শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৯ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

বিশেষ সাক্ষাৎকার

‘বাংলাদেশের মেয়েরা যেন সাবিনাকে ফলো করে’

সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এক সপ্তাহেরও বেশি হয়েছে। কিন্তু তার ঢেউ এখনো আছে। চলছে সাবিনাদের সংবর্ধনার পর সংবর্ধনা। খেলোয়াড়দের নিশ্বাস ফেলার সময় নেই। এই ব্যস্ততার কারণ খেলোয়াড়দের এখনো ছুটি দেওয়া হয়নি। এই ঢেউ থামার পর তারা যাবেন নিজ নিজ বাড়িতে। এ রকম ব্যস্ততার মাঝেও অধিনায়ক বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রথমবারের মতো এককভাবে এসেছিলেন ঢাকাপ্রকাশ-এর অফিসে। দিয়েছেন অনেক সময়। হয়েছে অনেক কথা। সেই সব কথার উল্লেখযোগ্য অংশ ঢাকাপ্রকাশ-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। 

ঢাকাপ্রকাশ: ঢাকায় নামার পর বিমানবন্দরে এত মানুষ থাকবে, বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনে আসার পথে দুই পাশে এ রকম মানুষের ঢল থাকবে এটি কি আপনারা ধারণা করতে পেরেছিলেন?

সাবিনা: ম্যাচের দুই দিন আগে থেকে সবার প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল। সবাই এক্সাইটেড হয়ে পড়েছিল। আমিও একটা পর্যায়ে ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম যে সবার মুখে হাসি ধরে রাখতে পারব কি না? ম্যাচ জেতার পর আমাদের ওমেন্স উইংসের চেয়ারম্যান কিরন (মাহফুজ আক্তার কিরন) আপা আমাদের বলেছিলেন তোমাদের জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। তোমরা গেলেই বুঝতে পারবে। আসলে এইভাবে যে আমরা দেখব এটা আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। মানুষ যেভাবে বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবন পর্যন্ত ছিল, আমার ক্যারিয়ারে বা আমার বয়সে আমি এত মানুষ আগে দেখিনি। আমি বারবার বলে আসছি মানুষের এই ভালোবাসার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এটা আসলে অনেক বড় একটা পাওয়া।

ঢাকাপ্রকাশ: ক্লান্তি ভর করেছিল কি?

সাবিনা: ক্লান্তি বলতে বিমানবন্দর থেকে আমরা ৫/৬ ঘণ্টার মতো দাঁড়িয়ে এসেছি। মানুষ যেভাবে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল, রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল, সেটার তুলনায় আসলে এটা কিছু না। তারা আমাদের জন্য এসেছে। ক্লান্তি অবশ্যই ছিল। মেয়েরা স্টিল নাউ টায়ার্ড। কারণ, বিশ্রাম ৬/৭ দিন পায়নি বলতে গেলে। ক্লান্তির সঙ্গে সঙ্গে ভালো লাগা, ভালোবাসা ছিল। এটাই বড় কথা।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনারা তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যাননি। কখন মনে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে?

সাবিনা: প্রথমত আমরা ওভার কনফিডেন্ট ছিলাম না। আমাদের লক্ষ্য ছিল ম্যাচ বাই ম্যাচ। আমি ভারতের খেলা দেখছিলাম। ওদের খেলা দেখার পর মনে হয়েছে এবার আমাদের একটা চান্স আছে। অন্য যে দলগুলো ছিল, তাদের থেকে আমাদের মেয়েরা ফিজিক্যালি অনেক ফিট। মেয়েরা সেটাই মাঠে ব্যবহার করেছে। অন্য দলের প্লেয়াররাও বলেছে বাংলাদেশ একই রিদমে ৯০ মিনিট খেলতে পারে। এটা একটা দলের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। আমরা কমিটেড ছিলাম যে সুযোগ যখন আছে সেটা যেন কাজে লাগাই।

ঢাকাপ্রকাশ: আগে কখনো ভারত-নেপাল কোনো দলকেই হারাতে পারেননি। এবার দুই দলকেই হারিয়েছেন? কোন দলকে বেশি শক্তিশালী মনে হয়েছে?

