মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটার
গ্রাহাম থর্প। ছবি: সংগৃহীত
মাত্র ৫৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার গ্রাহাম থর্প। গত ৫ আগস্ট তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। তবে কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছিল তা এতোদিন জানা যায়নি। অবশেষে জানা গেলো স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি থর্পের। তার পরিবার নিশ্চিত করেছে, আত্মহত্যা করেছেন সাবেক এই ইংলিশ ব্যাটার।
দ্য টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার স্ত্রী অ্যামান্ডা জানান, কয়েক বছর ধরে বিষণ্নতা আর দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন থর্প। অ্যামান্ডা বলেন, একজন স্ত্রী এবং দুজন কন্যা, যারা তাকে ভালোবাসত এবং যাদের সে ভালোবাসত, তারা থাকার পরও ওর পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে সে এতটা অসুস্থ ছিল যে, সে সত্যিই বিশ্বাস করত, সে না থাকলেই আমরা ভালো থাকব। আসলেই সে এমন করেছে এবং আত্মহত্যা করেছে। এতে আমরা বিধ্বস্ত হয়ে গেছি।
৫৫ বছর বয়সী থর্প ইংল্যান্ডের জার্সিতে ১০০ টেস্ট ও ৮২টি ওয়ানডে খেলেছেন। ক্রিকেটীয় জীবন শেষে কোচিংয়ে নাম লেখান তিনি। বেশ কিছুদিন পালন করেন ইংল্যান্ডের সহকারী কোচের দায়িত্ব। ২০২২ সালে আফগানদের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল তার। তবে সে সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
তার স্ত্রী বলছেন, এর আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন থর্প, কয়েক বছর ধরেই গ্রাহাম বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তায় ভুগছিল। ২০২২ সালের মে মাসে সে আত্মহত্যার জোরালো চেষ্টা চালায়। এরপর তাকে আইসিইউতে (নিবিড় পর্যবেক্ষণ কক্ষ) লম্বা সময় থাকতে হয়।
অ্যামান্ডা আরও বলেন, আশার ঝিলিক দেখা দিয়েছিল, পুরোনো গ্রাহামকে একটু দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু এরপরও সে বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তায় ভুগেছে। মাঝেমধ্যে যেটা খুবই গুরুতর হয়ে পড়ে। পরিবার হিসেবে আমরা তাকে সহায়তা করেছি। সে অনেক, অনেক রকমের চিকিৎসা করিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছুই কাজে দেয়নি।
প্রজন্মের অন্যতম সেরা ব্যাটার থর্পের মেয়ে কিটি বলেছেন, অনেক চেষ্টা করেও তাকে ফেরানো যায়নি। আমরা এটা নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পাই না। এটিকে লুকানোর কিছু নেই, লজ্জারও কিছু নেই। আমরা আগে তাকে সাহায্য করছিলাম যাতে সে ঠিক হয়, তাকে রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। এ কারণে আমরা কিছু বলিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে অভিষেক হয় থর্পের। প্রথমে ওয়ানডে দলে অভিষেক। সেই বছরই টেস্ট দলে খেলেন। ২০০২ সাল পর্যন্ত এক দিনের ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। ২০০৫ সালে টেস্ট থেকে অবসর নেন এই বাঁ হাতি ব্যাটার।
ইংল্যান্ডের হয়ে ১০০টি টেস্ট খেলেছেন থর্প। করেছেন ৬৭৪৪ রান। ৪৪.৬৬ গড়ে রান করেছেন তিনি। ১৬টি শতরান ও ৩৯টি অর্ধশতরান করেছেন। টেস্টে তার সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ২০০। এক দিনের ক্রিকেটে ৮২টি ম্যাচ খেলে ২৩৮০ রান করেছেন থর্প। ৩৭.১৮ গড়ে রান করেছেন তিনি। এক দিনের ক্রিকেটে ২১টি অর্ধশতরান করেছেন ইংল্যান্ডের ব্যাটার। সর্বোচ্চ রান ৮৯।
ক্যারিয়ারে ৩৪১টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন থর্প। ২১,৯৩৭ রান করেছেন তিনি। ৪৫.০৪ গড়ে রান করেছেন থর্প। ৪৯টি শতরান ও ১২২টি অর্ধশতরান করেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে তার অবদানের জন্য ২০০৬ সালে তাকে ‘মেম্বার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’ সম্মান দেওয়া হয়।