২ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপে শুভসূচনা বাংলাদেশের
ছবি: সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কাকে অল্পতেই আটকে রেখে কাজটা আগেই সহজ করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। ছোট এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও বেশ চাপে ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপে শূভসূচনা করলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ব্যাট হাতে অবশ্য শুরুটা ভালো করতে পারেননি দুই টাইগাররা ওপেনার। ব্যর্থ হন শান্তও। তবে দলের হাল ধরেছিলেন তাওহীদ হৃদয়-লিটন দাস। এ দুজনের ব্যাটেই জয়ের ভিত পায় বাংলাদেশ, হৃদয়-লিটনের ৬৩ রানের জুটির সুবাদেই ৮ উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত ৬ বল হাতে রেখে জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ।
লঙ্কানদের দেয়া ১২৫ রানের লক্ষ্যে আজ টাইগারদের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন তানজিদ তামিম ও সৌম্য সরকার। তবে ব্যাট হাতে শুরুটা রাঙাতে পারেননি সৌম্য। ব্যাটিং ইনিংসের তৃতীয় বলেই শূন্য রান করে সাজঘরের পথ ধরেছেন সৌম্য সরকার। ধনঞ্জায়া ডি সিলভার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার মুঠোবন্দী হয়ে আউট হন তিনি।
এরপর টাইগারদের আরও চাপের মুখে ঠেলে দেন তরুণ তামিম। নুয়ান তুষারার বলে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বোল্ড আউট হন এই ওপেনারও। ফলে প্রথম দুই ওভারেই দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ক্রিজে লিটনের সঙ্গী হন অধিনায়ক শান্ত। দুজন মিলে দেখেশুনে খেলতে থাকেন লঙ্কান বোলারদের। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশ প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় ইনিংসের পঞ্চম ওভারের শেষ বলে। এরপর ষষ্ঠ ওভারেই বিদায় নেন শান্ত।
ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে তুষারার বলে আসালাঙ্কার মুঠোবন্দী হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন টাইগার অধিনায়ক। শান্তর বিদায়ে চাপে পড়া বাংলাদেশের হাল ধরেন লিটন-হৃদয় জুটি। এ দুজন মিলে লঙ্কান বলারদের দেখেশুনে খেলে গড়েছেন ৬৩ রানের জুটি। একপ্রান্তে লিটন ধরে খেললেও অপরপ্রান্তে আগ্রাসী ছিলেন হৃদয়।
তবে দলীয় ৯১ রানে হাসারাঙ্গার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে আউট হন হৃদয়। তবে ফেরার আগে ৪ ছয় ও এক চারে ২০ বলে ৪০ রান করেন তিনি। তাঁর মারকুটে ব্যাটিংয়েই জয়ের ভিত পায় বাংলাদেশ। এদিকে হৃদয় ফেরার পর আউট হন লিটনও। এরপর একে একে আউট হন সাকিব আল হাসান এবং রিশাদ হোসেন ও তাসকি আহমেদ। ১১৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে তখন পরাজয়ের শঙ্কা লাল-সবুজের দলে।
তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে জয়ের স্বাদই দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সাইলেট কিলার খ্যাত এই ফিনিশার উনিশতম ওভারে দাশুন শানাকার করা প্রথম বলে ৬ মেরে চাপমুক্ত করেন দলকে। এরপর একই ওভারের শেষ বলে দৌড়ে দুই রান নিয়ে দলকে জয়ী করেন তিনি। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের প্রথম জয়।
এর আগে টসে জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর টাইগারদের অধিনায়ক নাজমুল শান্ত আজ শুরুতেই বল হাতে তুলে দিয়েছিলেন তরুণ তানজিম সাকিবকে। এরপর দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে আসেন সাকিব আল হাসান। প্রথম দুই ওভারে ১৩ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। তাসকিন আক্রমণে আসেন ইনিংসের তৃতীয় ওভারে। তাঁর করা ওভারের প্রথম দুই বলেই চার হাঁকান কুশল মেন্ডিস।
তবে তৃতীয় বলেই তাকে সাজঘরের পথ দেখান তাসকিন। টাইগার স্পিডস্টারের বলে বোল্ড হয়ে লঙ্কান অধিনায়ক ফিরেন ৮ বলে ১০ রান করে। এরপর ক্রিজে নিশাঙ্কার সঙ্গী হন কামিন্দু। কামিন্দুকে সঙ্গে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন নিশাঙ্কা। আজ আগ্রাসী মেজাজেই ছিলেন তিনি। পঞ্চম ওভারে সাকিবের বলে চারটি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। ফলে শুরুতেই এক উইকেট হারালেও রান বাড়তে থাকে লঙ্কানদের।
তবে পরের ওভারেই লাগাম টেনে ধরেন মোস্তাফিজ। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরের পথ দেখান কামিন্দু মেন্ডিসকে। এরপর নবম ওভারে তাঁর বলে আউট হয়েই ফিরতে হয় নিশাঙ্কাকেও। সাজঘরে ফেরার আগে তিনি করেছেন ২৮ বলে ৪৭ রান।
এরপর ধনঞ্জায়া ডি সিলভাকে নিয়ে দলের হাল ধরেছিলেন চারিথ আসালাঙ্কা। তবে ১৫ তম ওভারের প্রিওথম বলেই রিশাদের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাকিবের মুঠোবন্দী হন আসালাঙ্কা। ১৯ রান করে লঙ্কান এই ব্যাটার সাজঘরে ফেরার পর ক্রিজে ডি সিলভার সঙ্গী হন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তবে লঙ্কান অধিনায়ককে থিতু হওয়ার সুযোগই দেননি রিশাদ। ওভারের দ্বিতীয় বলেই হাসারাঙ্গাও ফিরেন সৌম্য সরকারের মুঠোবন্দী হয়ে।
পরপর দুই উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া শ্রীলঙ্কাকে এরপর চাপএ পড়ে ১৭তম ওভারেই। নিজের শেষ ওভারে রিশাদের করা বলে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে বাউন্ডারি ছাড়া করতে চেয়েছিলেন ডি সিলভা। তবে মিস করেন তিনি। এই সুযোগে বল লুফে নিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস।
এরপর লঙ্কানদের আরও দুইটি উইকেট তুলে নেন তাসকিন ও মোস্তাফিজ। টাইগার বোলারদের তোপের মুখে পড়ে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ করেছে ১২৪ রান। টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন রিশাদ ও মোস্তাফিজ।