এইভাবে যে আমরা দেখব এটা আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। মানুষ যেভাবে বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবন পর্যন্ত ছিল, আমার ক্যারিয়ারে বা আমার বয়সে আমি এত মানুষ আগে দেখিনি। আমি বারবার বলে আসছি মানুষের এই ভালোবাসার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এটা আসলে অনেক বড় একটা পাওয়া।

ঢাকাপ্রকাশ: ক্লান্তি ভর করেছিল কি?

সাবিনা: ক্লান্তি বলতে বিমানবন্দর থেকে আমরা ৫/৬ ঘণ্টার মতো দাঁড়িয়ে এসেছি। মানুষ যেভাবে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল, রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল, সেটার তুলনায় আসলে এটা কিছু না। তারা আমাদের জন্য এসেছে। ক্লান্তি অবশ্যই ছিল। মেয়েরা স্টিল নাউ টায়ার্ড। কারণ, বিশ্রাম ৬/৭ দিন পায়নি বলতে গেলে। ক্লান্তির সঙ্গে সঙ্গে ভালো লাগা, ভালোবাসা ছিল। এটাই বড় কথা।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনারা তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যাননি। কখন মনে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে?

সাবিনা: প্রথমত আমরা ওভার কনফিডেন্ট ছিলাম না। আমাদের লক্ষ্য ছিল ম্যাচ বাই ম্যাচ। আমি ভারতের খেলা দেখছিলাম। ওদের খেলা দেখার পর মনে হয়েছে এবার আমাদের একটা চান্স আছে। অন্য যে দলগুলো ছিল, তাদের থেকে আমাদের মেয়েরা ফিজিক্যালি অনেক ফিট। মেয়েরা সেটাই মাঠে ব্যবহার করেছে। অন্য দলের প্লেয়াররাও বলেছে বাংলাদেশ একই রিদমে ৯০ মিনিট খেলতে পারে। এটা একটা দলের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। আমরা কমিটেড ছিলাম যে সুযোগ যখন আছে সেটা যেন কাজে লাগাই।

ঢাকাপ্রকাশ: আগে কখনো ভারত-নেপাল কোনো দলকেই হারাতে পারেননি। এবার দুই দলকেই হারিয়েছেন? কোন দলকে বেশি শক্তিশালী মনে হয়েছে?

সাবিনা: দুই দলের খেলার ধরন দুই রকম। ভারতের অভিজ্ঞতা বেশি। নেপালেরও আছে। কিন্তু ওদের বেশিরভাগ খেলোয়াড় আমাদের মতো আন্ডার নাইনটিন থেকে এসেছে। ফিজিক্যালি ওরাও অনেক ফিট। দুইটিই ভালো দল। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত তো অনেক শক্তিশালী দল।

ঢাকাপ্রকাশ: সংবর্ধনা পাচ্ছেন কেমন লাগছে?

সাবিনা: আগের কথায় যেতে হয়। কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। গত পরশু শহীদ মিনারে আমরা সাংস্কৃতিক জোট থেকে সংবর্ধনা পেয়েছি। গতকাল সেনাবাহিনী প্রধানের সংবর্ধনা পেয়েছি। এগুলো আসলে মেয়েদের উৎসাহিত করে। গতকালের অনুষ্ঠানে বাবা-মায়েরাও উপস্থিত ছিলেন। এ রকম স্টেজে যখন বাবা-মাকে যখন আনা হয়, তখন ‍তারও অনেক খুশি হন। তাদের মনে হয় যে মেয়েকে ফুটবল দিয়ে ভুল করেননি। মায়েরা, বাবারা যখন এ রকম স্টেজে মেয়েদের এভাবে দেখে এবং নিজেরাও সম্মানিত হয়, তখন বাবা-মাদের দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন হয়। গ্রামের দিকে ১৪/১৫ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে তারা বের হয়ে আসবে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হবে। তারা বের হয়ে আসবে। এখানে যখন মেয়েরা ভালো করে, ভাববে নিজেদের ভবিষ্যৎগড়ছে, করুক।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনাদের পরের টার্গেট?