সাবিনা: দুই দলের খেলার ধরন দুই রকম। ভারতের অভিজ্ঞতা বেশি। নেপালেরও আছে। কিন্তু ওদের বেশিরভাগ খেলোয়াড় আমাদের মতো আন্ডার নাইনটিন থেকে এসেছে। ফিজিক্যালি ওরাও অনেক ফিট। দুইটিই ভালো দল। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত তো অনেক শক্তিশালী দল।

ঢাকাপ্রকাশ: সংবর্ধনা পাচ্ছেন কেমন লাগছে?

সাবিনা: আগের কথায় যেতে হয়। কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। গত পরশু শহীদ মিনারে আমরা সাংস্কৃতিক জোট থেকে সংবর্ধনা পেয়েছি। গতকাল সেনাবাহিনী প্রধানের সংবর্ধনা পেয়েছি। এগুলো আসলে মেয়েদের উৎসাহিত করে। গতকালের অনুষ্ঠানে বাবা-মায়েরাও উপস্থিত ছিলেন। এ রকম স্টেজে যখন বাবা-মাকে যখন আনা হয়, তখন ‍তারও অনেক খুশি হন। তাদের মনে হয় যে মেয়েকে ফুটবল দিয়ে ভুল করেননি। মায়েরা, বাবারা যখন এ রকম স্টেজে মেয়েদের এভাবে দেখে এবং নিজেরাও সম্মানিত হয়, তখন বাবা-মাদের দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন হয়। গ্রামের দিকে ১৪/১৫ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে তারা বের হয়ে আসবে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হবে। তারা বের হয়ে আসবে। এখানে যখন মেয়েরা ভালো করে, ভাববে নিজেদের ভবিষ্যৎগড়ছে, করুক।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনাদের পরের টার্গেট?

সাবিনা: সাফে টার্গেট শিরোপা ধরে রাখা। কাজী সালাহউদ্দিন স্যার বলেছেন এশিয়া বা আশিয়ান পর্যায়ে খেলা। উইনের চেয়ে বেশিরভাগ ম্যাচ লস হতে পারে। কারণে এখানে ইউরোপ এশিয়ার ভালো ভালো দলের সঙ্গে খেলা। অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে এখানে আমরা অনেক পিছিয়ে থাকব। আগে আমরা ভারতের কাছে ৬ গোল খেতাম। নেপালরে কাছে ৩ গোলে হারতাম। এখন আমরা একটা অবস্থানে এসেছি। আমার মনে হয় সময় দিলে আমরা আরও ভালো করতে পারব।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনি দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল খেললেও সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রাতারাতি অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে না বললেও এখন হয়তো অনেকেই বলে ওই যে সাবিনা যাচ্ছে। শুনলে আসলে কেমন লাগে?

সাবিনা: এটা অবশ্যই একটা বড় প্রাপ্তি। পরিশ্রমের ফসল যখন পাই তখন আমাদের কাজের প্রতি আরও আগ্রহ বেড়ে যায়।

ঢাকাপ্রকাশ: ছোটবেলা অনেক খেলাধুলা করতেন? ফুটবলকে কখন বেছে নিলেন বা আগ্রহ হলো?

সাবিনা: আমাদের কোচ ছিলেন আকবর স্যার। আমরা একটা ব্যাচ ছিলাম। উনার দুইটা মেয়েও ছিল সেই ব্যাচে। আমরা সব খেলাই খেলতাম। আমি কাবাডি থেকে শুরু করে হ্যান্ডবল, ভলিবল সব খেলতাম। মহিলা ক্রীড়া সংস্থায় যখন খেলা হতো স্যার আমাদের নিয়ে আসতেন। ২০০৮ সালে সিটি সেল ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হতো । আমার ওটা দিয়েই শুরু। পরে সাফ গেমস হয় বাংলাদেশ। সেখানে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের সাতক্ষীরা থেকে ৫ জন ডাক পাই। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর আমি ফাইনাল সিলেকশনে টিকে যাই। সেখান থেকেই শুরু। এখনো আছি।

ঢাকাপ্রকাশ: শুরুর পথে বাধা পেয়েছিলেন অনেক। সে সময়ের ঘটনা মনে পড়ে?

