চট্টগ্রামকে হারিয়ে খুলনার প্রতিশোধ
চট্টগ্রামেও বিপিএলের প্রথম ম্যাচে রান খুব বেশি উঠেনি। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৮ উইকেটে ১৪৩ রান করে। সেই রান খুলনা টাইগার্স অতিক্রম করে ১৮.৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে। ঢাকায় চারটি ম্যাচে প্রথম ইনিংসে রান উঠেছিল যথাক্রমে ১২৫/৮, ৯৬/১০, ১২৯/৮ ও ১০০/১০। এই দুই দল আবার ঢাকা পর্বে তৃতীয় দিন দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ম্যাচ ছিল আবার হাই স্কোরিং। চট্টগ্রামের ৭ উইকেটে ১৯০ রানের জবাব দিতে নেমে খুলনা করেছিল ৯ উইকেটে ১২৫ রান। এবার ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে ঢাকায় হারের প্রতিশোধ নিল খুলনা। চার ম্যাচে চট্টগ্রামের ছিল দ্বিতীয় হার। আর তিন মাচে খুলনার ছিল দ্বিতীয় জয়।
খেলা শুরুর আগে দুই দলপতিই বলেছিলেন, ১৭০ রান হলে ভালো স্কোর। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ঢাকার পুনরাবৃত্তই যেন হলো চট্টগ্রামেও! চট্টগ্রামের ইনিংস বড় হতে না পারার কারণ মিডল অর্ডারে ধ্বস নামা। হার্ড-হিটার ব্যাটসম্যান কেনার লুইস(১) শুরুতেই ফিরে গেলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে উইল জ্যাকস ও আফিফ হোসেন সেই ধাক্কা সামলে উঠেছিলেন। ৭.২ ওভারে ৫৭ রান যোগ করে শক্ত ভীত তৈরি করে দিয়েছিলেন তারা। জ্যাকস ২৩ বলে ২৮ রান করে থিসারা পেরেরার বলে বোল্ড হওয়ার পর ধ্বস শুরু হয়। একে একে ফিরে যান সাব্বির রহমান (৪), মেহেদী হাসান মিরাজ (৬) বেনি হাওয়েল (৫) এবং আফিফ হোসেন(৪৪)। ফলে শতরানের আগেই হারায় ৬ উইকেট। আর মিডল অর্ডারে ৫ উইকেট হারায় ৩৭ রানের ব্যবধানে। আর এতেই রান সংগ্রহের গতিতে ভাটা পড়ে। আফিফ হোসেন ৩৭ বলে ২ ছক্কা ও ৩ চারে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন। ষষ্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি আউট হওয়ার পরও উইকেট পতন অব্যাহত ছিল। দ্রুতই বিদায় নেন শামীম হাসান (২) ও রেজাউর রহমান রাজা (৭)। দলের সংগ্রহ ছিল ৮ উইকেটে ১৭.৪ ওভারে ১১৬ রান। দলের রান ১৩০ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও সেখান থেকে সংগ্রহ ১৪৩ পর্যন্ত গিয়েছে নবম উইকেট জুটিতে। নাঈম ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম শেষ ১৪ বল খেলে অবিচ্ছিন্ন থেকে যোগ করেন ২৭ রান। নাঈম ইসলাম ১৯ বলে ১ ছক্কা ও ২ চারে ২৫ ও শরিফুল ইসলাম ৬ বলে ১টি করে চার ও ছক্কা মেরে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ ওভারে আসে ১৭ রান।
খুলনার হয়ে থিসারা পেরেরা ১৮ রানে নেন ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন কামরুল ইসলাম, নাবিল সামাদ, মেহেদী হাসান, সেকক্কুগে প্রসন্ন ও ফরহাদ রেজা।
জবাব দিতে নেমে খুলনারও শুরুটা ভালো হয়নি। করোনা থেকে মুক্ত হয়ে সৌম্য সরকার (১) প্রথম খেলতে নেমে হতাশ করেন। আগের দিন দলপতি মুশফিকুর রহিম বলেছিলেন সৌম্য সরকারকে প্রথম দুই ম্যাচ মিস করেছিলেন। এর কারণও ছিল। বিসিএলে ( বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ) সৌম্য দারুণ ফর্মে ছিলেন। শুক্রবার শরিফুলের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে বেনি হাওয়েলের চমৎকার ক্যাচে পরিণত হন। চট্টগ্রামের মতো খুলনাও শুরুর এই ধাক্কা সামলে উঠে। তাদের হয়ে হাল ধরেন আন্দ্রে ফ্লেচার ও রনি তালুকদার। দুজনে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৫০ রান যোগ করেন ৬.৪ ওভারে। জুটি ভাঙ্গে রনি তালুকদার আউট হলে। নাসুমের বলে উইল জ্যাকসের হাতে ধরা পড়েন ১৭ রানে। নাসুমের সেই ওভারেই আউট হওয়ার ২ বলে আগে এলবিডব্লিউর শিকার হয়েছিলেন রনি। কিন্তু এডিআরএস(এডিশনাল ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম) নিয়ে তিনি বেঁচে যান। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্রথমে তার প্যাডে লেগেছিল। কিন্তু এক বল পরেই তিনি আউট হয়ে যান। রনি আউট হওয়ার পর মুশফিকুর রহিম এসে ফ্লেচারের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর রান সংগ্রহের গতি আরো বেড়ে যায়। ফ্লেচার আগে থেকেই ছিলেন রানে। সেখানে মুশফিকুর রহিমের ছিল রান খরা। আগের দিনই তিনি জানিয়েছিলেন এই ম্যাচ দিয়েই রানে ফিরতে চান। সে কথা রেখেছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। ফ্লেচারের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে রান আসে ৬.৩ ওভারে ৪৬। ফ্লেচার ৪৭ বলে ২ ছক্কা ও ৬ চারে ৫৮ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে বিগ শট খেলতে গিয়ে উইল জ্যাকসের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেন। কিন্তু মুশফিক ছিলেন অবিচল। ফ্লেচা আউট হওয়ার সময় দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪৬ রানের। বল অবশিষ্ঠ ছিল ৩৪টি। এ সময় মুশফিক শেক্কুগে প্রসন্নকে নিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ২৬ বলে ৪৫ রান যোগ করে দলের সহজ জয় তরান্বিত করেন। দুই দলের রান যখন সমান, প্রয়োজন জয়সূচক রানের। তখনই প্রসন্ন ১৫ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ২৩ রান করে মিরাজের বলে আফিফের হাতে ধরা পড়েন। জয়সূচক রান আসে মুশফিকের ব্যাট থেকে। মুশফিক দলকে জয়ী করে ড্রেসিং রুমে ফিরেন অপরাজিত ৪৪ রান করে। যেভাবে খেলছিলেন তাতে করে তার হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া কঠিন ছিল না। ৩০ বলের ইনিংসে ছিল ১ ছক্কা আর ৪ বাউন্ডারি। মেহেদী হাসান মিরাজ ২৪ রানে নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন শরিফুল ও নাসুম। ম্যাচ সেরা হন আন্দ্রে ফ্লেচার।
এমপি/এসআইএইচ