সাবিনা: সাফে টার্গেট শিরোপা ধরে রাখা। কাজী সালাহউদ্দিন স্যার বলেছেন এশিয়া বা আশিয়ান পর্যায়ে খেলা। উইনের চেয়ে বেশিরভাগ ম্যাচ লস হতে পারে। কারণে এখানে ইউরোপ এশিয়ার ভালো ভালো দলের সঙ্গে খেলা। অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে এখানে আমরা অনেক পিছিয়ে থাকব। আগে আমরা ভারতের কাছে ৬ গোল খেতাম। নেপালরে কাছে ৩ গোলে হারতাম। এখন আমরা একটা অবস্থানে এসেছি। আমার মনে হয় সময় দিলে আমরা আরও ভালো করতে পারব।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনি দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল খেললেও সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রাতারাতি অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে না বললেও এখন হয়তো অনেকেই বলে ওই যে সাবিনা যাচ্ছে। শুনলে আসলে কেমন লাগে?

সাবিনা: এটা অবশ্যই একটা বড় প্রাপ্তি। পরিশ্রমের ফসল যখন পাই তখন আমাদের কাজের প্রতি আরও আগ্রহ বেড়ে যায়।

ঢাকাপ্রকাশ: ছোটবেলা অনেক খেলাধুলা করতেন? ফুটবলকে কখন বেছে নিলেন বা আগ্রহ হলো?

সাবিনা: আমাদের কোচ ছিলেন আকবর স্যার। আমরা একটা ব্যাচ ছিলাম। উনার দুইটা মেয়েও ছিল সেই ব্যাচে। আমরা সব খেলাই খেলতাম। আমি কাবাডি থেকে শুরু করে হ্যান্ডবল, ভলিবল সব খেলতাম। মহিলা ক্রীড়া সংস্থায় যখন খেলা হতো স্যার আমাদের নিয়ে আসতেন। ২০০৮ সালে সিটি সেল ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হতো । আমার ওটা দিয়েই শুরু। পরে সাফ গেমস হয় বাংলাদেশ। সেখানে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের সাতক্ষীরা থেকে ৫ জন ডাক পাই। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর আমি ফাইনাল সিলেকশনে টিকে যাই। সেখান থেকেই শুরু। এখনো আছি।

ঢাকাপ্রকাশ: শুরুর পথে বাধা পেয়েছিলেন অনেক। সে সময়ের ঘটনা মনে পড়ে?

সাবিনা: আমি যখন শুরু করি আমার বয়স ১২/১৩ ছিল। খেলার বয়সই ছিল। সে রকম প্রতিবন্ধকতা পাইনি। আমার পরিবারের ভালো সমর্থন ছিল। আমার বড় আপু, আমার বাবা-মা। আমরা ৫ বোন। আমাদের বোনদের মধ্যে কেমিস্ট্রি খুব ভালো। আমি আমাদের কোচদের দেখতাম আমরা যেখানে অনুশীলন করতাম, তখন ওখানের লোকাল লোকেরা ঝামেলা করত। কোচকে দেখতাম তাদের সঙ্গে ঝগড়া করতেন। উনাকে গালাগালিও করা হতো। স্যারকে দেখতাম পুলিশেরও হেল্প নিতেন। যখন মনে পড়ে, তখন খারাপ লাগে।

ঢাকাপ্রকাশ: ওদের সঙ্গে দেখা হলে এখন কী বলে?

সাবিনা: ওরা হয়তো গিল্টি ফিল করে যে ওই সময় ওদের হেল্প করা প্রয়োজন ছিল। তাহলে হয়তো মেয়েগুলো আরও ভালো করতে পারত।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনাকে দেখে আপনার এলাকার মেয়েরা কতটা উৎসাহী হয়েছে?

সাবিনা: ইতোমধ্যে আমি একটা একাডেমি করেছি, আমার এলাকার এক বড় ভাই আবু সাঈদ উনার হেল্প নিয়ে। উনি চেয়ারম্যান, আমি জেনারেল সেক্রেটারি। ইচ্ছে আছে সাতক্ষীরার ফুটবলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। ইতোমধ্যে দুই বছর হয়ে গেছে। এখন আমাদের এখানে ৬০/৭০ জন খেলোয়াড় আছে ছেলে মেয়ে মিলে।

ঢাকাপ্রকাশ: প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে দেশের বাইরে প্রফেশনাল লিগ খেলছেন। ছেলেদের ক্ষেত্রে সালাহউদ্দিন। সালাহউদ্দিনকে বলা হয় বাংলাদেশের কিংবদন্তি ফুটবলার। আপনি কি মেয়েদের ক্ষেত্রে কিংবদন্তি?

