কুমিল্লার হ্যাটট্রিক, না বরিশালের প্রথম
শেষ হাসি হাসবে কে? শিরোপা জিতে ট্রফিতে চুমু খাবেন কোন দলনেতা? মাথার উপর ট্রফি তুলে উল্লাসধ্বনি দিয়ে হৈচৈ আর আনন্দে মাতোয়ারা হবেন কোন দলের ক্রিকেটাররা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস, না কি ফরচুন বরিশাল- তারই ফয়সালা হবে আজ মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটের মঞ্চে।
কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান- এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দুই দলের ১১ যোদ্ধা ময়দানি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। দামামা বাজবে বিকেল সাড়ে ৫টায়।
বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ফয়সালা করতে ফাইনালে উঠে আসা কুমিল্লা এর আগে ফাইনালে উঠেছে দুইবার। দুইবারই পেয়েছে শিরোপার স্বাদ পেয়েছে ২০১৫ আর ২০১৯ সালে। কিন্তু ফরচুন বরিশাল এখনো শিরোপার ফাইনাল খেলেছিল বরিশাল বার্নার্স নামে। কিন্তু ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স তাদের ট্রফি জেতার নোনা স্বাদ পাইয়ে দিয়েছিল ৮ উইকেটে জিতে। এরপর ২০১৫ সালে বরিশাল বুলস নামে ফাইনালে উঠে এ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছিল। আজ ভিন্ন নামে আবার ফাইনাল খেলবে সে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষেই।
এবারের আসরে খেলোয়াড় কেনা-বেচার পর দলগুলো নিয়ে যে পূর্বধারণা করা হয়েছিল তারই প্রতিফলন আজকের ফাইনালের মঞ্চের দুই প্রতিপক্ষ। বলা যায় আসরের সেরা দুই দলই উঠে এসেছে ফাইনালে। এ দুই দলের বাইরে সম্ভাব্য তৃতীয় দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকাকে। কিন্তু এ দল প্লে অফ রাউন্ডেই আসতে পারেনি।
ফাইনালের আগে দুই দলই একে অপরের বিপক্ষে তিনবার করে মুখোমুখি হয়েছিল। তাতে লিগ পর্বে দুই দল একবার করে জয়ী হয়েছিল। এরপর প্রথম কোয়ালিফায়ারে জিতেছিল বরিশাল। তিনবারই ম্যাচ হয়েছিল লো-স্কোরিং।
বরিশালের প্রধান শক্তি বোলিং। তারা যে কয়টা ম্যাচে আগে ব্যাটিং করেছে, সেখানে তাদের রান ছিল ওভার প্রতি সাতের সামান্য উপরে। এমন কী প্রথম কোয়াালিফায়ারেও তারা আগে ব্যাট করে মাত্র ১৪৩ রান করে বোালিং শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ম্যাচ জিতেছিল ১০ রানে। আবার প্রতিপক্ষের রান তাড়া করতে নেমে আসরের সর্বনিম্ন রাসের রেকর্ডও গড়েছে তারা। ফাইনালের প্রতিপক্ষ এ কুমিল্লার বিপক্ষে তারা মাত্র ৯৫ রানে অলআউট হয়েছিল। আগে ব্যাট করে বরিশাল সর্বোচ্চ রান করেছিল সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ১৯৯। এটি ছিল আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। বরিশালের ব্যাটিং গভীরতা কম বলে তারা আসরে অলআউট হয়েছে তিনবার। কুমিল্লার বিপক্ষে আসরের সর্বনিম্ন ৯৬, খুলনার বিপক্ষে ১৪৫, চট্টগ্রামের বিপক্ষে ১৪৯ রান করে অলআউট হয়। প্রতিপক্ষকে অলআউট করেছে দুইবার খুলনাকে ১২৪, চট্টগ্রামকে ১৩৫ রানে।