সাবিনা: আমি যখন শুরু করি আমার বয়স ১২/১৩ ছিল। খেলার বয়সই ছিল। সে রকম প্রতিবন্ধকতা পাইনি। আমার পরিবারের ভালো সমর্থন ছিল। আমার বড় আপু, আমার বাবা-মা। আমরা ৫ বোন। আমাদের বোনদের মধ্যে কেমিস্ট্রি খুব ভালো। আমি আমাদের কোচদের দেখতাম আমরা যেখানে অনুশীলন করতাম, তখন ওখানের লোকাল লোকেরা ঝামেলা করত। কোচকে দেখতাম তাদের সঙ্গে ঝগড়া করতেন। উনাকে গালাগালিও করা হতো। স্যারকে দেখতাম পুলিশেরও হেল্প নিতেন। যখন মনে পড়ে, তখন খারাপ লাগে।

ঢাকাপ্রকাশ: ওদের সঙ্গে দেখা হলে এখন কী বলে?

সাবিনা: ওরা হয়তো গিল্টি ফিল করে যে ওই সময় ওদের হেল্প করা প্রয়োজন ছিল। তাহলে হয়তো মেয়েগুলো আরও ভালো করতে পারত।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনাকে দেখে আপনার এলাকার মেয়েরা কতটা উৎসাহী হয়েছে?

সাবিনা: ইতোমধ্যে আমি একটা একাডেমি করেছি, আমার এলাকার এক বড় ভাই আবু সাঈদ উনার হেল্প নিয়ে। উনি চেয়ারম্যান, আমি জেনারেল সেক্রেটারি। ইচ্ছে আছে সাতক্ষীরার ফুটবলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। ইতোমধ্যে দুই বছর হয়ে গেছে। এখন আমাদের এখানে ৬০/৭০ জন খেলোয়াড় আছে ছেলে মেয়ে মিলে।

ঢাকাপ্রকাশ: প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে দেশের বাইরে প্রফেশনাল লিগ খেলছেন। ছেলেদের ক্ষেত্রে সালাহউদ্দিন। সালাহউদ্দিনকে বলা হয় বাংলাদেশের কিংবদন্তি ফুটবলার। আপনি কি মেয়েদের ক্ষেত্রে কিংবদন্তি?

সাবিনা: আমি সেভাবে নিজেকে ভাবি না। মানুষ বলে থাকলে সেটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি ২০১৪/১৫ সালের দিকে শুনেছি সালাহউদ্দিন স্যার দেশের বাইরে খেলেছেন। তার ৪৫/৪৭ বছর পর আমি খেলছি। এটা অবশ্যই আমার জন্য গর্বের বিষয়। এটা কন্টিনিউ করছি এখনো। ৩০ তারিখ যাব মালদ্বীপ।

ঢাকাপ্রকাশ: চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কার কথা মনে পড়েছে প্রথম?

সাবিনা: আমার প্রথম মনে পড়েছে দেশের মানুষের কথা। অনেকে স্ট্যাটাস দিয়েছে ট্রফিটা দেশে নিয়ে আসুন ক্যাপ্টেন। এরকম কিছু ইমোশনাল স্ট্যাটাস আমি দেখেছি। আমার মনে হয়েছে দেশের মানুষ এখন হাসছে। শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সংবর্ধনায় কেউ কেউ বলেছেন যে খুশিতে তারা কান্না করে ফেলেছিলেন। এটা আসলে আমার মনে ধরেছিল প্রথমে যে, আমি মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছি।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনার ফুটবলার হওয়ার পেছনে আকবর আলী ছাড়া আর কার কার অবদান আছে?

সাবিনা: আমি মনে করি আমি নিজে। আমি যদি না যেতাম তাহলে আমি ফটুবলার হতাম না। আকবর আলী স্যার ছিলেন একট পন্থা। উনি আমাকে আমার বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। আমার বড় বোন অনেক সাপোর্ট দিয়েছিলেন। বাবা-মা সাপোর্ট দিয়েছিলেন সবচেয়ে বেশি। সাপোর্ট আমি আমার পরিবারের কাছ থেকে পেয়েছি।

ঢাকাপ্রকাশ: বাংলাদেশে প্রিয় ক্লাব কোনটা?

সাবনিা: সেরকম কোনো প্রিয় দল নেই। কারও খেলা সেভাবে ভালো লাগে না। তবে তারা উন্নতি করুক সেটা চাই। তবে একটা সময় আমিনুল ভাই, জয় ভাইরা যখন খেলতেন তাদের খেলা ভালো লাগত।

ঢাকাপ্রকাশ: এক সময় ফুটবল খুব জনপ্রিয় ছিল শুনেছেন। এখন খুলনার অনেকে ক্রিকেটার। এখন আবার আপনাকে দেখে কী উঠে আসছে?

