বড় ভাই দাঁড়িয়ে, ছোট ভাই বসে

শিরোনাম দেখে যে কারো একটু খটকা লাগতে পারে। বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এটি খুবই বেমানান। কারণ এ রকম পরিস্থিতিতে বড় ভাইই বসে থাকবেন, ছোট ভাই থাকবেন দাঁড়িয়ে। কিন্তু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা! যেখানে বড় ভাই দাঁড়িয়ে আছেন আর ছোট ভাই বসে কথা বলছেন! এই ছোট ভাই-বড় ভাই হলেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারের দুই ছেলে তামিম ইকবাল ও নাফিস ইকবাল। তাদের এ রকম পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ। ছোট ভাই তামিম ইকবাল জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ। একদিনের দলের অধিনায়কও। কিন্তু বড় ভাই নাফিস ইকবাল জাতীয় দলে ‘লজিস্টিক ম্যানেজার’ পদ নিয়ে নতুন পরিচয়ে কিছু দিন ধরে কাজ করছেন। কিন্তু তিনি যখন থেকে এ দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন, তখন আবার জাতীয় দলে খেলা হয়নি তামিম ইকবালের। নাফিস ইকবাল দায়িত্ব পাওয়ার পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজই দুই ভাইকে দুই পরিচয়ে এক ছাতার নিচে নিয়ে এসেছে।
নাফিস-তামিমের পিতা ইকবাল খান ছিলেন ফুটবলার। কিন্তু তার দুই ছেলে ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে উঠার আগেই তিনি পরলোকে পাড়ি জমান। তারপর মা নুসরাত খান ইকবালই দুই ছেলেকে বড় করে তুলেন। দুজনেই ওপেনার। নাফিস ডান হাতি, তামিম বাম হাঁতি। মায়ের স্বপ্ন ছিল, দুই ভাইয়ের জাতীয় দলে এক সঙ্গে ইনিংসের উদ্বোধন করা। কিন্তু নাফিস ইকবালের কারণে তা আর হয়নি। কারণ তামিম ইকবালের মতো নাফিস ইকবাল তার ক্যারিয়ারকে চুইংগামের মতো টেনে লম্বা করতে না পারার কারণে সেই স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়। নাফিস ইকবালের ক্যারিয়ারের ছিল খুবই ছোট। সময়ের হিসেবে তিন বছরেরও কম। ২০০৩ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ৮ মার্চ। এই সময়ের মাঝে তিনি ১১টি টেস্ট ও ১৬টি একদিনের ম্যাচ খেলেন। কিন্তু তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথ চলা শুরুর করার আগেই নাফিস ইকবালের ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে। তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথ চলা শুরু হয় ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে। বলা যায় এক ভাইয়ের প্রস্তানে আরেক ভাইয়ের যাত্রা শুরু হয়। তামিম ইকবালের ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে উঠার পেছনে আছে নাফিস ইকবালেরও অনেক বেশি অবদান। সেই দুই ভাইকে অবশেষে আজ এক সঙ্গে জাতীয় দলের অনুশীলন ড্রেস পড়ে একসঙ্গে আসতে দেখা গেছে।
নাফিস-তামিম দুই ভাই এভাবে এক সঙ্গে এসেছিলেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু হওয়ার আগে সাংবাদিক সম্মেলনে। করোনার কারণে বিগত সব সাংবাদিক সম্মেলনে হয়েছিল ভার্চুয়াল। এবার মাঠেই আয়োজন করা হয়। তবে স্বাস্থ্যবিধির কারণে কোনো হল রুমে না করে মাঠেই করা হয়। যেখানে তামিম ইকবাল ছিলেন মাঠের ভেতর, সাংবাদিকরা গাদাগাদি করে গ্যালারিতে। যেখানে ছিল না নূন্যতম কোনো সুযোগ-সুবিধা কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানা। সাংবাদিক সম্মেলনে চেয়ার একটি থাকায় তামিম ইকবালকে বসতে হয়। নাফিস ইকবাল ছিলেন দাঁড়িয়ে। তামিম ইকবাল প্রশ্নের জবাব দিলেও সাংবাদিকরা কে কখন প্রশ্ন করবেন, তা ঠিক করে দিচ্ছিলেন নাফিস ইকবাল। দুই ভাইকে এভাবে এক সঙ্গে দেখে প্রশ্নও ছুটে যায় তামিম ইকবালের দিকে। তামিম ইকবাল জানালেন এখন তাদের সর্ম্পক পেশাদার। পারিবারিক সর্ম্পকটা পরে। তিনি বলেন, ‘এই জায়গায় আমাদের অনেক পেশাদার হতে হবে। তিনি আমার ভাই, এটা আমাদের সম্পর্ক। তবে জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় আমি তাকে ম্যানেজার হিসেবে আর তিনি আমাকে খেলোয়াড় হিসেবে সম্মান করতে হবে। এটা পেশাদার জায়গা, যেখানে পেশাদারিত্বই আগে আসবে, সম্পর্ক পরে।’
এমপি/এসআইএইচ
