সাকিবের ব্যর্থতার পরেও ফাইনালে বরিশাল
আইপিএলের নিলামে দুই দফা নাম উঠার পরও সাকিব অবিক্রিত থেকে যান। বিষয়টি সাকিবের মতো ক্রিকেটারের জন্য মোটেই মানানসই নয়! অবাক করার মতোই। অথচ বিপিএলে টানা পাঁচ ম্যাচে তিনি হয়েছেন ম্যাচ সেরা। কিন্তু নিলামে নাম না উঠার পরদিনই বিপিএলে ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে সাকিব পুরোই ম্রিয়মাণ। ব্যাট হাতে করেন মাত্র ১ রান। বল হাতে ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে উইকেট শূন্য। ম্যাচে সাকিব ম্রিয়মাণ থাকলেও তার দলের জয়রথ থেমে যায়নি।
সোমবারের ম্যাচে ৮ উইকেটে মাত্র ১৪৩ রান করেও ফরচুন বরিশাল ১০ রানে ম্যাচ জিতে উঠে গেছে ফাইনালে। কুমিল্লাকে তারা আটকে রাখে ১৩৩ রানে, পতন ঘটায় ৭ উইকেটের। তবে কুমিল্লার ফাইনালে উঠার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তারা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে খেলবে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায়।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বরিশালের সংগ্রহ মাত্র ৮ উইকেটে ১৪৩ হলেও শুরুর ভঙ্গিতে এতো কম রান হওয়ার কথা ছিল না। পাওয়ার প্লেতে রান আসে বিনা উইকেটে ৫৭। মারমুখী মুনিম শহারিয়ার। মারমুখী গেইল। এই যদি হয় শুরুর অবস্থা, তাহলে ২০ ওভার শেষে ফরচুন বরিশালের রান কোথায় গিয়ে দঁড়াবে? ১৮০, ১৯০ ২০০, নাকি তার থেকেও বেশি? এ রকম ভাবনায় বিভোর ছিলেন যারা, তাদের ঘোর কাটতে মোটেই সময় লাগেনি। পাওয়ার প্লের পর প্রথম বলেই গেইল (১৯ বলে ২২) ফিরে যান। এরপর বরিশালের ইনিংসে শুরু হয় আসা-যাওয়ার খেলা। একটু পর একই ওভারে ফিরে যান মুনিম শাহরিয়ার ও সাকিব আল হাসান। মুনিমকে তানভীর এলবিডব্লির ফাঁদে ফেললে ৩০ বলে ৪ ছক্কা ও ২ চারে শেষ হয় ৪৪ রানের ইনিংস। তানভীরের বলেই সাকিবের ভুল কলে তিনি নিজেই রান আউট হয়ে যান। অপরপ্রান্তে নাজমুল হোসেন শান্ত ক্রিজ ছেড়েই বের হননি। আইপিএলের নিলামে অবিক্রিত থেকে যাওয়া সাকিবের জন্য বিষয়টি সুখকর ছিল না। রান আউট যেন তারই প্রতিচ্ছবি ছিল! পরবর্তীতে আর কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। এমনকি ঝড়ো ইনিংসও। এরপর ছক্কা হয়েছে মাত্র দু’টি। ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে ওভার প্রতি রান সংগ্রহও। জিয়াউর ১৭, ডোয়াইন ব্রাভোর ১৭ বরিশালের সংগ্রহকে ৮ উইকেটে ১৪৩ পর্যন্ত নিয়ে যায়। শেষ ৫ ওভারে তারা মাত্র ৩৩ রান সংগ্রহ করে। শহিদুল ইসলাম ২৫ রানে ৩ উইকেট নেন। মঈন আলী ২৩ রানে নেন ২টি।
বরিশাল আগেও এ রকম রান করে একাধিক ম্যাচ জিতেছে। লিগ পর্বে কুমিল্লার বিপক্ষেই ৫ উইকেটে ১৫৫ রান করে ম্যাচ জিতেছিল ৩২ রানে। কুমিল্লা ৯ উইকেটে মাত্র ১২৩ রান করেছিল। সেই প্রেরণা বরিশালের এবারও ছিল এবং তারা সফলও হয়। যদিও শুরুতে কুমিল্লা ছিল সাবধানী। মাহমুদুল হাসান জয় ও লিটন দাসের উদ্বোধনী জুটি পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৩৮ রান সংগ্রহ করেন। এই রান রেট বজায় রেখেই তাদের জুটি ভাঙে ১০.৪ ওভারে ৬২ রানে। জয় ৩০ বলে ১ ছক্কায় ২০ রান করে মেহেদি হাসান রানার শিকার হন। দলপতি ইমরুল কায়েস (৫) ও লিটন দাস (৩৮) ফিরে যান শফিকুল ইসলামের একই ওভারে। লিটন দাস ৩৮ রান করেন ৩৫ বলে। বাউন্ডারি ছিল চারটি। এ সময় কুমিল্লা কিছুটা চাপে পড়ে যায়। তখন তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৪৯ বলে ৭৬ রানের। এই ব্যবধান আবার কমে আসে মঈন আলী ১৫ বলে ৩ ছক্কায় ২২ রানের ইনিংস খেললে। তিনি আউট হন দলীয় ১০৭ রানে। কুমিল্লার জয়ের জন্য প্র্রয়োজন ২৮ বলে ৩৭ রানের। খুব কঠিন নয়। এরপর ডু প্লেসি সুনিল নারিনকে নিয়ে এগুতে থাকেন। কিন্তু এ সময় মেহেদী হাসান রানা ২ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে বরিশালের জয়ের পথ তৈরি করে দেন। ১৭ নম্বর ওভারে তিনি দেন মাত্র ৩ রান। ১৯ নম্বরে তার বলে লং অফে সুনিল নারিনের ক্যাচ ব্রাভো ফেলে দিলে বরিশাল শিবিরে কিছুটা হতাশা নেমে আসে। কিন্তু পরের বলেই রানা ডু প্লেসিকে ফিরিয়ে দেন তৌহিদ হৃদয়ের সহায়তায়। ডু প্লেসি ১টি করে চার ও ছয় মেরে ১৫ বলে ২১ রান করেন। শেষ ওভারে কুমিল্লার প্রয়োজন পড়ে ১৮ রানের। মুজিব উর রহমান মাত্র ৭ রান দিয়ে উইকেট নেন ২টি। ৩ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন মেহেদি হাসান রানা।
এমপি/আরএ