ফুটবলে জমজ বোনের অভিন্ন যাত্রা
আমরা অনেকেই ভাবি যে যমজ হলে কেমন হবে। এখন কল্পনা করুন- দুজনেই একই পেশায় গেলে, একই কাজে নিয়োজিত হলে এবং ক্যারিয়ারজুড়ে পাশাপাশি কাজ করলে কতটা বিভ্রান্ত হতে পারে অফিসের বস কিংবা সহকর্মীরা। যদি আপনি আপনার কল্পনা বাস্তবে উপলব্ধি করতে চান তাহলে আসুন চোখ রাখা যাক, ফুটবলে যমজ বোন কারেন ও সারা হলমগার্ডের অভিন্ন যাত্রায়।
ডেনমার্ক এবং এভারটনের হয়ে খেলেন কারেন ও সারা। প্রতিনিয়ত এই যমজে বিভ্রান্ত হয় তার সহকর্মী ও কোচরা। মাঠে ২৩ বছর বয়সীদের পৃথক করা সহজ। কারেন খেলেন ডান পায়ে, সারার শক্তি বাঁ পা। কারেন থাকেন মিডফিল্ডে, সারা ডিফেন্সে। কারেন বল দখলভিত্তিক খেলা পছন্দ করেন। সারা রক্ষণে শক্তিশালী। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল ছিনিয়ে নেওয়ার নেশা তার।
মাঠের বাইরে এই জুটিকে পৃথক করা বেশ দুরূহ। এমনকি এভারটনের ড্যানিশ কোচ ব্রায়ান সোরেনসেন, যিনি জন্মভূমিতে তাদের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাকেও সংগ্রাম করতে হয় দুজন পৃথক করতে। কারেনই বলেছেন এমন কথা। তার ভাষ্য, ‘ব্রায়ানের সঙ্গে আমরা দুই বা তিন বছর কাজ করেছি এবং কিছু সময়, এমনকি এখনো তিনি বিভ্রান্ত হন।’
নিজেদের আলাদা করতে একটি পদ্ধতি মেনে চলেন দুই বোন। সেটা হলো, কারেন চুল বাঁধেন কিছুটা উঁচু করে এবং সারা নিচু করে। অনুশীলনে এটা মেনে চলেন দুজনে যাতে সতীর্থরা তাদের চিনতে পারেন। সারা বলেছেন, ‘যদি একদিন সকালে আমি অনুশীলনে যাই এবং আমার চুল নিচের দিকে না রাখি তাহলে তারা (সতীর্থরা) পার্থক্য দেখতে পাবে না।’
মজার একটি উদাহরণও দিয়েছেন সারা। এই ডিফেন্ডার বলেছেন, ‘একটি ম্যাচে কারেন গোল করেছিল। তারপরে চুল উঁচু করে, ব্রায়ান যে ঘরে ছিল সেখানে গিয়েছিলাম এবং তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘ওহ কি গোল’। আমি বললাম, ‘ব্রায়ান আমি সারা।’ এমন অনেক অভিজ্ঞতায় অভ্যস্ত এখন তারা। কখনো তাদের চিনতে ভুল করায়, কখনো বা নিজেরাই মজা করেন তারা।
শুধুই কি চেহারায় না ব্যক্তিত্বেও একই রকম কারেন-সারা? সারা জানিয়েছেন, দুই বোনের মধ্যে শান্ত তিনি। এ ছাড়া তেমন কোনো পার্থক্য জাহির করতে পারেননি এই ডিফেন্ডার। সারার অনুধাবন প্রকাশ পায় এভাবেই, ‘আমি যা মনে করি আমরা মূলত একই রকম। হ্যাঁ, আমি একটু বেশি শান্ত, কিন্তু আমার মনে হয় আমরা প্রায় একই রকম।’
