খুলনাকে বিদায় করে টিকে রইল চট্টগ্রাম
বসন্ত বরণ আর ভালোবাসা দিবসে মিলে মিশে একাকার রাজধানী ঢাকা। কিন্তু মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে তার ছিটেফোঁটাও ছিল না। সেখানে ভালোবাসার পরবির্তে ছিল জিঘাংসা। একে অন্যকে ঘায়েল করা। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের এলিমেনেটরে সেই লড়াইয়ে অবতীর্ন হয়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও খুলনা টাইগার্স। জিঘাংসার লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে চট্টগ্রাম। ৭ রানে জিতে তারা টিকে রয়েছে আসরে। ফাইানলে যাওয়ার জন্য তাদের খেলতে হবে আরো একটি ম্যাচ। যে ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হেরে যাওয়া দলের বিপক্ষে ১৬ ফেব্রুয়ারি খেলবে কোয়ালিফায়ার-২ ম্যাচ।
ম্যাচটি ছিল হাই স্কোরিং। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চট্টগ্রাম ৫ উইকেটে ১৮৯ রান করেছিল। টার্গেট অতিক্রম করতে নেমে খুলনা উত্তেজনার রেণু ছড়িয়ে শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১ বল বাকি থাকতেই তাদের হার নিশ্চিত হয়ে যায়। কারণ শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৮ রানের। ওয়াইড বা নো বল হলে, তবেই জয়ের একটা সম্ভাবান বেঁচে থাকতো। শেষ বলে তখন নিতে হতো ছক্কা। কিন্তু এতো সব হিসেব-নিকেশে যেতে দেননি বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ। কোনো রানই নিতে দেননি। উল্টো থিসারা পেরেরাকে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরে নেন। খুলনার ইনিংস আটকে যায় ৫ উইকেটে ১৮২ রানে।
দুই দলের ইনিংস বড় হওয়ার পেছনে কারিগর ছিলেন দুই বিদেশি। চট্টগ্রামের ম্যাচ সেরা চাদউইক রাসেল ও খুলনার আন্দ্রে রাসেল। ওয়ালটন ৪৪ বলে ৭টি করে চার ও ছয় মেরে ৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন। তার এই ইনিংস দলের জয়ে রেখেছে বড় ভুমিকা। কারণ তিনি দলের বিপর্যয়ে হাল ধরে খেলেছিলেন এই ইনিংস। আসরের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান উইল জ্যাকস ইনজুরির কারণে শেষ মুহুর্তে ছিটকে পড়লে চট্টগ্রামের শক্তি বহুলাংশে হৃাস হয়ে যায়। টস হেরে ব্যাট করতে নামার পর সেই চিত্র বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছিল ১৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে। উইল জ্যাকসের পরিবর্তে খেলতে নামা কেনার লুইস ৩৯ রান করলেও নামের সঙ্গে ছিল বেমানান। ৩২ বলে ৩৯ রান করেন। এরপর শামীম হোসেনও (১০) দ্রুত আউট হয়ে যান। ফলে ১০ ওভার শেষে তাদের রান ছিল ৪ উইকেটে মাত্র ৬৬। ওয়ালটন ১১ বলে ১৬, মিরাজ ১ বলে ১ রান। চট্টগ্রামের বড় ইনিংস গড়ার আশা শেষ হয়ে যায়! কিন্তু আশাহত হয়নি ওয়ালটন। মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে তিনি রানের পাগলা ঘোড়া হয়ে ছুটেন। যে কারণে শেষ ১০ ওভারে আসে ১০৩ রান। মিরাজের সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে যে ৯.