সিলেটের আরেকটি হার প্লে-অফ রাউন্ডে কুমিল্লা
প্রতিপক্ষ বড় সংগ্রহ করলে যেমন সিলেট জিততে না পারলেও পাল্টা জবাব দেয়। তেমনি আগে ব্যাট করে নিজেরা বড় সংগ্রহ করেও জেতা হয়না।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সিলেট পর্বের শেষ ম্যাচেও তারা ৪ উইকেটে ১৬৯ রান করেও জিততে পারেনি। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ১ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে ৪ উইকেটে ১৭৩ রান করে। জয় সূচক রান আসে আলাউদ্দিন বাবুর বলে আবু হায়দার রনির ব্যাট থেকে। এই জয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে প্লে অফ রাউন্ডে উঠে গেল কুমিল্লা। ৮ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১১। অপরদিকে সিলেট নিজেদের মাঠে একটি ম্যাচও জিততে পারল না। ৯ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৩। লিগ পর্বের শেষ দুই রাউন্ডের খেলা শুরু হবে ঢাকায় ১১ ফেব্রুয়ারি।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সিলেটের ইনিংস গড়ে উঠেছিল আবারও কলিন ইনগ্রামের ব্যাটে ভর করে। পরপর দ্বিতীয় ম্যাচেও তিনি সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন। আগের দিন মঙ্গলবার ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৯০ রান করে আউট হয়েছিলেন। তার এই ইনিংস ভর করেই সিলেট বরিশালের ৪ উইকেটে ১৯৯ রানের জবাব দিয়েছিল ৬ উইকেটে ১৮৭ রান করে। এবার তিনি করেন ৮৯ রান। তবে এবার যোগ্য সঙ্গ পান আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয়ের কাছ থেকেও। মূলত এই দুই জনের ব্যাটেই সিলেটের রান ৫ উইকেটে ১৬৯ পর্যন্ত যেতে পেরেছিল।
চলতি আসরে যেখানে উদ্বোধনী জুটি মানেই ব্যর্থতার আরেক নাম। কদাচিৎ দেখা যায় ভালো সূচনা করতে, এই তালিকায় আছে সিলেটেরও নাম, আজ সেখানে সিলেটের দুই ওপেনার অসম্ভব রকমের সফল। জুটিতে তারা ১০৫ রান এনে দেন ১২.২ ওভারে। দুই জনই সমান তালে খেলেছেন। এনামুল হক বিজয় ৩৩ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে ৪৬ রান করে আউট হওয়ার সময় ইনগ্রামের রান ছিল ৪০ বলে ৫৬। তিনি ফিফটি করেন ৩৫ বলে। এরপর দলে যে ৬৪ রান যোগ হয়েছে, সেখনে ইনগ্রামের অবদান ছিল ৩৩। লিন্ডল সিমন্স ১৩ বলে ১৬ ও আলাউদ্দিন বাবু ৮ বলে ১০ রান করেন। দলপতি রবি বোপারা ১ রান করে আউট হন।
এনামুল বিজয় আউট হওয়ার পর অন্যপ্রান্তে কেউ সেভাবে দাঁড়াতে না পারলেও ইনগ্রাম কিন্তু সেঞ্চুরির দিকে ছুটছিলেন। মোস্তাফিজের করা ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলেই তিনি ছক্কা হাঁকিয়ে ৮৩ থেকে ৮৯ রানে পৌছে যান। যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল এবার আর বঞ্চিত হবেন না। কিন্তু পরের বলও উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফ্লিক করলে ডিপ স্কয়ার লেগে নাহিদুলের হাতে ধরা পড়লে আবারও হতাশ হতে হয় তাকে। সেঞ্চুরি বঞ্চিত হলেও ম্যাচ সেরা হন তিনি। তাকে আউট করে ১৪ উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজ ফরচুন বরিশালের দুই বোলার সাকিব ও ডুয়াইন ব্রভোর সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়ে যান। কিন্তু ওভারের শেষ বলে আলাউদ্দিন বাবুকে আউট করে নিজেই এককভাবে সবার উপরে উঠে আসেন।
সিলেটের ম্যাচে হারানোর কিছু নেই। জয় আসলে হবে সান্ত¦নার। কিন্তু কুমিল্লার জন্য এই ম্যাচ অনেক কিছু। প্লে অফ রাউন্ডে যেতে হলে জয়টা গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হারায় লিটন দাস ও ডু প্লেসির মতো ব্যাটসম্যানকে। লিটনকে (৭) স্বাধীন ও ডু প্লেসিকে (২) নাজমুল আউট করেন। পরে মাহমুদুল হাসান জয় ও মঈন আলীর ব্যাটে শুরুর এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে ম্যাচে ফিরতে থাকে। জুটিতে ৯২ রান আসে ১১ ওভারে। এ সময় মঈন আলীকে রবি বোপারা আউট করলে স্বস্তি ফিরে আসে সিলেট শিবিরে। বোপারার বলে ক্যাচ ধরেন স্বাধীন। মঈন আলীর ৩৫ বলে ৪৬ রানের ইনিংসে ছিল ২টি ছক্কা ও ৪টি চার। এ সময় কুমিল্লার জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৩৭ বলে ৬৬ রানের। ইমরুল কায়েস এসে ২০০ স্ট্রাইক রেটে ৮ বলে ২ ছক্কায় ১৬ রান করে রানের সঙ্গে বলের ব্যবধান কিছুটা কমিয়ে আনেন।
জয়ের সঙ্গে ১৫ বলের জুটিতে রান আসে ২৭। অপরপ্রান্তে মাহমুদুল হাসান জয় ৪২ বলে বিপিএলে প্রথম ফিফটি তুলে নিয়ে দলকে জয়ের পথে ধরে রাখার চেষ্টা করতে থাকেন। সুনিল নারিন এসে জুটি বাঁধার পর সে চেষ্টা অব্যাহত থাকে। কিন্তু আলাউদ্দিন এক ওভরে পরপর দুই বলে মাহমুদুল ও আরিফুল আউট হয়ে গেলে কুমিল্লার জন্য টার্গেট কঠিন হয়ে পড়ে। মাহমুদুল ৫০ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে ৬৫ রান করে উইকেটের পেছনে এনামুলের হাতে এবং আরিফুল বোল্ড হন। পরে সেই কঠিনেরেই জয় করে নেয় কুমিল্লা। শেষ দুই ওভারে তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ২২ রানের। কিন্তু স্বাধীনের করা ১৯ নম্বারে ওভারেই জয়ের কাজ সেরে ফেলে কুমিল্লা। সুনিল নারিন স্বাধীনের এই ওভার থেকে ১৯ রান আদায় করে নেন ১ ছক্কা ও ২ চারে। সঙ্গে ছিল ৩টি ওয়াইড বল। শেষ ওভারে ৩ রানের প্রয়োজন ছিল। আলাউদ্দিন বাবুর করা ওভারে প্রথম ৪ বলে আসে ২ রান। পঞ্চম বলকে আবু হায়দার রনি সীমানা পার করে দলকে জয় এনে দেন। আলাউদ্দিন বাবু ২৪ ও স্বাধীন ৩৬ রানে নেন ২টি করে উইকেট।
এমপি/এমএমএ/