ব্যাটে-বলে অনন্য কুমিল্লা
বঙ্গবন্ধু বিপিএলের দুই ফাইনালিস্ট চুড়ান্ত হয়ে গেছে। শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে পাঁচটায় মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে শিরোপা জেতার যুদ্ধে মুখোমুখি হবে ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে ফাইনালের মঞ্চে পৌঁছাতে বরিশাল প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লাকে ১০ রানে হারিয়েছিল। সেখানে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থনে থাকা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে দিতে হয়েছে উত্তাল সাগর পাড়ি। প্রথম কোয়ালিফায়ারে হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলতে হয়। সেখানে তারা পায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে। বরিশালের কাছে হারের ঝাল যেন তারা মেটায় চট্টগ্রামকে পেয়ে। চট্টগ্রামের করা ১৪৯ রান করতে পাড়ি দিয়েছিল মাত্র ১২.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে।
ফাইনালে আসার পথে বরিশালের প্রধান অস্ত্র ছিল বোলিং, সেখাানে কুমিল্লার শক্তি ব্যাটিং-বোলিং দুটিই। তাদের ব্যাটিং বেশি শক্তিশালী, না বোলিং বেশি শক্তিশালী তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। প্লে অফসহ তারা ম্যাচ খেলেছে ১২টি (বৃষ্টির কারণেএকটি ম্যাচ পরিত্যক্ত)। যেখানে চারটিতেই প্রতিপক্ষকে তারা অলআউট করেছে। এই চারটির তিনটিই ছিল আবার প্রথম তিন ম্যাচে। আসরের সর্বনিম্ন দুইটি সংগ্রহও আছে এখানে। একটি বরিশালের ৯৫, অপরটি সিলেট সানরাইজাইর্সের ৯৭ রানের। এ ছাড়াও ১৩১ রানে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে অলআউট করেছিল। এই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে তারা আবার অলআউট করেছিল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ১৪৯ রানে।
সিলেটকে ১৯.১ ওভারে ৯৭ রানে অলআউট করে ম্যাচ জিতেছিল ২ উইকেটে। পরের ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে ১৭.৩ ওভারে ৯৬ রানে অলআউট করে জয়ী হয়েছিল ৬৩ রানে। আগে ব্যাট করে নিজেরা করেছিল ৭ উইকেটে ১৫৮ রান। চট্টগ্রামে গিয়ে এবার স্বাগতিকদের অলআউট করে ১৩১(১৭.৩ ওভার) রানে। এর আগে নিজেরা ব্যাট করে রান করেছিল ৩ উইকেটে ১৮৩ রান। সেখানে নিজেরা আবার অলআউট হয়েছে একবার। প্রথম তিন ম্যাচে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার বিপক্ষে অলআউট হয়েছিল ১৩১ রানে। ঢাকা আগে ব্যাট করে রান করেছিল ৬ উইকেটে ১৮১।
কুমিল্লা নিজেদের ব্যাটিং পাওয়ার দেখায় চট্টগ্রামের সঙ্গে ফিরতি ম্যাচে। ব্যাটিং পাওয়ার দেখানোর আগে দেখিয়েছিল বোলিং পাওয়ারও। চট্টগ্রামের প্রথমে তুলে নিয়েছিল ৮ উইকেট। বৃষ্টির কারণে খেলা নেমে এসেছিল ১৮ ওভারে। রান করেছিল ১৩৮। সেই রান বৃষ্টি আইনে বেড়ে হয়েছিল ১৪৮। কুমিল্লা ব্যাটিং পাওয়ার দেখিয়ে ১৬.১ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল ৯ উইকেটে। কুমিল্লার দলগত সর্বোচ্চ রানের তিনটি ইনিংসের মাঝে দুটিই ছিল খুলনার বিপক্ষে যথাক্রমে ৬ উইকেটে ১৮৮ ও ৫ উইকেটে ১৮২। এই দুই ইনিংসের মাঝে চট্টগ্রামের বিপক্ষে তাদের একটি ইনিংস আছে ৩ উইকেটে ১৮৩ রানের। এই তিনটি ইনিংস ছিল আগে ব্যাট করে। এ ছাড়া পরে ব্যাট করে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে তারা করেছিল ৬ উইকেটে ১৭৩ রান।
বরিশালের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচে এবার কুমিল্লা তাদের অলআউট করতে পারেনি। বরিশাল ৫ উইকেটে ১৫৫ রান করে কুমিল্লাকে আটকে রাখে ৯ উইকেটে ১২৩ রানে। সিলেটও ফিরতি ম্যাচে রান ব্যর্থতা থেকে মুক্তি পেয়ে করেছিল ৫ উইকেটে ১৬৯ রান। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। কুমিল্লা ১ বল হাতে রেখে ৬ উইকেট করেছিল ১৭৩ রান। খুলনার বিপক্ষে প্রথম দেখাতে কুমিল্লা ব্যাটিং-বোলিং দুটি শক্তিই প্রদর্শন করে। আগে ব্যাট করে রান করেছিল ৬ উইকেটে ১৮৮। জবাব দিতে নেমে খুলনাকে ১৯.৩ ওভারে মাত্র ১২৩ রানে বোতলবন্দি করে ফেলে। কুমিল্লার পরের ম্যাচটিও ছিল খুলনার বিপক্ষে। এবার ব্যাটিং পাওয়ার দেখাতে পারলেও বোলিং পাওয়ার দেখাতে পারেনি। যে কারণে ৫ উইকেটে ১৮২ রান করেও ম্যাচ হেরেছিল ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে। খুলনা ১৮.৪ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে রান করেছিল ১৮৩।
প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লা পেয়েছিল বরিশালকে। এবার তারা বোলিং শক্তি প্রদশর্ন করে বরিশালকে ৮ উইকেটে ১৪৩ রানে আটকে রেখেছিল। কিন্তু পরে নিজেদের ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য প্রমাণ করতে পারেনি। ৭ উইকেটে করে মাত্র ১৩৩। এই ব্যাটিং শক্তির চুড়ান্ত প্রদশর্নী তারা করে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রামের বিপক্ষে। প্রথমে বোলিং শক্তি দেখিয়ে চট্টগ্রামকে ১৯.১ ওভারে ১৪৮ রানে অলআউট করে। সেই রান তারা তাড়া করে রকেট গতিতে মাত্র ১২.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে।
ব্যাটিংয়ে ডু প্লেসি ১০ ম্যাচে ২৯১ রান করে আছেন পঞ্চম সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারি। এ ছাড়া মাহমুদুল হাসান জয় ১০ ম্যাচে ২২৭, লিটন দাস ৮ ম্যাচে ২০৫, মঈন আলী ৭ ম্যাচে ১৮৭, দলপতি ইমরুল কায়েস ১০ ম্যাচে ১৮৪ রান করে ফাইনালে নিজেদের শেষবারের মতো নিংড়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
বোালিংয়ে সেরা পাঁচের দুজন আবার কুমিল্লার। ১৮ উইকেট নিয়ে সবার উপরে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ১৪ উইকেট নিয়ে পাঁচে স্পিনার তানভীর ইসলাম। সাত ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে সাতে আছেন পেসার শহীদুল ইসলাম। এ ছাড়া নাহিদুল ১১টি, মঈন আলী ৯টি উইকেট নিয়েছেন। এদের সঙ্গে সুনিল নারিন আছেন মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে। কখন ব্যাট হাতে, কখন বল হাতে জ্বলে উঠবেন তা হয়তো তিনি নিজেই জানেন না।
এমপি/এসআইএইচ