কুমিল্লার ব্যাটং-বোালিং দুই বিভাগই শক্তিশালী। তাদের ব্যাটিং বেশি শক্তিশালী, না বোলিং বেশি শক্তিশালী, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। প্লে অফসহ তারা ম্যাচ খেলেছে ১২টি (বৃষ্টির কারণে একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত)। প্রতিপক্ষকে অলআউট করেছে তারা চারটি ম্যাচে। এ চারটির তিনটিই ছিল আবার প্রথম তিন ম্যাচে। বরিশালকে ৯৫, সিলেটকে ৯৭ ও চট্টগ্রামকে ১৩১ রানে। প্রথম দুইটি আবার আসরের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। এরপর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে আবার চট্টগ্রামকে ১৪৯ রানে অলআউট করেছিল। আগে ব্যাট করে কুমিল্লার দলগত সংগ্রহের সর্বোচ্চ ইনিংসগুলো হলো খুলনার বিপক্ষে ৬ উইকেটে ১৮৮ ও ৫ উইকেটে ১৮২। এ দুই ইনিংসের মাঝে চট্টগ্রামের বিপক্ষে তাদের একটি ইনিংস আছে ৩ উইকেটে ১৮৩ রানের। এ ছাড়া পরে ব্যাট করে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে তারা করেছিল ৬ উইকেটে ১৭৩ রান।
আজকের ফাইনালে আসল লড়াই হবে বলা যায় দুই দলের বোলারদের মাঝে। ১৮ উইকেট নিয়ে সবার উপরে আছেন কুমিল্লার মোস্তাফিজ। এ ছাড়া ১৪ উইকেট নিয়ে পাঁচে স্পিনার তানভীর ইসলাম। এদিকে বরিশালের দুই বোলার ডুয়াইন ব্রাভো ১৭ ও সাকিব ১৫ উইকটে নিয়ে আছেন দুই ও তিনে। ব্যাটিংয়ে কুমিল্লার ডু প্লেসি ২৯১ রান করে পাঁচে থাকলেও বরিশালের কেউ নেই। সাতে আছেন সাকিব। তার রান ২৭৭। এ ছাড়া কুমিল্লার মাহমুদুল হাসান জয় (২২৭ রান), লিটন দাস ( ২০৫ রান), মঈন আলী ( ১৮৭ রান), ইমরুল কায়েস ( ১৮৪ রান) ব্যাট হাতে প্রস্তুত হয়ে আছেন। বরিশালের হয়ে ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ৯ ম্যাচে মাত্র ২০৮ রান করেছেন। তবে তাদের মুনিম শাহরিয়ার মারমুখি সূচনা বরিশালের জন্য বাড়তি পাওয়া। ৫ ম্যাচে ১৬১.৮১ গড়ে তার রান ১৭৮।
বরিশালের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন এক নম্বর হওয়া ছাড়া অন্য কিছু ভাবছেন না। তিনি বলেন, ‘ ফাইনাল তো ফাইনালই। এটার উপর তো কোনো কিছু নেই। আমরা কষ্ট করে এখানে এসেছি, ভালো ক্রিকেট খেলে এসেছি। এখানে এসে দ্বিতীয় হওয়ার কোনো মূল্য থাকে। সোজা কথা এটাই। লক্ষ্যটা অবশ্যই এক নম্বর হওয়ার। আমরা আত্মবিশ্বাসী। দল ভালো শেপে আছে। বাড়তি একটা তাড়না আছে। আর অধিনায়ক যখন ভালো খেলে সবকিছু সহজ হয়। সাকিব সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ওর তাগিদটা বেশি ভালো খেলার। মাঠ চালাচ্ছে ভালো।’
কুমিল্লার কোচ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ ফাইনালে আসতে পেরেছি এটা অবশ্যই আনন্দের বিষয়। চেষ্টা করব ফাইনালে যেন আমরা ভালো করতে পারি।’
এমপি/এসএন