দেশের ফুটবলে এমন সুসংবাদ শোনার অপেক্ষা ছিল দীর্ঘদিনের। গেল কয়েক বছর ধরে এ বিষয়ে নানা আলোচনার পাশাপাশি ফিফার সঙ্গে চিঠি চালাচালি চালিয়েছে বাফুফে। অবশেষে তাদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। সেই সাফল্যের খবরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই দেশের ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা।
এদিন লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়িয়ে খেলার জন্য ফিফার অনুমতি পেয়েছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হামজা চৌধুরী। এমন খবর পাওয়ার পর সমর্থকদের মতো বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়ালও দারুণ খুশি হয়েছেন। রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামজাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি। এরপর শুত্রবার সকালে বাফুফে সভাপতি গুলশানের নিজ বাসায় গণমাধ্যমের সামনে হামজা ও দেশের ফুটবলের বর্তমান ও ভবিষ্যৎসহ নানা দিক নিয়ে কথা বলেন।
লেস্টার সিটির মিডফিল্ডার হামজাকে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তি তাবিথের কাছে বেশ ইতিবাচক। তিনি মনে করেন, এর মধ্য দিয়েই প্রবাসী বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা আসার অনুপ্রেরণা পাবেন। তিনি বলেন, 'আশা করছি, হামজা চৌধুরীর মতো অন্য প্রবাসী যারা খেলছেন, তাদের চিহ্নিত করে আমরা বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারব।'
গত দেড় বছর ধরে বাফুফের সংস্পর্শে রয়েছেন হামজা বিষয়টি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, হামজার সঙ্গে বাফুফের দেড় বছর ধরে কথা চলছে। তার সঙ্গে আমার সরাসরি কথা হয়নি। তবে সামনের দিকে সরাসরি বসব। প্রস্তুতি নিচ্ছি, এরই মধ্যে আরও দুয়েক জন খেলোয়াড় পাওয়া যায় কি না। সব প্রস্তুতি নিয়ে হামজার সঙ্গে বসার চিন্তা করছি।
হামজা ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ইংল্যান্ডে রয়েছেন। প্রিমিয়ার লিগে খেলার পাশাপাশি তিনি খেলেছেন দেশটির অনূর্ধ্ব ২১ দলের হয়েও। যেখানে তার সতীর্থ হিসেবে ছিলেন ইংল্যান্ডের তারকা ফুটবলার ফিল ফোডেনও। সেখানকার ফুটবল আর এখানকার ফুটবল আকাশ পাতাল তফাৎ। তাই এমন একজন ফুটবলার হঠাৎ এসে দেশের ফুটবলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন হতে পারে।
তবে বাফুফে সভাপতি মনে করেন, হামজার সেই সামর্থ্য রয়েছে। তিনি বলেন, পেশাদার ফুটবলারদের সামর্থ্য আছে সব জায়গায় মানিয়ে নেওয়ার। আমাদের খেলোয়াড়দেরও তা আছে। বিদেশেও যারা খেলেন তাদেরও সেই সামর্থ্য আছে। আসলে দেখার বিষয়, যেখানে খেলব সেই ভেন্যুতে, সেখানে মানিয়ে নিতে পারেন কি না। বিশেষ করে অ্যাওয়ে ম্যাচগুলোতে কীভাবে মানিয়ে নেবেন সেটি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। কাজ করব।
এ সময় জাতীয় দলের বর্তমান দুই তারকা খেলোয়াড় জামাল ভূঁইয়া ও তারেক কাজীর উদাহরণ দিয়ে তাবিথ আরও বলেন, অতীতে এসেছিলেন জামাল ভূঁইয়া। ও তারিক কাজী। অন্য লিগ থেকে। তারা ধাপে ধাপে এখানে পরিচিত হয়েছেন। তাদের দেখে আমরা হামজা পর্যন্ত এসে পৌঁছেছি। এটি আমাদের অর্জন। তাকে পেয়েছি। টপ খেলোয়াড় সে। এখন তাকে কীভাবে খেলাব তা জাতীয় টিমস কমিটি দেখবে। এ ছাড়া কোচের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।
হামজার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশের অনেক ফুটবলারের ইউরোপীয়ান ক্লাবে সুযোগ পাওয়ার ও পথ খুলবেও মনে করেন তাবিথ। তিনি বলেন, আমরা সাবেক অধিনায়কদের সঙ্গে কথা বলেছি (হামজার প্রসঙ্গে)। রানিং খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে জোরালোভাবে সাড়া পাচ্ছি। তারাও চাইছেন ভালো খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলতে। যেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী দল গঠন করে ভালো ফুটবল খেলা যায়, পরিবেশ তৈরি হয়। সাফল্য পাওয়া যায়। শুধু তারাই দেশের হয়ে খেলবেন তা নয়, লোকাল খেলোয়াড়রাও বিদেশিদের (হামজা) মাধ্যমে বাইরে খেলার সুযোগ পাবেন। এটাও হতে পারে।
এ সময় হামজা দলে যোগ দিলে বাংলাদেশ আরো অনেক শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি তিনি অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক আশা। দল অনেক শক্তিশালী হবে। ডিফেন্স অর্গানাইজ হবে আরও। পাশাপাশি অ্যাটাকিং সাইডও ভালো হতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের অনেক মেধা আছে। দেশের বাইরে, ইতালিয়ান, জার্মানি কিংবা দক্ষিণ আমেরিকান যারাই আছেন, আমি বিশ্বাস করি, হামজা তাদের অনুপ্রেরণা জোগাবেন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলার জন্য।
এ দিকে আগামী মার্চে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে খেলবে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে হামজা খেলবেন কি না, তা নিশ্চিত নয় এখনো। বাফুফে সভাপতি জানালেন, লেস্টার সিটির সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন তারা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো তথ্য আপাতত নেই। এখনো সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। তবে এএফসি এশিয়ান কাপ নিয়ে আমরা প্ল্যানিং করছি। এর আগে বাংলাদেশের প্রীতি ম্যাচ ক্লোজড ডোর হবে। ভিডিও বা অন্য কিছুর জন্য বাইরের কাউকে অ্যালাউ করতে দেব না। এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব থেকে একটি দল যাবে গ্রুপ সেরা হয়ে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। প্রথম ম্যাচ ভালো করতে পারলে গ্রুপ সেরা হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার সুযোগ থাকবে। ২৫ জানুয়ারি প্রিমিয়ার লিগ শেষ হবে। তারপর চার সপ্তাহ জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হবে। এরই মধ্যে কার সঙ্গে খেলব, কবে খেলব, কবে যাব ভারতে-তা আরও একটু সময় নিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।