সাফের নতুন রানি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ
হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগোচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবল। দেখে মনে হবে এইতো সেদিন। এরই মাঝে বয়সভিত্তিক ফুটবলে সাফে নিজেদের একটা অবস্থান তৈরি করে ফেলেছে। কিন্তু জাতীয় দল এখনো সেটা পারেনি। এবার বয়সভিত্তিক দলের বেশ কয়েকজন ফুটবলার জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর নতুন করে ঢেউ লেগেছে জাতীয় দলে। যে ঢেউয়ের চোটে বাংলাদেশ দল সাফের মসনদ জয়ের চূড়ান্ত ধাপে। প্রয়োজন আর একটি জয়। তাহলেই বাংলাদেশ দল হবে সাফের নতুন রানি। তার জন্য প্রয়োজন হিমালয় কন্যা নেপালকে হারানো। আজ সোমবার কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের সেই অগ্নিপরীক্ষা শুরু হবে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে বলা হয়ে থাকে উপমহাদেশের বিশ্বকাপ। এই আসর যখনই অনুষ্ঠিত হয়, প্রতিবারই আশার জাল বুনা হয় শিরোপার জন্য। তবে তা জামাল ভুইয়াদের নিয়ে। কিন্তু তারা প্রতিবারই হতাশ করেন। ২০০৫ সালের পর থেকে তারা আর ফাইনালই খেলতে পারেননি। কিন্তু সে তুলনায় মেয়েরা অনেক এগিয়ে। ২০১৬ সালে শিলিগুঁড়ি আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলে হেরেছিল ভারতের কাছে ১-৩ গোলে। এবার সেই ভারতই নেই।
আজকের ফাইনালের দুই প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ও নেপাল অতীতে এই আসরে কখনই ভারতকে হারাতে পারেনি। এবার ভারত এই দুই দলের কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছে। প্রথমে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের কাছে ৩-০ গোলে হেরে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে সেমিতে নেপালের সামনে পড়ে। সেখানে তারা হার মানে ১-০ গোলে। এবারই দুই দল প্রথম ভারতের বিপক্ষ জয় পায়। পরে উঠে ফাইনালে।
সাফের আগের পাঁচ আসরের চারবারই নেপাল ফাইনাল খেলেছে। বাংলাদেশ শুধু ২০১৬ সালে খেলছিল ফাইনাল। ভারত নিজেদের এই আসরে অবিসংবাদিত করে তুলেছিল। এবার তাদের রাজত্বের অবসান ঘটেছে। সাফ প্রস্তুত নতুন রানিকে বরণ করে নিতে।
সাফে ভারতের পরই নেপালের সাফল্য যেমন বেশি, তেমনি বাংলাদেশের বিপক্ষেও তাদের সাফল্য বেশি। দুই দলের মুখোমুখি মোলাকাত হয়েছে আটবার। বাংলাদেশ একবারও জিততে পারেনি। ছয়বার হেরে ড্র করেছে দুইবার।
ফাইনালে দুই দলই এসেছে নিজ নিজ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমি ফাইনালের বাধা টপকে। দুই দলই এখন পর্যন্ত নিজেদের জালে গোল হজম করেনি। আজও যে তা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবে, তারাই হবে নতুন রানি। বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের তিনম্যাচসহ চার ম্যাচে গোল দিয়েছে ২০টি। সাবিনার হ্যাটট্রিক আছে দুইটি। ৮ গোল করে তিনিই আছেন সবার উপরে। ৪ গোল করে তার পরের স্থানে আরেক বাংলাদেশি সিরাত জাহান স্বপ্না। নেপাল গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচসহ তিন ম্যাচে গোল করেছে ১১টি। আজকের ফাইনাল হবে দুই দলের স্ট্রাইকারদের জন্য কঠিন পরীক্ষা। প্রতিপক্ষের রক্ষণে ফাটল ধরানো। এখানে যারা সফল হবে তারাই হাসবে বিজয়ের হাসি।
ফাইনালের জন্য বাংলাদেশ শতভাগ প্রস্তুত। দলে নেই কোনো ইনজুরি সমস্যা। শুধু স্ট্রাইকার সিরাত জাহান স্বপ্না সেমিফাইনালে পায়ের মাংস পেশিতে টানা পড়ায় মাঠ ছেড়েছিলেন। তার জন্য আজ শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে দল। এদিকে আবহাওয়া ভালো না থাকায় আগের দিন কোনো অনুশীলন করেননি সাবিনারা।
সংবাদে সম্মেলনে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, ‘দলকে একটা কথাই বলেছি, যেহেতু ফাইনাল, সেহেতু যেকোনো কিছুই হতে পারে। আমার বিশ্বাস মেয়েরা গেম থেকে হারাবে না। তারা এখন পরিণত। মারিয়া-মনিকাদের বয়স এখন আর ১৪-১৫ বছর নেই। তারা এখন বড় হয়েছে এবং বুঝতে পারে, গেম ধরতে পারে। আমার মনে হয় কোনো চাপ মেয়েদের ভেতরে থাকবে না, তারা স্বাভাবিক খেলাটাই খেলবে।’
কোচ গোলাম রব্বানি ছোটনে বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টের আগে ভারতের বিপক্ষেও আমরা কখনো জিতিনি। কিন্তু এবার মেয়েরা ওদের বিপক্ষে পুরো ৯০ মিনিট খেলার মধ্যেই ছিল এবং ভালো ব্যবধানে জয়লাভ করেছে। কালকে (আজ সোমবার) আরেকটা ভিন্ন দিন। মেয়েরা ভালো ফুটবল খেলে ফাইনালে এসেছে, আমি মনে করি, তারা সর্বোচ্চটা দিয়েই চেষ্টা করবে নতুন কিছু করার।’
এমপি/এসএন