সাবিনা: আমি সেভাবে নিজেকে ভাবি না। মানুষ বলে থাকলে সেটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি ২০১৪/১৫ সালের দিকে শুনেছি সালাহউদ্দিন স্যার দেশের বাইরে খেলেছেন। তার ৪৫/৪৭ বছর পর আমি খেলছি। এটা অবশ্যই আমার জন্য গর্বের বিষয়। এটা কন্টিনিউ করছি এখনো। ৩০ তারিখ যাব মালদ্বীপ।

ঢাকাপ্রকাশ: চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কার কথা মনে পড়েছে প্রথম?

সাবিনা: আমার প্রথম মনে পড়েছে দেশের মানুষের কথা। অনেকে স্ট্যাটাস দিয়েছে ট্রফিটা দেশে নিয়ে আসুন ক্যাপ্টেন। এরকম কিছু ইমোশনাল স্ট্যাটাস আমি দেখেছি। আমার মনে হয়েছে দেশের মানুষ এখন হাসছে। শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সংবর্ধনায় কেউ কেউ বলেছেন যে খুশিতে তারা কান্না করে ফেলেছিলেন। এটা আসলে আমার মনে ধরেছিল প্রথমে যে, আমি মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছি।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনার ফুটবলার হওয়ার পেছনে আকবর আলী ছাড়া আর কার কার অবদান আছে?

সাবিনা: আমি মনে করি আমি নিজে। আমি যদি না যেতাম তাহলে আমি ফটুবলার হতাম না। আকবর আলী স্যার ছিলেন একট পন্থা। উনি আমাকে আমার বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। আমার বড় বোন অনেক সাপোর্ট দিয়েছিলেন। বাবা-মা সাপোর্ট দিয়েছিলেন সবচেয়ে বেশি। সাপোর্ট আমি আমার পরিবারের কাছ থেকে পেয়েছি।

ঢাকাপ্রকাশ: বাংলাদেশে প্রিয় ক্লাব কোনটা?

সাবনিা: সেরকম কোনো প্রিয় দল নেই। কারও খেলা সেভাবে ভালো লাগে না। তবে তারা উন্নতি করুক সেটা চাই। তবে একটা সময় আমিনুল ভাই, জয় ভাইরা যখন খেলতেন তাদের খেলা ভালো লাগত।

ঢাকাপ্রকাশ: এক সময় ফুটবল খুব জনপ্রিয় ছিল শুনেছেন। এখন খুলনার অনেকে ক্রিকেটার। এখন আবার আপনাকে দেখে কী উঠে আসছে?

সাবিনা: ট্রানজেশনটা মোমেন্টটা হবেই এটাই স্বাভাবিক। আমি শুনতাম। উনাদের খেলা দেখা হয়নি। উনাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখলেই বোঝা যায় উনারা কোনো মাপের প্লেয়ার ছিলেন। আমরা লাকি যে উনারা এখনো আছেন আমাদের ফেডারেশনে।

ঢাকাপ্রকাশ: ইউরোপীয় ফুটবল দেখেন। কোন ক্লাব প্রিয়?

সাবিনা: মেসি যখন ছিল বার্সেলোনার খেলা দেখতাম। এখন পিএসজিতে চলে গেছে। বেশির ভাগ খেলা দেখা হয় না। মধ্যরাতে খেলা দেখায়। ভালো লাগে রোনালদো, নেইমারের খেলা ভালো লাগত। বেশি ভালো লাগে ইনিয়েস্তার খেলা। উনার প্লেমেকার খেলা আমি খুব ভালো উপভোগ করতাম।

ঢাকাপ্রকাশ: উনাদের খেলা কতটা অনসুরণ করে থাকেন?

সাবিনা: নিজের বুদ্ধিমত্তাটা কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। কারণ, আমি মাঝে মাঝে যেহেতু প্লে মেকার হিসেবে খেলি, আমি ট্রাই করি ইনিয়েস্তাকে ফলো করার সেভাবে খেলে, পাস দেওয়ার।

ঢাকাপ্রকাশ: সামনে বিশ্বকাপ ফুটবল। কোন দলকে সমর্থন করেন?