৪ ওভারে যোগ করেন ১১৫ রান। ৪ বল বাকিত থাকতে মিরাজ ৩০ বলে ৩৬ রান করে আউট হয়ে যান। মিরাজ রানের পাগলা ঘোড়া হতে না পারলেও তার এই সঙ্গ ওয়ালটনকে রানের নেশায় মাতোয়ার করে তুলে। ২৮ বলে চারটি করে চার ও ছয় মেরে অর্ধশত রান করার পর বাকি ৩৯ রান করতে বলে খেলেন ১৬টি। রানের পাগলা ঘোঢ়া ছুটে মূলত ১২ নম্বার ওভার থেকে। মেহেদি হাসানের সেই ওভারে ওয়ালটন ২ ছক্কা ও ১ চারে ১৮ রান তুলে নেন ওয়ালটন। খালেদের করা পরের ওভারে আদায় করে নেন ১৪। ১৪ নম্বার মেহেদী হাসান মিরাজ খেলায় রান আসে ৬। এইি ঘাটতি আবার রুহেল মিয়ার করা ১৫ নম্বারে ওয়ালটন পুষিয়ে দেন ২২ রান নিয়ে। ফরহাদ রেজা করা ১৬ নম্বারে আসে ১৪ রান। থিসারা পেরেরার করা ১৭ নম্বার ওভার আবার ওয়ালটন ও মিরাজ মিলে খেললেও রান আসে মাত্র ৫। শেষ ৩ ওভারে রান আসে ১০,২০ ও ৯। খালেদ ৪০ রানে নেন ২ উইকেট।
কুমিল্লার বিপক্ষেও খুলনা প্রায় এ রকম টার্গেট পেয়েছিল। কুমিল্লার করা ৫উইকেটে ১৮২ রান তারা আন্দ্রে ফ্লেচার (অপরাজিত ১০১) ও মেহেদী হাসানের (৭৪) ১৮২ রানের জুটিতে ৯ উইকেটে সহজেই ম্যাচ জিতেছিল। কিন্তু এবার আর সেরকম সূচনা করা সম্ভব হয়নি। ফ্লেচারের ৫৮ বলে ৪ ছক্কা ও ৬ চারে অপরাজিত ৮০ রান শুধুই আফসোস বাড়িয়েছে। ফ্লেচারের সে ফিরে যান ২ রানে। দলের রানে কিন্তু বিপর্যয়ের আভাস ছিল না। এর কারণ ছিলেন আন্দ্রে ফ্লেচার। প্রথম উইকেট পড়েছিল ২১ রানে, দ্বিতীয় উইকেট ৪৩ রানে। যে কারণে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে রান আসে ২ উইকেটে ৫৮। চট্টগ্রামের ছিল ২ উইকেটে ৩৯। আন্দ্রে ফ্লেচার এবার সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যান স্বয়ং দলপতি মুশফিকুর রহিমকে। দুই জনে মিলে রানের পাগলা ঘন্টা বাজিয়ে ছুটতে থাকেন জয়ের সন্ধানে। জুটিতে ৮ ওভারে ৬৪ রান যোগ হওয়ার পর মুশফিকুর রহিম ২৯ বলে ৪ ছক্কা ও ১ চারে ৪৩ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে আউট হওয়ার সময় খুলনার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৭.৫ ওভারে ৮৩ রানের। ওভার প্রতি ১১.০৬৬ করে। ইয়াসির আলী এসেও পাগলা ঘন্টা বাজিয়ে রান তুলতে থাকেন। একদিকে ইয়াসির আলী, আরেক দিকে ফ্লেচার দুই জনের তান্ডবে খেলা জমে উঠে। ইয়াসির আলী ২৪ বলে ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৪৫ রান করে আউট হওয়ার সময় খুলনার প্রয়োজন পড়ে ৯ বলে ১৮। এই জুটিতে রান আসে ৬৫ রান আসে ৬.২ ওভারে। ফ্লেচার ৩৪ বলে ফিফটি তুলে নিয়ে দলকে আরেকটি জয় এনে দেওয়ার স্বপ্ন দেখাতে থাকেন। শেষ ২ ওভারে প্রয়েজন পড়ে ১২ রানের। কিন্তু তখনই তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ফ্লেচার। ইয়াসির আলীর আউট হওয়া ওভারে মাত্র ৮ রান আসলে শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১৬ রানের। মেহেদী হাসান মিরাজের করা সেই ওভারে ফ্লেচার কিংবা নতুন ব্যাটসম্যান থিসারা পেরেরা কেউই কাজে লাগাতে পারেননি। রান আসে মাত্র মিস ফিল্ডিং থেকে আসা বাউন্ডারিসহ রান আসে ৮। শেষ থিসারা মিরাজের বলে তার হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিলে ফ্লেচারের অপরাজিত ৮০ রানের ইনিংস ম্লান হয়ে যায়। মিরাজ ৪০ রানে ২ উইকেট।
এমপি/এএস