গত আগস্টে এভারটনে যোগ দেয় যমজ বোন। পাঁচ দিন পর, সারা ডেনমার্কে থাকতে লোনে ৬ মাসের জন্য ফরচুনা হোরিংয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তাতে প্রথমবারের মতো এই জুটি একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল, যারা হোরিং ছাড়াও টারবাইন পোস্টড্যামে একসঙ্গে ফুটবল উপভোগ করেছেন।
সারা বলেছেন, ‘একসঙ্গে থাকতে ভালো লাগে কিন্তু লোকেদের দেখাতেও ভালো লাগে যে আমরা বিকাশ করতে পারি। এটা আমাদের জন্যও ভালো। আমি আশা করেছিলাম যে এটা কঠিন হবে। আমরা দিনে চার বা পাঁচবার মুখোমুখি হই। কখনো পাঁচ মিনিটের জন্য, কখনো আধা ঘণ্টার জন্য- স্বাভাবিক বোনেরা হয়তো একদিন দূরে থাকতে পারে কিন্তু আমরা একে অপরের কাছাকাছি থাকি।’
কারেন যোগ করেন, ‘শুধুমাত্র যদি ‘হ্যালো’ বলারও প্রয়োজন পড়ে, তবে আমরা দেখা করি।’ কাছাকাছি থাকার এই বৈশিষ্ট্য তাদের ‘শুধু বোন’ থেকে আলাদা করে তোলে, এটাই যজম বোনের ব্যাখ্যা। সারার ভাষ্য, ‘যখন আপনি যমজ হন তখন আপনার একে অপরের সঙ্গে কী ঘটছে তা জানতে হবে।’
ছোট থেকেই একসঙ্গে খেলে বেড়ে উঠা এই জুটির। শৈশবের কারেন তুলে ধরেন এভাবে, ‘স্কুলের পর কলেজে গিয়ে আমরা ফুটবল বা হ্যান্ডবল নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। শেষ পর্যন্ত ফুটবলকে বেছে নেই।’ দীর্ঘ সময়ের পথচলায় দুজনের মধ্যে বোঝাপড়াটা এতটাই ভালো যে মাঠে তারা একে অন্যের মনের কথা বুঝতে পারে। এমন সম্পর্ককে ‘টেলিপ্যাথিক’ হিসেবেই অ্যাখ্যা দিলেন কারেন।
কারেন বলেছেন, ‘আমরা আমাদের সারা জীবন একসঙ্গে ফুটবল খেলেছি, আমি অনুভব করি যে মাঠে আমার একে অপরের অবস্থান বুঝতে পারি। তাই আমি সব সময় সারার সঙ্গে খেলতে পারি।’ সেই অন্তর্দৃষ্টি আরও পরিপক্ক করছে তাদের- দাবি কারেনের, ‘আমরা সব সময় সেরা হতে চাই। যেমন আমরা উভয় একে অন্যের চেয়ে দ্রুত দৌড়াতে চাই। আমি মনে করি এটি আমাদের সাহায্য করে।’ কারেনের কথা ধরে সারা বলেছেন, ‘আমরা একে অপরের সঙ্গে না থাকলে আমাদের এই ক্যারিয়ার হতো না।’
তাহলে কি কখনো প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা যাবে না যমজ বোনদের? এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না সারা, ‘জার্মানিতে থাকার পর আমরা ভেবেছিলাম এটা হতে পারে। ইংল্যান্ড আসা এবং একই এলাকা বা শহরে থাকা কিন্তু দুটি ভিন্ন ক্লাবে।’ কারেন বলেছেন, ‘আমি মনে করি এটি বিশেষ কিছু হবে, চেষ্টা করা ভালো হবে। আমরা এটি থেকে অনেক কিছু শিখব।’
শেখার তাড়না যমজ বোনকে কোথায় নিয়ে যায় সেটা এখন দেখার অপেক্ষা। তবে আপাতত দুই বোনের ঠিকানা এখন এভারটনে। যাদের জার্সি গায়ে গত জানুয়ারিতে এফএ কাপের মঞ্চে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে খেলতে নামেন সারা ও কারেন।
এসজি