সাবনিা: মেসির জন্য আর্জেন্টিাকে সাপোর্ট করি।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনাকে যদি বলা হয় মেসি-নেইমার-রোনালদো কার মতো হতে চান, কাকে বেছে নেবেন?

সাবনিা: আমি এই বিষয়ে দ্বিমত করতে চাই। আমি আসলে নিজের অবস্থানকে এভাবে রেখে যেতে চাই, যাতে মানুষ আমাকে ফলো করে। বাংলাদেশের মেয়েরা সাবিনার মতো হতে চায়। উনাদের মতো হতে হয়তো পারব না। তবে উনাদের অনুসরণ করার চেষ্টা করি।

ঢাকাপ্রকাশ: এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা থেকে শুরু করে সেরা খেলোয়াড়, সর্বোচ্চ গোলাদাতা, সেরা গোলরক্ষক, ফেয়ার প্লে সব কিছুই বাংলাদেশের। এ রকম সাফল্য আসবে ভেবেছিলেন, কেমন লাগছে?

সাবিনা: এটা একটা গ্রেট অ্যাচিভমেন্ট। বলে না আল্লাহ পাক যখন দেন পুরোটা ভরে দেন। ব্যাপারটা এ রকমই। আল্লাহর রহমত ছিল। অবশ্যই সষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা যে রকম পরিশ্রম করেছি এটা আমরা ডিজার্ব করি। এটার দাবিদার আসলে আমরাই।

ঢাকাপ্রকাশ: সানজিদার স্ট্যাটাস নিয়ে আপনার মতামত?

সাবিনা: আমি দেখেছি খেলার দিন। এত শর্ট টাইমে এভাবে ভাইরাল হয়ে যাবে ভাবিনি। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী ও ক্রীড়ামন্ত্রীকে বিষয়টি নোট করার জন্য।

এমপি/এসএন/এমএমএ/

 

Header Ad
Header Ad

ভারতের উত্তরপ্রদেশে এক ছাত্রীকে ৭ দিন ধরে আটকে ২৩ জন মিলে ধর্ষণ!

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে সাত দিন ধরে আটকে রেখে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিলের মধ্যে এই জঘন্য ঘটনাটি সংঘটিত হয়।

অভিযোগ, মাদক মিশ্রিত পানীয় খাইয়ে ২৩ জন যুবক ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে, এবং বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।

নির্যাতিতা তরুণী একটি ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং নিয়মিত দৌড়ের অনুশীলনের জন্য বারাণসীর ইউপি কলেজে যেতেন। পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, গত ২৯ মার্চ তিনি এক বন্ধুর সঙ্গে পিশাচমোচন এলাকার একটি হুক্কা বারে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন যুবক ছিলেন। তরুণীর অভিযোগ, কথোপকথনের সময় একজন যুবক তাঁর পানীয়তে গোপনে মাদক মিশিয়ে দেয়। মাদকের প্রভাবে তিনি প্রায় অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর অভিযুক্তরা তাঁকে সিগ্রা এলাকার বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে গিয়ে সাত দিন ধরে একের পর এক ধর্ষণ করে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন তরুণীর পূর্বপরিচিত ছিলেন, যার মধ্যে তাঁর সামাজিক মাধ্যমের বন্ধু এবং সহপাঠীরাও রয়েছেন।

ঘটনার পর থেকে তরুণী নিখোঁজ ছিলেন। ৪ এপ্রিল তাঁর খোঁজ মেলে, এবং ৬ এপ্রিল তাঁর পরিবার থানায় গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে ছয়জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া, হুক্কা বারের কর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

এই ঘটনা বারাণসীসহ গোটা উত্তরপ্রদেশে ব্যাপক ক্ষোভ ও শোকের সৃষ্টি করেছে। নির্যাতিতার পরিবার ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে, এবং এই মামলায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ।

তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে বরুণা এলাকার ডিসিপি চন্দ্রকান্ত মীনা বলেন, ‘‘তরুণী প্রথমে স্বেচ্ছায় তাঁর বন্ধুর সঙ্গে গিয়েছিলেন। কিন্তু বন্ধুরাই তাঁকে মাদক খাইয়ে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ। ৪ এপ্রিল তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়। এর পর ৬ এপ্রিল লালপুর থানায় অভিযোগ করেন নির্যাতিতা।’’ অভিযোগের ভিত্তিতে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। দোষীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

