বিজয়ের দিনে বাংলাদেশের মেয়েদের ইতিহাসগড়া জয়
বাংলাদেশের মেয়েদের ইতিহাসগড়া জয়। ছবি: সংগৃহীত
এক বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে জাতি নিজেদের জন্য বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাম সংযোজিত করেছিল। সেই ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ঘড়ির কাটায় এ দেশে এখন ১৭ ডিসেম্বরের প্রথম প্রহর হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বাফেলো পার্কে এখনো ঠিক ১৬ ডিসেম্বরই আছে। বিজয়ের এমন দিনেই ঐতিহাসিক এক বিজয় উপহার দিলো বাংলাদেশের মেয়েরা।
বাফেলো পার্ক স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে মুর্শিদা খাতুনের ১০০ বলে অপরাজিত ৯১ রানে ভর করে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পুঁজির রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ২৫০ রান তোলে টাইগ্রেসরা। ব্যাট করতে নামা দলের পাঁচ ব্যাটারের রানই দুই অঙ্ক ছুঁয়েছে এদিন।
পরে বোলিংয়ে নেমে প্রোটিয়া ব্যাটারদের নিয়ে ছেলেখেলায় মাতলেন নাহিদা-ফাহিমারা। বাংলাদেশের বোলিং তোপে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং অর্ডার। শেষ পর্যন্ত স্বাগতিকরা অলআউট হয়ে গেছে মাত্র ১৩১ রানে। ১১৯ রানের বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
দারুণ এই জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে শুভসূচনা করল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটিই বাংলাদেশের মেয়েদের প্রথম ওয়ানডে জয়। এ ছাড়া দুই দলের ওডিআই মুখোমুখিতে বাংলাদেশ সর্বশেষ জয় পেয়েছিল ২০১৭ সালে কক্সবাজারে।
কদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে ইতিহাস গড়েছিল নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে স্বাগতিকদের হারায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ১-১ সমতায় সিরিজ শেষ করে। এবার ওয়ানডেতেও শুরুটা হলো দাপুটে জয়ে।
এদিন টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের শুরু থেকেই দারুণ খেলেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। দুই ওপেনার শামিমা সুলতানা আর ফারজানা হক মিলে উদ্বোধনী জুটিতে যোগ করেন ৬৬ রান। মার্ক্সের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে শামিমা ৪৮ বলে করেন ৩৪ রান। শামিমার আউটের পর রান তোলার গতি খানিকটা কমে আসে বাংলাদেশের। শুরুর দিকে মুরশিদা যেমন খেলেছেন খানিকটা ধীরগতিতে, তেমনি ফারজানাও খেলেছেন বেশকিছু ডট বল।
ফারজানা ৩৫ করে আউট হলে ক্রিজে আসেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। এসেই রানের গতি বাড়ানোর দিকে নজর দেন টাইগ্রেস অধিনায়ক। তাতে সফলও হয়েছেন তিনি। মুর্শিদার সঙ্গে ৮০ রানের জুটিতে জ্যোতি খেলেছেন ৪৮ বলে ৩৮ রানের ইনিংস।
শেষদিকে স্বর্ণা এসে রানের গতি বাড়িয়েছেন আরও অনেকটা। ২৮ বলে ২৭ রান করে দলীয় স্কোর ২৫০ পর্যন্ত টেনে নিয়েছেন তিনি। তবে বাংলাদেশ ইনিংসের হাইলাইট হয়ে থাকবে মুর্শিদার ইনিংস। দলের রান বাড়ানোর জন্য বারবার স্ট্রাইক ছেড়ে দিয়েছেন স্বর্ণার কাছে। ব্যক্তিগত ইনিংসের চেয়ে দলের রান সংখ্যাই বাড়াতে মনোযোগী ছিলেন ওয়ানডাউনে নামা এই ক্রিকেটার। শেষ পর্যন্ত মুর্শিদা অপরাজিত থেকেছেন ৯১ রানে।
সেঞ্চুরি হাতছাড়া হলোও ব্যক্তিগত রেকর্ড ঠিকই গড়েছেন মুর্শিদা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ মুর্শিদার। প্রথম ইনিংসে তিনি থেমেছেন ৯১ রানে। এর আগে সর্বোচ্চ ৭৪ ছিল শারমিন আক্তারের।
বাফেলো পার্কে ওয়ানডেতে গড় পুঁজি আড়াইশোরও নিচে। এমন পরিসংখ্যান কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছিল বাংলাদেশের ২৫০ রানের পুঁজিকে। টাইগ্রেসদের স্বস্তি আরও বাড়ান সুলতানা খাতুন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসেই ফেরান প্রোটিয়া অধিনায়ক লরা উলভার্টকে। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৬ বলে ৫ রান।
লরার বিদায়ের পর আর কোনো রান যোগ করার আগেই আরও একটি উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ওপেনার তাজমিন ব্রিটসকে ফেরান মারুফা আক্তার। এরপর অ্যানিকে বখ ও সুনে লুস মিলে কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা চালান। তাদের জুটিতে আসে ৪১ রান। কিন্তু তারপরেই আবার নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে তাকে স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত ১৩১ রানে গিয়ে সবকটি উইকেটের বিদায় ঘটে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন এলিজ-মারি মার্কস। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন নাহিদা আক্তার। এ ছাড়া ফাহিমা, রাবেয়া ও সুলতানা খাতুন দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।