সাবিনা: ট্রানজেশনটা মোমেন্টটা হবেই এটাই স্বাভাবিক। আমি শুনতাম। উনাদের খেলা দেখা হয়নি। উনাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখলেই বোঝা যায় উনারা কোনো মাপের প্লেয়ার ছিলেন। আমরা লাকি যে উনারা এখনো আছেন আমাদের ফেডারেশনে।

ঢাকাপ্রকাশ: ইউরোপীয় ফুটবল দেখেন। কোন ক্লাব প্রিয়?

সাবিনা: মেসি যখন ছিল বার্সেলোনার খেলা দেখতাম। এখন পিএসজিতে চলে গেছে। বেশির ভাগ খেলা দেখা হয় না। মধ্যরাতে খেলা দেখায়। ভালো লাগে রোনালদো, নেইমারের খেলা ভালো লাগত। বেশি ভালো লাগে ইনিয়েস্তার খেলা। উনার প্লেমেকার খেলা আমি খুব ভালো উপভোগ করতাম।

ঢাকাপ্রকাশ: উনাদের খেলা কতটা অনসুরণ করে থাকেন?

সাবিনা: নিজের বুদ্ধিমত্তাটা কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। কারণ, আমি মাঝে মাঝে যেহেতু প্লে মেকার হিসেবে খেলি, আমি ট্রাই করি ইনিয়েস্তাকে ফলো করার সেভাবে খেলে, পাস দেওয়ার।

ঢাকাপ্রকাশ: সামনে বিশ্বকাপ ফুটবল। কোন দলকে সমর্থন করেন?

সাবনিা: মেসির জন্য আর্জেন্টিাকে সাপোর্ট করি।

ঢাকাপ্রকাশ: আপনাকে যদি বলা হয় মেসি-নেইমার-রোনালদো কার মতো হতে চান, কাকে বেছে নেবেন?

সাবনিা: আমি এই বিষয়ে দ্বিমত করতে চাই। আমি আসলে নিজের অবস্থানকে এভাবে রেখে যেতে চাই, যাতে মানুষ আমাকে ফলো করে। বাংলাদেশের মেয়েরা সাবিনার মতো হতে চায়। উনাদের মতো হতে হয়তো পারব না। তবে উনাদের অনুসরণ করার চেষ্টা করি।

ঢাকাপ্রকাশ: এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা থেকে শুরু করে সেরা খেলোয়াড়, সর্বোচ্চ গোলাদাতা, সেরা গোলরক্ষক, ফেয়ার প্লে সব কিছুই বাংলাদেশের। এ রকম সাফল্য আসবে ভেবেছিলেন, কেমন লাগছে?

সাবিনা: এটা একটা গ্রেট অ্যাচিভমেন্ট। বলে না আল্লাহ পাক যখন দেন পুরোটা ভরে দেন। ব্যাপারটা এ রকমই। আল্লাহর রহমত ছিল। অবশ্যই সষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা যে রকম পরিশ্রম করেছি এটা আমরা ডিজার্ব করি। এটার দাবিদার আসলে আমরাই।

ঢাকাপ্রকাশ: সানজিদার স্ট্যাটাস নিয়ে আপনার মতামত?

সাবিনা: আমি দেখেছি খেলার দিন। এত শর্ট টাইমে এভাবে ভাইরাল হয়ে যাবে ভাবিনি। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী ও ক্রীড়ামন্ত্রীকে বিষয়টি নোট করার জন্য।

এমপি/এসএন/এমএমএ/

 

Header Ad
Header Ad

নারী গোয়েন্দার প্রেমের ফাঁদে পড়ে ভারতের গোপন তথ্য ফাঁস

নারী গোয়েন্দার প্রেমের ফাঁদে পড়ে ভারতের গোপন তথ্য ফাঁস। ছবি: সংগৃহীত

দুই ঠিকাদার কর্মীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ নৌঘাঁটির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান। এতে পাচার হয়েছে ঘাঁটির সংবেদনশীল এলাকার ছবি, ভিডিও, নথিসহ বিভিন্ন ভবনের নকশা।

এমন অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (আইএসআই) বিরুদ্ধে। ভারতীয় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনআইএ) দাবি, নারী গোয়েন্দাকে ব্যবহার করে সুকৌশলে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এ পর্যন্ত দুই জনকে আটক করেছে দেশটির এনআইএ।