Header Ad
Header Ad

বিরামপুরে পিকআপের ধাক্কায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের বিরামপুরে পিকআপভ্যানের ধাক্কায় হাসান আলী (১৬) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নাঈম হোসেন নামে আরও এক যুবক।

দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পল্লবী (দোয়েল মোড়) এলাকায়।

নিহত হাসান আলী পৌর শহরের থানাপাড়া (লিচু বাগান) এলাকার বাসিন্দা মিলন হোসেনের ছেলে। সে এবার আমানুল্লাহ স্কুল থেকে এসএসসি ২০২৫ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিল বলে জানিয়েছেন স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুর ইসলাম।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে মোটরসাইকেলে করে হাসান আলী ও তার বন্ধু নাঈম শহরে ঘুরতে বের হয়। তারা যখন পল্লবী মোড় এলাকায় পৌঁছায়, ঠিক তখন গোবিন্দগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা একটি মালবাহী পিকআপ তাদের মোটরসাইকেলটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে হাসান আলী রাস্তায় ছিটকে পড়ে এবং পিকআপের চাকায় পিষ্ট হয়।

স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তাহাজুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আহত নাঈম হোসেন পৌর শহরের একই এলাকার নিয়ামত হক ভোলার ছেলে বলে জানা গেছে।

বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক জানান, নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তরুণ শিক্ষার্থী হাসানের অকাল মৃত্যুতে সহপাঠী ও শিক্ষকদের মাঝে শোকের আবহ বিরাজ করছে।

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যুবলীগ কর্মী মিঠু গ্রেফতার

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যুবলীগ কর্মী হাফিজুর রহমান মিঠু। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগে ডেভিল হান্টের অভিযানে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সক্রিয় যুবলীগ কর্মী হাফিজুর রহমান মিঠুকে গ্রেফতার করেছে ভূঞাপুর থানা পুলিশ।

রবিবার (২০ এপ্রিল) সকালে মধুপুর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে ভূঞাপুর পৌর শহরের ঘাটান্দি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম রেজাউল করিম জানান, মধুপুর থানায় নাশকতার মামলায় ওই যুবলীগ কর্মীকে গ্রেফতারের পর মধুপুর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ভারতের উত্তরপ্রদেশে এক ছাত্রীকে ৭ দিন ধরে আটকে ২৩ জন মিলে ধর্ষণ!
বিরামপুরে পিকআপের ধাক্কায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যুবলীগ কর্মী মিঠু গ্রেফতার
ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে উত্তাল মুসলিম সমাজ, হায়দ্রাবাদে গণবিক্ষোভ
ফকিরাপুলে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৩ জন দগ্ধ
আল-আকসা ভেঙে মন্দির স্থাপনের পরিকল্পনা ফাঁস, ফিলিস্তিনের সতর্কবার্তা
শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রমাণ মিলেছে: চিফ প্রসিকিউটর
স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ১৩৮ মিলিয়ন ডলার দেবে চীন : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
আইপিএলে অভিষেক ম্যাচেই তিন রেকর্ড গড়লেন ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী
৩ মে ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক হেফাজতে ইসলামের
আজ স্বামীর প্রশংসা করার দিন
ইসরায়েলি অভিনেত্রী থাকায় নিষিদ্ধ হলো সিনেমা
রাজধানীর ডেমরা ও মিরপুরে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বিএনপি
যশোরের শার্শায় অস্ত্রসহ দুই ছিনতাইকারী আটক
জুলাই-আগস্ট গণহত্যা: ট্রাইব্যুনালে সালমান, আনিসুল, দীপু মনি, পলকসহ ১৯ জন
বিচার ব্যবস্থাকে আরও সহজ করতে হবে: আইন উপদেষ্টা
হাতিরঝিলে যুবদল নেতার ওপর হামলা, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে
আপিল বিভাগে নতুন দুই বিচারপতিকে সংবর্ধনা
বিয়ের আসরে কনের বেশে শাশুড়ি, থানায় হাজির বর