জানা যায়, ১১ হাজারেরও বেশি একর জায়গা নিয়ে ভারতের ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে অবস্থিত নৌঘাঁটি- ‛আইএনএস কদম্ব’। বর্তমানে এটিই দেশটির তৃতীয় সর্বোচ্চ নৌঘাঁটি। তবে, সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলে পূর্ব গোলার্ধ্বের সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটিতে পরিণত হবে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে আইএনএস কদম্বকে। সামরিক ও প্রতিরক্ষাখাতে কৌশলগত ব্যাপক অবদান রয়েছে। তবে, চতুর্দিক নিরাপত্তায় মোড়া এই ঘাঁটির সংবেদনশীল তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান। এমন অভিযোগ উঠেছে দেশটির প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) বিরুদ্ধে।

এদিকে, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর দাবি- ঐ নৌঘাঁটিতে কর্মরত দুই সিভিলিয়ান ঠিকাদার কর্মীদের হানিট্র্যাপে ফেলে তথ্য হাতিয়ে নেয় নাফিসা জান্নাত নামের এক পাকিস্তানি নারী গোয়েন্দা। যার সাথে ২০২৩ সাল থেকে পরিচয় ছিল ঐ দুই কর্মীর। মেরিন ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়ে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক এবং টেলিগ্রামে ভিন্ন নামের তাদের সাথে শখ্যতা গড়ে তোলেন ঐ নারী।

গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ঐ দুই ঠিকাদার কর্মীর মাধ্যমে আইএনএস কদম্বের খুবই সংরক্ষিত স্থানের ছবি, ভিডিও, গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্মাণাধীন স্থাপনার নকশা, সিমুলেটর বিল্ডিং এরিয়ার ছবি সুকৌশলে হাতিয়ে নেন ঐ পাকিস্তানি গোয়েন্দা। এমনকি কোন জাহাজ কখন কোথায় টহল দেয়, কোনটি অপারেশনাল কিংবা রেডি টু এনগেজ মুডে থাকে এসব তথ্য রয়েছে আইএসআই’র কাছে।

তবে, আটক দুই ব্যক্তির ভাষ্যমতে, প্রতি মাসে তাদের ৫ হাজার রুপি করে দেয়া হত। টানা ৮মাস টাকা দিয়ে, প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা। সম্প্রতি, তাদের মাধ্যমে পাচার হয় ভারতীয় নৌবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

Header Ad
Header Ad

নির্বাচনের আগেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি নিহতদের পরিবারের

নিহতদের বিচারের দাবি স্বজনদের। ছবি: সংগৃহীত

আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন নিহতদের পরিবার। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত ‘জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’ নামের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি উঠে আসে।

সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের স্বজনরা বলেন, একদল রাজনৈতিক দল গঠন করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। আরেক দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন চাচ্ছে। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দেওয়া যাবে না।

তারা বলেন, এই দুই হাজার হত্যাকাণ্ডের বিপরীতে একজন হত্যাকারী পুলিশ কিংবা হেলমেট বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হলেও দুই হাজার জন গ্রেপ্তার হতো। কিন্তু নগণ্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত মো. সিয়ামের ভাই মো. রাশেদ বলেন, এই সরকারের কাছে বেশি কিছু চাই না, ভাই হত্যার বিচার চাই। দেশে কোনো নির্বাচন দেওয়ার আগে ভাই হত্যার বিচার করুন।

নিহত সিফাতের বাবা কামাল হাওলাদার বলেন, আমাদের সন্তানরা জীবন দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন দল নির্বাচন নিয়ে রাজনীতি করছে। অথচ আমাদের সন্তান হত্যার বিচারের কথা কেউ বলছে না।

নিহত সাজ্জাত হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেন, পুলিশ আমার ছেলেকে আশুলিয়ায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সাত মাস হয়ে গেল আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার পেলাম না। কান্না করতে করতে এখন চোখের জল শুকিয়ে গেছে। তবুও ছেলে হত্যার বিচার পাচ্ছি না।

সংবাদ সম্মেলনে তিনজন উপদেষ্টা নিয়ে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী পরিষদ কমিটি গঠন করা হয়। সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদে আছেন মো. মহিউদ্দিন, শহিদুল ইসলাম ভুইয়া এবং মো. মীর মোস্তাফিজুর রহমান। নির্বাহী পরিষদ কমিটিতে চেয়ারম্যান হয়েছেন মো. গোলাম রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক রবিউল আউয়াল ভুইয়া। কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছে আব্দুল্লাহ আল মারুফ ও জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা। সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিম মাহমুদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল হাওলাদার ও সহ সাধারণ সম্পাদক সাবিনা আক্তার রিমা।

এছাড়া কোষাধক্ষ্য হয়েছেন জারতাজ পারভীন ও সহকোষাধক্ষ্য আবু হোসেন, জনসংযোগ সম্পাদক শিল্পী আক্তার, দপ্তর সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম ও সহদপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান। আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন রাহাত আহম্মেদ খান, ক্রিয়া সংস্কৃতি ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কবির হোসেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার খান পলাশ এবং সহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সাবরিনা আফরুজ সেবন্ধী।

নির্বাহী সদস্য হয়েছেন সামছি আরা জামান, মো. সাইদুল ইসলাম, মো. অব্দুল বাসার অনিক, স্বর্ণা আক্তার, রাজু আহমেদ, শাহিনা বেগম, ফারহানা ইসলাম পপি, খালেদ সাইফুল্লাহ, রাজু আহমেদ, মো. সুমন মিয়া, আহমেদ লামিয়া, পাপিয়া আক্তার শমী এবং এম. এ. মতিন।

Header Ad
Header Ad

চলন্ত বাসে ডাকাতি-যৌন নিপীড়ন: মির্জাপুর থানার এএসআই বরখাস্ত

মির্জাপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আতিকুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারীর শ্লীলতাহানীর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মির্জাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এইচএম মাহবুব রেজওয়ান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ভুক্তভোগী কয়েকজন বাসযাত্রী মির্জাপুর থানায় গিয়ে চলন্ত বাসে ডাকাতির বিষয়ে ডিউটি অফিসার মো. আতিকুজ্জামানকে অবহিত করেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় কয়েক মিনিট পর তারা থানা ত্যাগ করেন।

এছাড়া ডিউটি অফিসার তাদের নাম ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর সহ কোন তথ্যই রাখেননি তিনি। যার কারণে মামলা গ্রহণ করতে বিলম্ব হয়। এরপর ঘটনার তিনদিন পরে এক ভুক্তভোগী বাস যাত্রীর মামলা নিতে হয়েছে।

এদিকে, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান গত শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি রাতেই এএসআই আতিকুজ্জামানকে মির্জাপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করেন। শনিবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এএসআই আতিকুজ্জামানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে মির্জাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এইচএম মাহবুব রেজওয়ান জানান, শনিবার আতিকুজ্জামানের সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নারী গোয়েন্দার প্রেমের ফাঁদে পড়ে ভারতের গোপন তথ্য ফাঁস
নির্বাচনের আগেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি নিহতদের পরিবারের
চলন্ত বাসে ডাকাতি-যৌন নিপীড়ন: মির্জাপুর থানার এএসআই বরখাস্ত
ছাত্রদের নতুন দলে যোগ দিচ্ছেন সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যরা
চলন্ত বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি: পুলিশ সুপার
ময়মনসিংহে দেড় শতাধিক বিড়ালের মিলনমেলা
বিচার ও পুলিশ বিভাগের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে: অ্যাটর্নি জেনারেল
১৩ দিনের চীন সফরে যাচ্ছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির
২৯ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা পেয়েছে ২ সদস্যের একটি অপরিচিত বাংলাদেশি ফার্ম: ট্রাম্প
ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা: প্রাণে বাঁচলেন দিতি কন্যা লামিয়া
ফাগুনের দুপুরে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি
‘আমাদের অনেক বয়স হয়েছে, নবীন-তরুণরা দেশকে নতুন করে চিন্তা করছেন’
ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে গঠন বিএনপির পক্ষেই সম্ভব: তারেক রহমান
চলন্তবাসে বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি, টাঙ্গাইলে গ্রেফতার ৩
আমরা কারো দাবার গুটি হবো না: জামায়াত আমির
গরমে স্যুট পরে এসির তাপমাত্রা কমানো বন্ধ করুন: জ্বালানি উপদেষ্টা
সেনাবাহিনীতে চাকরির সুযোগ, আবেদন শুরু ২৮ ফেব্রুয়ারি
নতুন দলের শীর্ষ ছয়টি পদ নিয়ে ‘সমঝোতা’
মিঠাপুকুরে তোপের মুখে পালিয়ে গেলেন সাব রেজিস্ট্রার
আমার মা চাইতেন না আমি বিয়ে করে সংসারী হই : পপি